শাহবাগ থানায় নিয়ে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে বেদম মারধরের ঘটনায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেলেই পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ওই ঘটনায় আহত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফজলুল হক হলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন নাঈমকে দেখতে গিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এ কথা জানান ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক।
নাঈমের শারীরিক খোঁজ খবর নেয়ার পর ডিএমপি সাংবাদিকদের বলেন, ‘শাহবাগ থানার ঘটনায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা নাঈম আহত হয়েছেন। আমি মূলত তার শারীরিক অবস্থা ও চিকিৎসার খবর নেয়ার জন্য আমার সহকর্মীদের নিয়ে তাকে হাসপাতালে দেখতে এসেছি। তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিয়েছি, সে এখনো বেশ কিছুটা অসুস্থ। তার আরও কয়েক দিন সময় লাগবে সুস্থ হতে।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার তদন্তের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির কাজ শেষ হওয়ার আগেই দুইজন অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এডিসি হারুনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শাহবাগ থানার পরিদর্শককেও (অপারেশন) থানা থেকে সরিয়ে লাইনওআরে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয়সহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এক প্রশ্নে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘তদন্ত কমিটি ঘটনার সার্বিক বিষয়ে তদন্ত দেখবে কে কে দোষী এবং প্রকৃত ঘটনা কী, কেন ঘটনাটি ঘটল এবং কে কে কতটুকু দোষী। এসব বিষয়ে তদন্ত কমিটি আমাদের প্রতিবেদন দেবে।’
ঘটনার সময় এডিসি হারুনের গায়েও হাত তোলা হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কমিটিকে দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত কমিটি তদন্ত করে সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন দিবে, তখন সার্বিক চিত্রটা আমাদের সামনে আসবে। আমরা প্রাথমিকভাবে দেখেছি একজন ছাত্রকে থানার ভিতরে নিয়ে মারধর করার বিষয়টি বেআইনি। সেটির উপর ভিত্তি করে প্রাথমিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা জানান, এডিসি হারুন ৯ সেপ্টেম্বর রাতে আরেক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তার স্বামী এপিএস মামুন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান।
ওই সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে সেখানে যোগ দেন এ দুই ছাত্রলীগ নেতাও। এক পর্যায়ে এডিসি হারুন পুলিশ এনে তাদের শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে নির্যাতন করেন। পরে ওই দুইজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এডিসি হারুনের নেতৃত্বে মারধর করা হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন এবং বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ আহমেদকে।
ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছে ডিএমপি। এরই মধ্যে এডিসি হারুনকে প্রথমে রমনা বিভাগ থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ অর্ডার ম্যানেজমেন্টে (পিওএম) উত্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর প্রজ্ঞাপন জারি করে তাকে কক্সবাজার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এপিবিএন) বদলি করা হয়। সর্বশেষ সোমবার এই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।