বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

চট্টগ্রামে দিশেহারা ইমামের মুখে হাসি ফোটাল পুলিশ

  • প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম   
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ০০:১১

সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর হাসপাতাল খরচের জন্য তিল তিল করে টাকা জমিয়েছিলেন চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার একটি মসজিদের ইমাম নজরুল ইসলাম। প্রয়োজনের সময়ে ব্যাংক থেকে ৪৫ হাজার টাকা তুলে বাসায় ফেরার পথে তিনি তা ফেলে আসেন সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। অভিযোগ পেয়ে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে সেই টাকা উদ্ধার করে দিয়েছে পুলিশ।

চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার একটি মসজিদে অল্প বেতনে ইমামতি করেন স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর জন্য হাসপাতাল খরচ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিমাসের উপার্জন থেকে অল্প অল্প করে টাকা সঞ্চয় করছিলেন তিনি।

স্ত্রীর সন্তান জন্মদানের সময় ঘনিয়ে এলে গেল রোববার দুপুরে নগরীর আগ্রাবাদে একটি ব্যাংক থেকে সঞ্চয়ের ৪৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে হালিশহরের বাসায় যান।

সদ্য ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা টাকা রেখেছিলেন সঙ্গে থাকা ব্যাগে। সেই ব্যাগে আবার নিজের পাসপোর্ট এবং স্ত্রীর চিকিৎসাপত্রও ছিল। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছে ভুলবশত ব্যাগটি অটোরিকশাতে রেখেই নেমে যান তিনি। বাসায় প্রবেশের কিছুক্ষণ পর বিষয়টি বুঝতে পেরে আশপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন হন্যে হয়ে। কিন্তু ‌আর খোঁজ পাননি সেই অটোরিকশাটির। তিল তিল করে সঞ্চয় করা স্ত্রীর সন্তান জন্মদানকালীন খরচের একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি।

কোনো উপায় না পেয়ে স্থানীয় হালিশহর থানা পুলিশের দ্বারস্থ হন নজরুল। বিষয়টি জানতে পেরে টাকাগুলো উদ্ধারে কাজ শুরু করে পুলিশ। শুরুতে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও সেসব পর্যালোচনা করে অটোরিকশাটির নম্বর সংগ্রহ করে পুলিশ। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপসের মাধ্যমে অটোরিকশাটির মালিক ও চালক সম্পর্কে তথ্য মেলে।

‘আমার গাড়ি নিরাপদ’ অ্যাপসের তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমে অটোরিকশাটির মালিক ও চালকের তথ্য সংগ্রহের পর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু বিধিবাম! মালিক জানান যে গাড়িটি বছর কয়েক আগে তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপর গাড়ির ক্রেতাকে খু্ঁজে বের করে পুলিশ। কিন্তু তাতেও মেলেনি সমাধান। অটোরিকশাটির ক্রেতা জানান, তিনিও অন্য একজনের কাছে গাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছেন কিছুদিন আগে।

এই অভিযানে অংশগ্রহণকারী হালিশহর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুফল কুমার দাশ বলেন, ‘আমরা ডাটাবেজে পাওয়া তথ্যানুযায়ী চালক ও মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে শুনি তিনি গাড়িটি অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে নতুন মালিককে খুঁজে বের করি। তখন ওই মালিক জানান যে তিনিও অন্যত্র গাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন কিছুদিন আগে।’

উপ-পরিদর্শক সুফল জানান, কোনো উপায় না পেয়ে একে খান মোড়, অলংকার মোড় ও নিউমার্কেট মোড়সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে ওই অটোরিকশাটি খুঁজতে থাকেন তারা। এক পর্যায়ে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নগরীর বাকলিয়া থানার মিয়া গলি এলাকায় অটোরিকশাটি পাওয়া যায়।

হালিশহর থানার ওসি কায়সার হামিদ বলেন, ‘অটোরিকশাটি পাওয়ার পর চালকের কাছ থেকে ব্যাগটা উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে আমরা ওই ভদ্রলোকের হাতে টাকাসহ ওনার সবকিছু তুলে দিয়েছি। তার ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য ব্যাংকে টাকাগুলো জমিয়েছিলেন তিনি।’

ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম জানান, পুলিশের এমন ত্বরিৎ পদক্ষেপে বাহিনীটির প্রতি তার ধারণাই বদলে গেছে। তিনি বলেন, ‘তারা গুরুত্ব দিয়ে আমার মতো অসহায় মানুষের উপকারটা করেছে। আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। টাকাটা এখন খুব জরুরি ছিল বলেই ব্যাংক থেকে তুলেছি। আমার আর যাওয়ার পথ ছিল না। পুলিশ ভাইদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা আমার।’

অসহায় ওই ইমামের হারানো টাকা, পাসপোর্ট ও চিকিৎসাপত্র উদ্ধারের পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে ছিলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) পশ্চিম বিভাগের উপ-কমিশনার মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কাজগুলো করার জন্যই প্রশিক্ষণ দেয়া হয় আমাদের। আমাদের কমিশনার মহোদয়ও সাধারণ মানুষের এই বিষয়গুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করতে বলছেন। সেই লক্ষ্যেই আমরা সবসময় সেবাপ্রার্থীদের সমস্যা সমাধানের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে দেখি।’

এ বিভাগের আরো খবর