বর্ষায় বিদ্যালয়ের চারপাশে কচুরিপানা ও মেঝেতে পানি উঠলেই ব্যাহত হয় টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম।
বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রেও আছে শতেক ভোগান্তি। বর্ষাকালে নৌকা দিয়েই বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করতে হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, পানি মেঝে থেকে নেমে গেলেও বিদ্যালয়ের চারপাশটা কচুরিপানার রাজ্য। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে পারছেন না শিক্ষকরা।
বাসাইল উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৭৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উপজেলায় ২৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১১টি মাদরাসা ও তিনটি কলেজ রয়েছে।
চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী তানজিলা আক্তার তন্বীর বক্তব্য, ‘বর্ষায় স্কুলের চারপাশে পানি উঠে যায়। আমরা পড়াশোনা করতে পারি না। কয়েকদিন আগেও পানি উঠেছিল। তখন স্কুলেও যেতে পারি নাই। টাগই (কচুরি) পানায় ভরে গেছে চারপাশ। নৌকা নিয়ে আসতেও কষ্ট হয়। অন্যান্য স্কুল খোলা আছে। শুধু আমাদের স্কুলই বন্ধ। আমরা পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছি। আমরা সুন্দর পরিবেশে পড়াশোনা করতে চাই।’
আরেক শিক্ষার্থী প্রসেনজিৎ সরকার বলে, ‘কষ্ট করে আমাদের ক্লাসে আসতে হয়। চারপাশ পানি আর পানায় ভরে গেছে।’
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সভাপতি আবদুল কাদের মিয়া বলেন, ‘দুই বছর ধরে বিদ্যালয়টির নতুন ভবন করা হবে বলে জানিয়ে আসছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই পর্যন্তই। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। নিম্নাঞ্চল হওয়ায় এখানে বর্ষাকাল এলেই মাঠে ও স্কুল ঘরের মেঝেতে পানি উঠে যায়। তখন শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হয়।
‘বিদ্যালয় ভবনের মেঝে থেকে পানি নেমে গেছে। তবে বিদ্যালয়ের চারপাশে কচুরিপানা রয়েছে। দ্রুত বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করা উচিত।’
রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা হোসনে আরা আক্তার পপি বলেন, ‘আমি ২০১৮ সালে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে যোগদান করি। যোগদানের পর থেকেই আমি চেষ্টা করছি নতুন ভবন ও বন্যা আশ্রয়ণ কেন্দ্র আনার জন্য। তা বাস্তবায়ন হলে ভবনের নিচতলা খোলা থাকবে আর উপরে পাঠদান চলবে। গতবছরও আমি তার জন্য আবেদন করেছি।
‘২০২১ সালে যখন বড় বন্যা হয় তখনও ছবিসহ আবেদন করেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ বছরও আমি অফিসারদের ম্যাসেঞ্জারে বিদ্যালয়ের ছবি পাঠিয়েছি। ওনারা যদি ব্যবস্থা না নেন তাহলে আমার তো করার কিছু নেই।’
তিনি জানান, বিদ্যালয়ের চারপাশে কচুরিপানা রয়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের মেঝেতে এক ফুট পানি ছিল। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার তিনটি পরীক্ষা বিদ্যালয়ে নিতে পারলেও আর তিনটি পরীক্ষা রাশড়া করিম বাজার গ্লোবাল কিন্ডার গার্টেনে নিতে হয়েছে। তিনটি পরীক্ষা নেয়ার পর বিদ্যালয়ের মেঝেতে পানি চলে আসে। পানি মেঝে থেকে নেমে গেলেও বিদ্যালয়ের চারপাশে কচুরিপানা রয়েছে।
পপি বলেন, ‘আশা করছি সামনের সপ্তাহ থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চালু করতে পারব।’
বাসাইল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আনজুম আরা বেগম বীথি বলেন, ‘আমি উপজেলাতে নতুন এসেছি। শুনতে পেরেছি এই বিদ্যালয়টিতে প্রতি বছর পানি ওঠে। আমি নতুন এলেও রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছি। শুধু রাশড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, আরও কিছু বিদ্যালয়ে বর্ষা মৌসুমে পানি ওঠে। এই বিদ্যালয়গুলো বন্যার আশ্রয়ণ কেন্দ্র করা দরকার ছিল। বিষয়টির বিস্তারিত তুলে ধরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাবো।’