অগ্নিদুর্ঘটনার ভয়াবহতা রুখবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)। নব উদ্ভাবিত এই প্রযুক্তি নিয়ে ইতোমধ্যে দেশে কাজ শুরু হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজধানীর কল্যাণপুর বস্তিতে প্রযুক্তিটির ব্যবহার নিয়ে চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
এআই প্রযুক্তি নিয়ে এই শিক্ষাবিদ বলেন, ‘কোথাও আগুন লাগলে ধোঁয়া ও তাপের মাধ্যমে এর অবস্থান ও ধরন শনাক্ত করবে একটি বিশেষ ধরনের ডিটেক্টর। এরপর সেটি সিস্টেমে সংকেত পাঠাবে। আর সেখান থেকে অগ্নি নির্বাপনকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন জায়গায় আগুন লাগার খবর পৌঁছে যাবে। এতে আগুন ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়া এড়ানো সম্ভব হবে। প্রাণহানিসহ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে মালামাল।
অধ্যাপক ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘একটা ম্যাপের মধ্যে সব মার্ক করা থাকবে, কোথায় হোটেল, আবাসিক ভবন, মার্কেট আছে। কোথায় কেমন রাস্তা, আগুন লাগলে কোন দিক দিয়ে দ্রুত মুভ করা যায়- সেগুলো ম্যাপ সংকেত দেবে। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
তবে এ ধরণের প্রযুক্তির বাস্তবায়ন করতে বড় সার্ভারের প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। কারণ বিদ্যুৎ না থাকলে ফায়ার ডিক্টেটর, সিগন্যালিং প্রসেস, সিসিটিভি, ইন্টারনেট- কোনোকিছুই কাজ করবে না।
‘কল্যাণপুর বস্তিতে এটার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রাথমিকভাবে সেখানে চার ঘণ্টার ব্যাকআপ বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
তবে সারা দেশে বিশেষ করে ঢাকাসহ দেশের শহরগুলো অগ্নি নির্বাপনের এ প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করতে দেশের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে দুর্যোগে সহনশীলতা বাড়াতে এবং কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে অগ্নিকাণ্ডের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস নিয়ে বেসরকারি খাতের সঙ্গে ‘টেকনোলজি ইন ডিআরএম টুওয়ার্ডস স্মার্ট বাংলাদেশ: অপর্চুনিটিজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব এআইবিএস সল্যুশন ইন হ্যাজার্ড অ্যানটিসিপেশন’ শীর্ষক একটি ওয়ার্কশপে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন ড. খলিলুর রহমান।
এসময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বর্ণনা করতে কর্মশালায় উপস্থিত সুধীজন ও সংবাদকর্মীদের সামনে একটি এআই-ভিত্তিক মডেল প্রদর্শন করা হয়। এআই ব্যাবহার করে কীভাবে অগ্নি নির্বাপন করা যায়, সে বিষয়টি মডেলে দেখানো হয়।
বঙ্গবাজার মার্কেট ও কৃষি মার্কেটে এই প্রযুক্তি থাকলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার শুরুতেই আগুন লাগার খবর পাওয়া যেত। ফলে দ্রুত আগুন নেভানোর পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতিও কমিয়ে আনা যেত বলে মন্তব্য করেন ওয়ার্কশপে উপস্থিত বক্তারা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, ‘এআই সিস্টেমে ডিটেক্টর সিস্টেম অবশ্যই উপকারী ও প্রযুক্তিবান্ধব। ঢাকার প্রত্যেক ভবনে পানির ট্যাংক আছে। সেটার সঙ্গে যদি ফায়ার হাইড্রেন্ট সংযুক্ত করে সড়কে স্থাপন করা যায়, তাহলে অনেক বেশি কার্যকর হবে।’
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে আগুন শনাক্ত করতে ব্যবহৃত উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির প্রশংসা করেন তিনি বলেন, ‘এজন্য সিটি করপোরেশনকে এগিয়ে আসতে হবে। কিন্তু বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে আমাদের সমন্বয় নেই। তবে ভালো আইডিয়াকে আমরা স্বাগতম জানাই।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইলেকট্রনিক্স সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএসএসএবি) যুগ্ম মহাসচিব জাকির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এআই ডিটেক্ট সিস্টেম তাইওয়ানে চালু হয়েছে। কৃষি মার্কেটে আগুন লাগলেও তা আগে থেকে ডিটেক্ট করা সম্ভব হয়নি। কারণ সেখানে ডিটেক্টর ছিল না। এর কদিন পরই সেনা কল্যাণ ভবনে আগুন লাগল। কিন্তু সেখানে আগুন খুব দ্রুত শনাক্ত ও নির্বাপণ করা সম্ভব হয়েছে। কারণ সেখানে প্রাথমিক পর্যায়েই ডিটেক্ট করা সম্ভব হয়েছিল ডিটেক্টর ব্যবস্থার কারণে।’
এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের সুপার প্রকল্পের কনসোর্টিয়াম ম্যানেজার আ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘ঢাকা শহরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শহরে কম সড়ক নেই। ঢাকার জলাশয় কমছে, মাঠ কমছে। চারটা জলাশয় ভরাট করে ভবন করা হয়েছে। পানির সোর্স কমছে।’
তিনি বলেন, ‘এআই প্রযুক্তির বড় সুবিধা হচ্ছে দ্রুত আগুন বা ধোঁয়া শনাক্ত করে জানান দেয়া। কিন্তু বঙ্গবাজারের আগুন ২-৩ ঘণ্টা ধরে মিটমিট করে জ্বলেছে। একইভাবে কৃষি মার্কেটেও আগুন লাগার অনেক পর খবর পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আগুনের শুরুতেই যদি শনাক্ত করা যেত তাহলে এত বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে হতো না। এক্ষেত্রে এআই হবে খুবই কার্যকর।’
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মফিজুর রহমান।
স্ট্রেন্দেনিং আরবান পাবলিক প্রাইভেট প্রোগ্রামিং ফর আর্থকোয়েক রেজিলিয়েন্স (সুপার) প্রকল্পটি একটি কনসোর্টিয়াম প্রকল্প। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন সিভিল প্রোটেকশন অ্যান্ড হিউম্যানিটারিয়ান এইডের আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে একশনএইড বাংলাদেশ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই), ইউনাইটেড পারপাস এবং ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ।