বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যে মৃত্যুর দায় নেন না কেউ

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, ট্রেনতো চাইলেই দ্রুত থামানোর সুযোগ নেই। এ কারণে মানুষের সচেতনভাবে রেললাইন পার হওয়া দরকার।’

রাজশাহী অঞ্চলে রেললাইনে ট্রেনে কাটা পড়ে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তবে এর দায় নিচ্ছে না কেউ।

ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়ার জন্য কাউকে যেহেতু দায়ী করার সুযোগ থাকে না, এ কারণে এসব ঘটনার পর একটি সাধারণ ডায়েরি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে ধরে নেয়া হয়, মৃত ব্যক্তি নিজের ভুলে বা দোষেই মারা গেছেন- এমনটাই জানান পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে রেলওয়ে ক্রসিংয়ের বাইরে। অর্থাৎ, সাধারণ রেললাইনের ওপর দিয়ে পারাপারের সময় এসব মৃত্যুর ঘটনা বেশি।

রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, আনমনে রেললাইন পার হওয়ার কারণেই ঘটছে মৃত্যু। অনেকে আবার আত্মহত্যা করছেন চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে আট মাসে এ অঞ্চলে ট্রেনের ধাক্কা বা ট্রেনে কাটা পড়ে ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া, সান্তাহার ও জয়পুরহাট মিলে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

রাজশাহীতে চলতি বছর যত মৃত্যু

রাজশাহীর কাদিরগঞ্জ এলাকায় গত ১০ আগস্ট ট্রেনের ধাক্কায় ১৩ বছর বয়সী মনিকা তাবাসুম চৈতির মৃত্যু হয়। চৈতি নগরীর পিএন সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির দিবা শাখার ছাত্রী ছিলেন। অসাবধানতাবশত রেললাইনে উঠে গেলে ট্রেনের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয় বলে জানান প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা।

এ ঘটনার দুদিন পরে ১৩ আগস্ট রাজশাহী নগরীর ডিঙ্গাডোবা এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে দ্বীপ বাবু নামে একজনের মৃত্যু হয়।

নাটোরের লালপুরে ১৫ আগস্ট মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরের মৃত্যু হয়। ৮ আগস্ট জয়পুরহাট রেলস্টেশন এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকার ও ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।

নাটোরের পঞ্চগড়ে গত ৫ জুলাই এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে কাটা পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর মৃত্যু হয়।

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় ৬ জুলাই ট্রেনে কাটা পড়েন কাশিনাথপুরের কাবারীকোলা গ্রামের জামিরুল ও একই এলাকার বাবু মুন্সি। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই। ২৩ জুলাই নাটোরে ট্রেনে কাটা পড়ে সম্পা খাতুনের মৃত্যু হয়। ২৩ জুলাই আক্কেলপুরের জামালগঞ্জ রেলস্টেশনে পঞ্চগড় অভিমুখী পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ৭০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

নাটোরের বাগাতিপাড়ায় গত ১১ জুন ট্রেনের ধাক্কায় স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন উপজেলার জামানগর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মফিজুর রহমান ও তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। ২১ জুন জয়পুরহাট শহরের ডাকবাংলা এলাকায় ট্রেনের ধাক্কায় অজ্ঞাত এক যুবকের মৃত্যু হয়। ১৯ জুন নওগাঁর আত্রাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় শাহিনুর ইসলামের মৃত্যু হয়। ২৪ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ট্রেনের ধাক্কায় আমেনা বেগমের মৃত্যু হয়।

জয়পুরহাটে ১ মে ট্রেনের ধাক্কায় আবুল কাশেমের মৃত্যু হয়। ওইদিন পাঁচবিবি রেওয়ে স্টেশন এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। ১৯ মে নাচোলে ট্রেনের ধাক্কায় রুহুল আমিনের মৃত্যু হয়।

পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলায় গত ১৩ মার্চ দৌড়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় আন্তঃনগর মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে শাহজাহান আলী বাবু নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

ঈশ্বরদী উপজেলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ট্রেনের ধাক্কায় মিজান খাঁ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।

এসব ঘটনার তদন্তের প্রতিবেদন সূত্রে জানায় যায়, ট্রেনে কাটা পড়ে বা ধাক্কায় মৃত্যুর যে ঘটনাগুলো ঘটে তা রেললাইনে অসাবধানতাবশত চলাচলের সময় হয়েছে। কেউ বা ট্রেন আসার সময় দ্রুত রেল লাইন পারাপারের সময় দুর্ঘটনার শিকার হন। কেউ কেউ অভিমানে বা বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেছেন।

ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানা এসআই (নিরস্ত্র) হারুনুজ্জামান রোমেল বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর তারিখ পর্যন্ত পাবনা, নাটোর ও রাজশাহীতে ট্রেনে কাটাপড়ে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।’

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘রেললাইনের ওপরে চলাচল আইনত নিষিদ্ধ, কিন্তু মানুষ সেটা মানে না। যেসব মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে তার কারণ হিসেবে কয়কটি বিষয় উঠে আসছে। এর একটি হলো আত্মহত্যা। অনেকেই দেখা যায় একেবারে ট্রেন কাছাকাছি চলে আসার আগ মুহূর্তে নিচে ঝাঁপ দেয়।

‘আবার অনেকগুলা ঘটনায় আমরা দেখেছি তাদের কানে হেডফোন ছিল। এ ক্ষেত্রে আমাদের ধারণা হেডফোনের কারণে হয়তো ট্রেন আসার শব্দ শুনতে পায়নি। আবার কেউ কেউ তড়িঘড়ি করতে গিয়েও দুর্ঘটনার শিকার হন।’

তিনি বলেন, ‘একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, ট্রেনতো চাইলেই দ্রুত থামানোর সুযোগ নেই। এ কারণে মানুষের সচেতনভাবে রেললাইন পার হওয়া দরকার।’

এ বিভাগের আরো খবর