চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক-স্টাফ বাসসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দুই মামলায় সাতজন করে ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরও এক হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
উপাচার্যের বাসভবনে ভাঙচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা শেখ মো. আব্দুর রাজ্জাক বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
চবি শাখা ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, নাম উল্লেখ করা ১৪ জনের মধ্যে ১২ জন শাখা ছাত্রলীগের শাটল ট্রেনের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ ‘সিক্সটি নাইন’, ‘সিএফসি’ ও ‘বিজয়’-এর রাজনীতিতে যুক্ত। তাদের মধ্যে সিএফসি গ্রুপের পাঁচজন, সিক্সটি নাইন গ্রুপের ছয়জন ও বিজয় গ্রুপের একজন অনুসারী আছেন।
বাকি দুজন নিজেদের সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে দাবি করেছেন। তাদের দলীয় পরিচয় নিশ্চিত করা যায়নি।
এ মামলার সাত আসামি হলেন পালি বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আমিনুল ইসলাম, সিক্সটি নাইন গ্রুপের অনুসারী শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মো. রিয়াদ হাসান রাব্বি, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সৌরভ ভূঁইয়া ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-২০১৬ শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের উপপ্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, সিএফসির গ্রুপের অনুসারী ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র শাকিল হোসেন আইমুন, সংস্কৃত বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র দীপন বণিক দীপ্ত ও ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র নুর মোহাম্মদ মান্না। মামলাটিতে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৫০০ থেকে ৬০০ চবি শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা গত ৪ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের বাসভবনে যান। সেখানে উপাচার্যকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে বাসার কেয়ারটেকার মেহেদী হাসানকে জানান, চবিতে চলমান উন্নয়নমূলক প্রকল্প থেকে তাদের ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। এ টাকা না পেয়ে আসামিরা চবির শাটল ট্রেনের দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে গত ৭ সেপ্টেম্বর চবিতে তাণ্ডব চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করেন। ওই সময় তারা উপাচার্যের বাসভবনের নিরাপত্তার প্রহরীদেরও মারধর করেন।
অন্যদিকে পরিবহন দপ্তরে ভাঙচুরের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদ বাদী হয়ে সাতজনকে আসামি করে আরেকটি মামলা করেন।
এ মামলায় সাত আসামি হলেন দর্শন বিভাগের ২০১৫-২০১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সাজ্জাদ হোসেন, সিক্সটি নাইন গ্রুপের অনুসারী ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র আনিছুর রহমান, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-২০১৯ সেশনের ছাত্র নাসির উদ্দিন মো. সিফাত উল্লাহ ও বাংলা বিভাগ ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র অনিরুদ্ধ বিশ্বাস, বিজয় গ্রুপের অনুসারী সংস্কৃত বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র অনিক দাশ, সিএফসি গ্রুপের অনুসারী বাংলা বিভাগ ২০১৮-২০১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মো. আজিমুজ্জামান ও পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মো. ইমরান নাজির ইমন।
এ মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৪০০ থেকে ৫০০ চবি শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়।
মামলার বিবরণে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা ৫ সেপ্টেম্বর পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক মো. আশরাফ উদ্দিনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে পাননি। তারা চবির শাটল ট্রেনের দুর্ঘটনাকে পুঁজি করে গত ৭ সেপ্টেম্বর চবিতে তাণ্ডব চালিয়ে ক্ষয়ক্ষতি করেন।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা ইকবাল হোসেন টিপু বলেন, ‘আমাকে অনেকে জানিয়েছে ছাত্রলীগের প্রায় ১২ জন আন্দোলনে ছিল, পরে আন্দোলন থামিয়েছে। তাদেরও আসামি করা হয়েছে। আবার অনেকে অপরাধ করছে, তাদেরকে আসামি করা হয় নাই।
‘এটা প্রশাসনের একটা গ্যাম্বলিংয়ের অংশ। অনেকে মাস্ক পরে হামলা করেছে। তাদের খুঁজে বের করা হয়নি। এটা অন্য মতাদর্শের কাউকে ছাড় দেয়ার জন্য করা হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা নিয়ে একটা ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রলীগ সাধারণ শিক্ষার্থীদের যেকোনো যৌক্তিক আন্দোলনে সবসময় পাশে থাকে। এখানে যৌক্তিক আন্দোলনে থাকতে গিয়ে যদি ছাত্রলীগকে ভুক্তভোগী হতে হয়, তাহলে সেখানে অবশ্যই আমরা প্রতিবাদ করব।’
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের একাংশের নেতা রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘যারা ভাঙচুর করেছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিরাপরাধ কাউকে ভিকটিম করা হলে শিক্ষার্থীরা মেনে নেবে না।’
শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের অন্য অংশের নেতা সাদাফ খান বলেন, ‘যারা জিরো পয়েন্টে আন্দোলনে গেছে, সেটা কোনো অন্যায় না। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ ভাঙচুর করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, কিন্তু আমাদের দাবি সঠিক তদন্ত করা হোক, সিসিটিভি ফুটেজগুলো প্রকাশ করা হোক।’
শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিজয় গ্রুপের নেতা মো. ইলিয়াস বলেন, ‘আমার যে একজন অনুসারীর নাম মামলায় দেয়া হয়েছে, সে রোগী নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে গিয়েছিল। সেখানে সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে এটা প্রমাণ হবে। আমার মনে হয় ভুলে করে, না হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে ফাঁসানোর জন্য তার নাম দেয়া হয়েছে।’