পটুয়াখালীতে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সনদে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী সদর উপজেলার তিতকাটা পুলের হাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ২০২১ সালে ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিস, দুর্নীতি দমন কমিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেন অভিযোগকারী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৭ সালে তিতকাটা পুলের হাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সামাজিক বিজ্ঞান) হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় মো. ফারুক হোসেনকে। তার ইনডেক্স নাম্বার (৫১৭০৪৩)। পরে ২০১৪ সালে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে গোপন কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি জাল সনদে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হন ফারুক হোসেন।
ওই সময় যেসব সনদ তিনি দিয়েছেন, সেগুলোতে দেখা যায়, এসএসসিতে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ, এইচএসসিতে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ, বি.এ পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ এবং বি.এডে দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
এসব সনদ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্রের সঙ্গে কথা হয়। ওই সূত্র জানায়, মো. ফারুক হোসেন বিএ পাস করেছেন তৃতীয় বিভাগে। আর বি.এড পাস করেননি। তার বি.এ রোল নম্বর-৪৪৪১২, রেজিস্ট্রেশন নম্বর- ১১০৩৩৪, শিক্ষাবর্ষ ১৯৯৩-১৯৯৪, পাসের সন ১৯৯৫।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৃতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। বি.এড পরীক্ষায় তার রোল নম্বর ১৩৯৮৮, রেজিস্ট্রেশন নম্বর-১২৩৪৮৯, শিক্ষাবর্ষ ২০০৩-২০০৪, তবে পরীক্ষা দিয়ে তিনি পাস করতে পারেননি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট শিটে তার বিএডের রেজাল্টে তিন সাবজেক্টে ফেল দেখানো হয়েছে।
এদিকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ৪ নম্বর নীতিমালায় বলা হয়েছে, স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষকতায় স্নাতকসহ বিএড পাস হতে হবে। সমগ্র শিক্ষাজীবনে একটির বেশি তৃতীয় বিভাগ (তৃতীয় বিভাগ/শ্রেণি/সমমানের জিপিএ) গ্রহণযোগ্য হবে না।
অভিযোগকারী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন জাল সনদ দিয়ে ৯ বছর পর্যন্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করছেন। প্রধান শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালায় একটা সনদে তৃতীয় বিভাগ থাকতে পারবে, তবে ফারুক হোসেনের (এইচএসসি ও বি.এ) দুইটি সনদে তৃতীয় বিভাগ রয়েছে এবং বি.এড পাসের জাল সনদ দিয়ে ২০১৪ সালে প্রধান শিক্ষক হয়েছেন।
‘এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্যসহ অনেক দুর্নীতি ও কুকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব ঘটনা উল্লেখ করে আমরা ২০২১ জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিস, দুর্নীতি দমন কমিশন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছি। অদৃশ্য কারণে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’
জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. ফারুক হোসেন বলেন, ‘স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ হলে এভাবে অভিযোগ উঠবেই। আমার সার্টিফিকেট ঠিক আছে। আর যদি জাল হয়েই থাকে, তবে সেটি বোর্ডের বিষয়। তখন বোর্ড বুঝবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাই চাকরি করতে গিয়ে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব সমস্যা ফেস করব নাকি চাকরি করব, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।’
‘ইনডেক্সধারী কীভাবে একাধিক তৃতীয় বিভাগ পেয়ে চাকরি করতে পারেন আর আপনি এ তথ্য কোথায় পেয়েছেন’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই আমি শহরে আসতেছি। আপনার সঙ্গে সরাসরি কথা বলব। মোবাইলে এগুলো বলা যাবে না।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘অভিযোগ না দেখে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারব না।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মরিয়ম বেগম বলেন, ‘জাল সনদে চাকরি করে থাকলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিছু অভিযোগের তদন্ত চলছে, তবে (তিতকাটা পুলের হাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের) এ বিষয়টির আপডেট এই মুহূর্তে জানা নেই।’
অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক উইং) মো. বেলাল হোসাইন বলেন, ‘হয়তো এ অভিযোগের তদন্ত চলছে। বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।’