বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টানেলের সঙ্গেই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন!

  •    
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০৮:৩৯

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উড়াল সড়কটির মূল অবকাঠামোর ২০ শতাংশ কাজ বাকি থাকলেও তা এক মাসের শেষ করতে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছেন। আমাদের ধারণা ২৮ অক্টোবর টানেলের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও উদ্বোধন হবে। কারণ এর পর তো আর সময় নেই।’

কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই দিনে উদ্বোধন করা হতে পারে বন্দর নগরীতে নির্মাণাধীন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

মঙ্গলবার নিউজবাংলাকে এমন তথ্যই জানিয়েছেন প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।

সম্প্রতি দেশের বৃহত্তম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধনের পর সবার চোখ এখন বন্দর নগরীতে। চার হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা ব্যয়ে এখানেই নির্মিত হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উড়াল সড়ক। এখন পর্যন্ত মূল অবকাঠামোর ২০ শতাংশ কাজ বাকি থাকলেও শুরু হয়েছে উদ্বোধনের তোড়জোড়।

বঙ্গবন্ধু টানেলের সুফল পেতে টানেল উদ্বোধনের সঙ্গে নগরীর লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পর্যন্ত নির্মিত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কিছু অংশ হলেও যান চলাচলের জন্য খুলে দিতে চায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা। সে লক্ষ্যে বর্তমানে তিন হাজারের বেশি শ্রমিক তিন শিফটে কাজ করছেন এই প্রকল্পে।

প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘আমরা প্রকল্পের সামারিসহ প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তবে এখনও অনুমোদন আসেনি। আমাদের ধারণা ২৮ অক্টোবর টানেলের সঙ্গে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও উদ্বোধন হবে। কারণ এর পর তো আর সময় নেই।’

কাজের অগ্রগতি বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পতেঙ্গা থেকে কাস্টম পর্যন্ত কার্পেটিং শেষ। অর্থাৎ এই অংশ যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি তৈরি। এদিকেও তৈরি মোটামুটি, তবে আগ্রাবাদ বারেক বিল্ডিং এলাকায় গার্ডারে একটা স্প্যান বাকি আছে।

‘আর কর্ণফুলীর পর থেকে গার্ডারে স্ল্যাব ঢালাই হয়ে আসছে। দেওয়ানহাটের আগ পর্যন্ত আগামী এক মাসের মধ্যে পুরোপুরি তৈরি করে ফেলব আমরা।’

কাজ চলছে দিন-রাত

উড়াল সড়কের অন্তত দেওয়ানহাট পর্যন্ত কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ করতে বর্তমানে রাত-দিন মিলে তিন শিফটে কাজ করছেন তিন হাজারের বেশি শ্রমিক। এ বিষয়ে সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। এক সেকেন্ডের জন্যও কাজ বন্ধ নেই। দৈনিক ৮ ঘণ্টা করে তিন শিফটে তিন হাজারের অধিক শ্রমিক কাজ করছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে।’

চট্টগ্রাম বন্দরের আপত্তিতে নকশায় পরিবর্তন

সিডিএ সূত্রে জানা যায়, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরির এই পুরো প্রকল্পের কাজ করা সম্পন্ন হচ্ছে চারটি ধাপে। ২০১৯ সালে কাজ শুরুর পর সহজেই প্রথম দুই ধাপে ভৌত কাজ সম্পন্ন করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা।

তৃতীয় ধাপে আপত্তি জানায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাতে প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়। শুরুতে নগরীর বৃহত্তম এই উড়াল সড়ক লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মাণের কথা ছিল।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আপত্তিতে পরিবর্তিত নকশায় লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে প্রস্তুত হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। কাজের চতুর্থ ধাপে আগ্রাবাদ এক্সেস রোড ও পোর্ট কানেক্টিং রোডের কাজ শেষ না হওয়ায় নগর ট্রাফিক পুলিশের আপত্তিতে তা আটকে ছিল। ২০২০ সালে এই দুই সড়ক চালুর পর ফের শুরু হয় কাজ।

