ঘুষ চেয়ে ফেঁসে গেছেন রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলম। জেলা পুলিশ সুপারের নাম করে এক আসামির স্ত্রীর কাছে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। সেই ঘুষ দাবির অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন ভাইরাল।
অডিওর বক্তব্য অনুযায়ী, মাদক মামলার এক আসামির স্ত্রীর কাছে ৭ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন ওসি মাহবুবুল আলম। শুধু তাই নয়, তিনি ওই নারীকে মাদকের কারবার করার পরামর্শ দেন এবং নির্বিঘ্নে কারবার চালানোর জন্য জেলা ডিবির এক ওসিকে বদলি করতে দুই লাখ টাকা দাবি করেন।
অডিওতে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘এক মন্ত্রী ছাড়া কারও কথা শুনতে আমি এখানে আসিনি। তিনি আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন।’
ওসির বিরুদ্ধে রাজশাহী পুলিশ সুপার বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই নারী। অডিও ভাইরাল এবং ওই নারীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী ওই গৃহবধুর নাম সাহারা বেগম। তিনি চারঘাট থানার চামটা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। কালু মাদক মামলায় কারাগারে আছেন। অভিযোগে ওই নারী উল্লেখ করেন, ১৩ সেপ্টেম্বর তাকে ও তার ছেলে রাব্বিকে নিজের কক্ষে ডেকে নেন চারঘাট থানার ওসি। সেখানে ওসি তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নিয়ে নেন এবং তাদের কাছে অর্থ দাবি করেন।
ফাঁস হওয়া ওই অডিও রেকর্ডে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, চারঘাট এলাকায় গিয়ে মাদক কারবারিদের ধরে মামলা দেয়ার কারণে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসির সমালোচনা করেন তিনি। এরপর বলেন, ‘দুই লাখ টাকা দেন, কালকেই ডিবির ওসিকে বদলি করে দেব।’
সাহারা বেগমকে উদ্দেশ করে ওসি মাহবুবুল বলেন, ‘আপনার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করে গেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ করেছিলেন কালু)। এবার আপনার পরিবারের কাউকে ধরলে ১০ লাখ টাকার কমে ছাড়াতে পারব না।’
এরপর ওসি বলেন, ‘এখনও তোমার গায়ে আঁচড় দেইনি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। কালকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেরকম সময় নয় যে কেউ পয়সা খায় না। সবাই পয়সা খাচ্ছে। এমন কেউ বাদ নেই যে পয়সা খাচ্ছে না। পুরো জেলা পয়সা খাচ্ছে। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারকে বলেছি, এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই। মুক্তার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারবে না, শুভর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারবে না। তোমরা ৫ লাখ টাকা দিতে পারবা? ধরে ওদের চালান দিয়ে দেব। থাকি না থাকি ওদের সাইজ করব। তোমরা বাইরে থেকে ব্যবসা (মাদকের কারবার) করবে।’
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আতিকুর রেজা সরকার আতিকেরও সমালোচনা করেন ওসি মাহবুব। তিনি বলেন, ‘যদি আতিকের বদলি চাও দুই লাখ টাকা দাও। কালকেই আতিকের বদলি হয়ে যাবে।’
ওসিকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘৫ লাখ আর ২ লাখ, ৭ লাখ টাকা দিয়ে ব্যবসা শুরু করো। আতিক বাদ, ওই দুইজনকে (মুক্তা ও শুভ) ট্যাকেল দেওয়ার দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুইজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দেব। আমার সব উপরের লাইন। যে টাকা দিবা এই টাকাই উপরে কাজ করবে।’
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরই আমরা এ নিয়ে ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এটি ওসির কণ্ঠ। এগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
‘একটি লিখিত অভিযোগও পেয়েছি। ওসিকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঘটনা সত্যি হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’