ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রাজগাতী ইউনিয়নের বনাটি গ্রামের রমজান মিয়ার মেয়ে ফারিয়া আক্তার। নান্দাইলের সমূর্ত্ত জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজের এ শিক্ষার্থী স্বামীকে নিয়ে থাকেন দক্ষিণ কোরিয়ায়।
এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করে টাকা জমা দিয়ে গত বছর অকৃতকার্য হওয়া এক বিষয়ের পরীক্ষা দিতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে দেশে আসেন তিনি। কিন্তু দিতে পারলেন না সেই পরীক্ষা।
এ ঘটনায় অভিযোগের তীর কলেজের অধ্যক্ষের দিকে। তার গাফিলতির কারণেই পরীক্ষা দিতে পারেননি বলে অভিযোগ ফারিয়াসহ তার পরিবারের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছর ওই কলেজের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে এইচএসসি পরীক্ষায় বিএম শাখা থেকে অংশগ্রহণ করেন ফারিয়া। কিন্তু অসুস্থতার কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসা ব্যবস্থাপনা বিষয়ের পরীক্ষা দিতে পারেননি।
ওই অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি দেন ফারিয়া। সেখান থেকেই মামার মাধ্যমে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় ওই একটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন ও যথাসময়ে টাকা জমা দিয়ে ফরম পূরণ করেন। প্রবেশপত্র পাওয়া যাবে- অধ্যক্ষের এমন আশ্বাসে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ওই শিক্ষার্থী দেশে আসলেও পাননি প্রবেশপত্র। ফলে অংশগ্রহণ করতে পারেননি পরীক্ষায়।
ফারিয়া আক্তারের মামা সাদেক হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘গত ২৬ জুলাই একটি বিষয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফারিয়ার পক্ষে আমি কলেজে গিয়ে রসিদমূলে দুই হাজার ১০০ টাকা জমা দিয়ে ফরম পূরণ করেছি। পরে ৩০ আগস্ট কলেজ কর্তৃপক্ষের কথামতো ফারিয়ার প্রবেশপত্র আনতে কলেজে গেলে প্রবেশপত্র না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমাকে কয়েক দিন পর আসতে বলেন। পরে গেলে জানানো হয়, ফারিয়ার ফরম পূরণে কিছুটা সমস্যা হয়েছে।
‘তাই প্রবেশপত্র আসেনি। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে ঢাকা থেকে প্রবেশপত্র আনা যাবে। এজন্য দিতে হবে আরও ১০ হাজার টাকা।’
তিনি জানান, পরে চাহিদা অনুযায়ী ১০ হাজার টাকাও প্রদান করা হলেও প্রবেশপত্র দেয়া হয়নি। ফলে গত ১২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি ফারিয়া। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চায় ফারিয়ার পরিবার।
শিক্ষার্থী ফারিয়া আক্তার বলেন, ‘ফরম পূরণ করার অনেক আগে থেকেই মামা কলেজে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। সবসময় বলা হয়েছে প্রবেশপত্র আসবে এবং আমি পরীক্ষা দিতে পারবো। এজন্য গত ৮ আগস্ট স্বামীকে নিয়ে দুই লক্ষাধিক টাকা খরচ করে দেশের বাড়িতে চলে আসি। কিন্তু অধ্যক্ষের গাফিলতির কারণে প্রবেশপত্র পাইনি, পরীক্ষাও দিতে পারিনি।’
তিনি বলেন, ঘটানাটির তদন্ত করে অধ্যক্ষসহ কলেজ কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবি করছি আমরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমূর্ত্ত জাহান মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) জ্যোতিষ চন্দ্র সাহা রায় বলেন, ‘প্রবেশপথ আনার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু নানা জটিলতায় সেটি সম্ভব হয়নি। ভেবেছিলাম পরীক্ষা দিতে পারবে তাই কখনো না করিনি। পরীক্ষা দিতে পারবে না, এটি আগেই জানা সম্ভব ছিলনা।’
তার দাবি এখানে অধ্যক্ষ হিসেবে তার কোনো গাফিলতি নেই।
এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুণ কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি। ওই শিক্ষার্থীর একটি অভিযোগও পেয়েছি। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’