বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সুন্দরবন রক্ষার স্মার্ট বাহিনী এখন জেলেদের ‘ত্রাস’

  •    
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ২৩:৩৫

জেলেদের অভিযোগ, আগে জলদস্যুদের বছরে একবার চাঁদা দিলেই হতো। কিন্তু সরকারি স্মার্ট বাহিনীকে প্রতিমাসে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। অন্যথায় মামলা, নৌকা-জাল আটকে রাখাসহ বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়। সম্প্রতি চাঁদা না দিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক জেলে।

সুন্দরবনে আগে জলদস্যুদের বছরে একবার টাকা দিলে নিরাপদে মাছ শিকার করা যেত। এখন সুন্দরবন রক্ষায় নিয়োজিত সরকারি স্মার্ট বাহিনীকে প্রতি মাসে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার করে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে নৌকা-জাল আটকে রাখাসহ বিভিন্নভাবে জেলেদের হয়রানি করা হয়। মিথ্যা মামলায় জেলেও পাঠানো হয়। এর চেয়ে আগেই ভালো ছিল।

নিউজবাংলার কাছে এভাবেই নিজেদের আক্ষেপ প্রকাশ করছিলেন সুন্দরবনের কচিখালী-কটকা এলাকায় মাছ ধরা কয়েকজন জেলে।

জলদস্যুর উৎপাত সুন্দরবনে নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন নামে বাহিনী গড়ে তুলে চলত দস্যুতা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় সেসব বাহিনীর দৌরাত্ম্য কমেছে। কিন্তু উৎপাত থেকে রেহাই মিলছে না জেলেদের।

জেলেদের নিরাপদে মাছ শিকারের স্বার্থে বন বিভাগের গঠন করা ‘স্মার্ট বাহিনী’ এখন এই গরীব নিরীহ মৎস্যজীবীদের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নিজেদের ঘরে ভাত থাকুক বা না থাকুক, প্রতিমাসে স্মার্ট বাহিনীর চাঁদার অর্থ যোগাড় করার দুশ্চিন্তা তাদের মাথায় ঘোরে সারাক্ষণ।

ভুক্তভোগী জেলেরা বলেন, ‘জলদস্যুদের একবার চাঁদা দিয়ে দিলে সারাবছর নিশ্চিত থাকা যেত। আমরা যাতে নিরাপদে সুন্দরবনের নদীগুলোতে ঘুরতে পারি, সে কারণেই তো রক্ষীবাহিনী পাঠাল সরকার। তারাই যদি আমাদের সঙ্গে এমন করে, তাহলে আমরা যাবো কোথায়?’

চাঁদা না পেয়ে মঙ্গলবার রাতে ওই এলাকায় মাছ ধরা অবস্থায় জেলেদের ওপর গুলি চালায় স্মার্ট বাহিনী। এতে জয়নাল আবেদিন নামের এক জেলে গুলিবিদ্ধ হন। পরে তারা চলে গেলে জয়নাল মাঝিকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যান সঙ্গীরা।

মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে ঘটে এ ঘটনা। জয়নাল আবেদিনের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার সদর পাথরঘাটা ইউনিয়নের রুহিতা গ্রামে।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে নিউজবাংলার সঙ্গে কথা বলেন আহত জয়নাল মাঝি। ছবি: নিউজবাংলা

আহত জয়নালের অভিযোগ, বলেশ্বর নদ সংলগ্ন সুন্দরবনের কচিখালী-কটকা এলাকায় মাছ ধরতে মাসোয়ারা দিতে হয় বন বিভাগের স্মার্ট বাহিনীকে। চলতি মাসের টাকা না দেয়ায় স্মার্ট বাহিনীর একটি টহল টিম তাদের ধাওয়া করে। প্রাণে বাঁচতে দ্রুত ট্রলারটি নিয়ে সরে যাওয়ার সময় এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে স্মার্ট বাহিনী। গুলি এসে তার ডানহাতে বিদ্ধ হয়; হাত থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল সেসময়। গুলিবিদ্ধ দেখেও ওই অবস্থায় তাকে ফেলে রেখে চলে যায় বাহিনীর ট্রলার।

বিষয়টি নিশ্চিত করে কোস্টগার্ড দক্ষিণ জোনের পাথরঘাটা স্টেশনের পক্ষ থেকে বুধবার জানানো হয়, রাত সাড়ে তিনটার দিকে গুলিবিদ্ধ জয়নালকে কচিখালী স্টেশনের সহযোগিতায় পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়।

বুধবার পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রুবাইয়াত আলী বলেন, ‘জয়নাল মাঝির হাতে গুলি লাগে। প্রচুর রক্তক্ষরণে অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

ঘটনার বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বন বিভাগের এ বাহিনীর প্রতি ক্ষোভ ঝাড়েন বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী। বলেন, ‘সুন্দরবন এলাকায় মাছ ধরতে হলে স্মার্ট বাহিনীকে টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে তারা জেলেদের ট্রলার আটকে রেখে নির্যাতন করে। বিষয়টি আমি জেলা আইনশৃঙ্খলা সভায়ও উপস্থাপন করেছি।’

পাথরঘাটা থানার ওসি (তদন্ত) সাইফুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, ‘বন বিভাগের স্মার্ট বাহিনীর হাতে এক জেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছে শুনেছি। তবে আমরা হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাকে বরিশালে পাঠানো হয়েছে।’

বিষয়টি নিয়ে বন বিভাগের কচিখালী বিট কর্মকর্তা ছবুরের নম্বরে ফোন করা হয়। সাংবাদিক পরিচয় শুনে ‘এসিএফ স্যারের সঙ্গে কথা বলেন’ বলে তিনি সংযোগ কেটে দেন।

পরবর্তীতে তার সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করতে চাইলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিভাগের আরো খবর