বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৩৮ কোটিতে কুমিরের খামার বেচে পি কে হালদারের ঋণ শোধের চেষ্টা

  •    
  • ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১১:৩২

ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রেপটাইলস ফার্মের নিলাম করা হয়েছিল। খামারটি অধিগ্রহণের জন্য নিলামের সময় উদ্দীপন সর্বোচ্চ দরের প্রস্তাব দেয়। বকেয়া ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি হলেও খামারটি প্রায় ৩৮ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বেশ আশানুরূপ একটি দাম।’

ময়মনসিংহের ভালুকায় আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারির হোতা প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারের মালিকানায় থাকা কুমির খামারটি ৩৮ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। সম্প্রতি এই খামার নিলামে কিনেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘উদ্দীপন’।

২০০৪ সালে উপজেলার উথুয়া ইউনিয়নের হাতিবেড় গ্রামে প্রায় ১৫ একর জমিতে মাত্র ৭৪টি কুমির নিয়ে ‘রেপটাইলস ফার্ম লিমিটেড’ নামে দেশের প্রথম এই কুমির খামারটি চালু করেন উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদ।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৩ সালে মুশতাক আহমেদের কাছ থেকে খামারটি কিনে নেন পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা। খামার সম্প্রসারণ করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেড থেকে ৫৭ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেন পি কে হালদার। জামানত হিসাবে ফার্মের জমি ব্যবহার করা হয়।

২০১৫ ও ২০১৬ সালে ফার্মের নামে ঋণ বাড়ানো হয়। ৪ কোটি ২৮ লাখ মূল্যের বন্ধকি জমির বিপরীতে এখন বকেয়া খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০৮ কোটি টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকে ফার্মের ব্যবস্থাপনায় থাকা ব্যক্তিদের অনুপস্থিতির কারণে বকেয়া ঋণ পুনরুদ্ধার করতে পারছিল না ইন্টারন্যাশনাল লিজিং। এ ছাড়া অব্যবস্থাপনা, খাদ্য ঘাটতি এবং ফার্মের আর্থিক সংকটের কারণে সময়ের ব্যবধানে খামারে কমতে থাকে কুমিরের সংখ্যা।

পরে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত বছরের মার্চে ছয় সদস্যের একটি পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে। এতে পরিচালকের দায়িত্ব পান ড. নাঈম আহম্মেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কুমির বিশেষজ্ঞ এনাম হক। এ ছাড়া পরিচালক পদে দায়িত্বরতরা হলেন রেজাউল সিকদার, ড. মো. রফিকুল আলম, ফখরুদ্দিন আহম্মেদ এবং শেখ মো. আব্দুর রশিদ।

খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক জানান, মাত্র ৭৪টি কুমির নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল খামারটি। এই খামার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ছিল কুমিরের চামড়া রপ্তানি করা। ২০২০ সালে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় খামারের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। হুমকিতে পড়ে খামারে কুমিরের পরিচর্যা।

তিনি জানান, ঋণ খেলাপ এবং পি কে হালদার ইস্যুতে দুই বছর যাবত মুখ থুবড়ে পড়ে এ কুমির খামার। এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি মাশুল গুনে খামারের কুমিরগুলো। স্বাভাবিক খাবার না পেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরার উপক্রম হয়। এ তাবস্থায় আশপাশের বিভিন্ন খামার থেকে মরা মুরগি সংগ্রহ করে কুমিরগুলোকে দেয়া হয়।

ব্যয় মেটাতে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় খামারটি ৷ প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য টিকিটের মূল্য ১৫০ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।

খামারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এনাম হক বলেন, ‘২০১০ সালে জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ৬৭টি হিমায়িত কুমির রপ্তানির মধ্য দিয়ে এর বাণিজ্যিক রপ্তানি শুরু। ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৫০৭টি কুমিরের চামড়া জাপানে রপ্তানি করা হয়েছে। প্রতিটি কুমিরের চামড়ার আন্তর্জাতিক বিক্রয় মূল্য ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার।’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাগ, বেল্ট, জুতা তৈরিতে কুমিরের চামড়া ব্যবহার করা হয়। আর দাঁত দিয়ে তৈরি হয় গয়না, হাড় থেকে সুগন্ধি। কুমিরের পেটের দিকের চামড়া প্রতি সেন্টিমিটার বিক্রি হয় ১৫ ডলারে। কেজি প্রতি মাংস ৪০ থেকে ৫০ ডলারে বিদেশে রপ্তানি ও বিক্রি হয়।

‘কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও চীনে কুমিরের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বন বিভাগের অনুমোদন পেলে খুব শিগগিরই কুমিরের চামড়ার পাশাপাশি মাংস, হাড়, দাঁত বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হবে। বর্তমানে খামারটিতে দুই হাজার পাঁচ শতাধিক কুমির রয়েছে।’

খামারটি বিক্রি হওয়া প্রসঙ্গে এনাম হক বলেন, ‘ঋণ পরিশোধ না করায় খামারটি বিক্রি করেছে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড। সর্বোচ্চ দাম ওঠে ৩৮ কোটি টাকা। খামারটি কিনতে আগ্রহী উদ্দীপন নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। উদ্দীপন বর্তমানে নিলামের অর্থ পরিশোধের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। খামার বিক্রির টাকায় পরিশোধ করা হবে পি কে হালদারের ঋণ।’

এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের ঋণ পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে রেপটাইলস ফার্মের নিলাম করা হয়েছিল। খামারটি অধিগ্রহণের জন্য নিলামের সময় উদ্দীপন সর্বোচ্চ দরের প্রস্তাব দেয়। বকেয়া ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি হলেও খামারটি প্রায় ৩৮ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা বেশ আশানুরূপ একটি দাম।’

এ বিভাগের আরো খবর