তিন দফায় বেড়েছে সময়, বেড়েছে ব্যয়

বন্দর নগরীর যানজট কমানো ও নগরীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের জুলাইয়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পায়। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুরুতে প্রকল্পটির ব্যয় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হলেও পরবর্তীতে নানা জটিলতায় ব্যয় বৃদ্ধি করে তা ৪ হাজার ৩৬৯ কোটি ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৯ টাকা করা হয়। ব্যয় বৃদ্ধির এই পরিমাণ মূল ব্যয়ের ৩৪ শতাংশেরও বেশি।

একনেকে অনুমোদনের পর পরবর্তী তিন বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের শতভাগ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে প্রকল্পটির মেয়াদ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। ওই মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তৃতীয় দফায় ২০২৪ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।

র‌্যাম্প নির্মাণে বিলম্ব, সুফল নিয়ে সংশয়

সাধারণত বিমানবন্দর বা পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে শহরের কেন্দ্রে আসতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে পতেঙ্গা বা বিমানবন্দর এলাকায় যাওয়ার পথে অনেকটা অবধারিতভাবেই যানজটে পড়তে হয় একাধিকবার।

বঙ্গবন্ধু টানেল খুলে দেয়া হলে যানবাহনের চাপ দ্বিগুণের বেশি হতে পারে। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে নগরীর দক্ষিণ অংশের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করতে নির্মাণ হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে কয়েক ঘণ্টার এই পথ ৩০ মিনিটে পাড়ি দেয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের আগে চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এই উড়াল সড়ক দেওয়ানহাট থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত খুলে দেয়ার কথা থাকলেও এখনও তৈরি হয়নি কোনো র‌্যাম্প।

মাহফুজুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘পুরো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ১৫টি র‌্যাম্প রয়েছে। তবে এখেও কোনো র‌্যাম্প তৈরি হয়নি। বর্তমান প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এর মধ্যে ফ্লাইওভারের সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। তবে র‌্যাম্পের কিছু কাজ বাকি থাকতে পারে।’

এখনও র‌্যাম্প নির্মাণ না হওয়ায় দেওয়ানহাট থেকে সরাসরি পতেঙ্গা বা পতেঙ্গা থেকে সরাসরি দেওয়ানহাট পর্যন্ত চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে এক্সপ্রেসওয়ে। এতে র‌্যাম্প নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আগ্রাবাদের মতো শহরের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক এলাকার ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করতে পারবেন না এই উড়াল সড়ক। এমনকি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এলাকায়ও যানবাহন উঠানামা করতে পারবে না র‌্যাম্প না থাকার কারণে। আর তাই এই উড়াল সড়ক খুলে দেয়া হলেও তার সুফল নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আদ্যোপান্ত

১৬ দশমিক ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই উড়াল সড়কের প্রস্থ ১৬ দশমিক ৫ মিটার বা ৫৪ ফুট। পুরো ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হচ্ছে ৩৯০টি পিলারের ওপর। এসব পিলারের ওপর সম্পূর্ণ ফ্লাইওভারের কাঠামো দাঁড় করাতে বসানো হচ্ছে ৪শ’ গার্ডার। তাছাড়া নিচ থেকে বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন উঠা-নামার জন্য রাখা হয়েছে ১৫টি র‌্যাম্প।

এখন পর্যন্ত মূল কাঠামোর ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সব পিলার তৈরি হলেও বাকি আছে গার্ডার ও স্ল্যাব ঢালাইয়ের কাজ। প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সব পিলার বসানো শেষ, তবে গার্ডারের কাজ চলছে।’

মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে নামকরণের প্রস্তাব

নির্মাণাধীন উড়াল সড়কটি চট্টগ্রামের প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে নামকরণের প্রস্তাব করেছে সিডিএ। চলতি বছরের ২৪ আগস্ট সংস্থাটির ৪৫৮তম বোর্ড সভায় সর্বসম্মতিতে ‘সিডিএ মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ফ্লাইওভার’ নামে নামকরণের প্রস্তাব করা হয়।

সিডিএ’র বোর্ড সভায় গ্রহণের পর অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবনাটি ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, ‘সভায় সর্বসম্মতিক্রমে প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণের বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। আমরা প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো অনুমোদনের জন্য। সেখান থেকে তা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ করা হবে- ‘সিডিএ মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী ফ্লাইওভার’।

এ বিভাগের আরো খবর