ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলের ‘যমুনা ভবন থেকে পড়ে’ কাজী ফিরোজ নামের এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি লাফ দিয়েছেন নাকি দুর্ঘটনাক্রমে পড়ে গেছেন, সেটি এখনও জানা যায়নি।
মঙ্গলবার রাত পৌনে একটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এরপর রাত দুইটা ৪৯ মিনিটে ফিরোজের আবাসস্থল মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, তার টেবিলের ওপর মুরগির মাংসসহ ভাত রাখা।
রুমমেটরা জানান, এই ভাত বন্ধুরা তার জন্য এনে রেখেছিলেন, তবে পুরোটা না খেয়েই রুম থেকে বের হয়ে যান ফিরোজ। এর কিছুক্ষণ পরই বন্ধুরা খবর পান, ফিরোজ বিজয় একাত্তর হল থেকে পড়ে গেছেন।
ফিরোজের টেবিলে উঁকি দিতে গিয়ে দেখা যায়, একটি খাতা অর্ধখোলা অবস্থায় রাখা। তার ওপর দুইটা সিগারেটের প্যাকেট। সেই প্যাকেট দুইটি সরিয়ে দেখা যায় সেখানে পৃষ্ঠাভর্তি লেখা।
পৃষ্ঠার ওপরের তারিখের জায়গায় লেখা ছিল ১/০৯/২৩। আর এর নিচে লেখা আছে, ‘মানুষ বাঁচে তার সম্মানে। আজ মানুষের সামনে আমার যেহেতু সম্মান নাই, এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আমার কোনো অধিকার নাই। আমার মৃত্যুর দায়ভার একান্ত আমার। সরি মা! বাড়ি থেকে তোমাকে দিয়ে আসা কথা রাখতে পারলাম না। আমার জীবন নিয়ে হতাশ।’
এ লেখার নিচে মাঝ বরাবর লেখা, ‘ফিরোজ।’ এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত: ১১টা ৩।’
পৃষ্ঠার বাকি অর্ধেকে আরও লেখা আছে, ‘আমার ওয়ালেটের কার্ডে কিছু টাকা আছে। বন্ধুদের কাছে অনুরোধ রইল মায়ের হাতে দিতে। কার্ডের পাসওয়ার্ড ৮০৭৯, আর ফোনের লক খুলে দিয়ে গেলাম।
‘আমার লাশের পোস্টমর্টেম না করে যেন বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কোনোরূপ আইনি ঝামেলায় কাউকে যেন জড়ানো না হয়। সবাই বাঁচুক। শুধু শুধু পৃথিবীর অক্সিজেন আর নষ্ট করতে চাই না।’
এই লেখার নিচে আবারও লেখা, ‘ফিরোজ।’ এর নিচে লেখা হয়েছে, ‘রাত ১১টা ৫।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ২০৩ নম্বর কক্ষে থাকতেন কাজী ফিরোজ। ছবি: নিউজবাংলা
কাজী ফিরোজের বন্ধুরা জানিয়েছেন, এ লেখাটা ফিরোজের হাতের লেখার মতোই তাদের মনে হচ্ছে, তবে ফিরোজের মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতালে আসা তার বড় ভাই জানিয়েছেন, তার এবং ফিরোজের লেখা প্রায় একই। খাতায় থাকা এই লেখাটা ফিরোজের হাতের লেখা নয়। এরপর তারা ফিরোজের মরদেহের সুরতহাল করার সিদ্ধান্ত নেন।
ফিরোজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়।