বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

এডিসি হারুনের বিচারের দাবিতে ফুঁসছিল ছাত্রলীগ

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন রানা লিখেন, ‘হারুন কোন বা…পুলিশ সে তো সন্ত্রাসী, তার যে বাজে ব্যবহার, তার কোন শাস্তি না হলে আমাদের হাতে চুড়ি পরে ঘুরতে হবে..।’

ছাত্রলীগের দুই নেতাকে শনিবার রাতে মারধরের ঘটনায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা জোনের এডিসি হারুন অর রশিদকে রোববার দুপুরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর আগে পুলিশের এ কর্মকর্তার কঠোর শাস্তি দাবিতে ফুঁসে উঠছিলেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

তাদের অভিযোগ, এডিসি হারুন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতাকে থানায় ধরে নিয়ে বেদম পিটিয়েছেন। একজনের দাঁত ভেঙে ফেলা হয়েছে। যদিও এ দুই নেতার একজন বলছেন ভিন্ন কথা।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গত শনিবার রাতে এ ঘটনার সূত্রপাত।

এরপর থেকে ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক অনেক নেতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এডিসি হারুনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।

মারধরের শিকার ওই দুই নেতা হলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাইম এবং বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক শরীফ আহমেদ মুনিম। এর মধ্যে আনোয়ার হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের সভাপতি আর শরীফ আহমেদ মুনিম ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, এডিসি হারুন শনিবার রাতে আরেক নারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে বারডেম হাসপাতালে আড্ডা দিচ্ছিলেন। ওই সময় নারী কর্মকর্তার স্বামী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ দুই নেতাকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে যান। নারী কর্মকর্তার স্বামীও একজন সরকারি কর্মকর্তা। এর আগে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ছিলেন।

ওই সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে এডিসি হারুনের বাগবিতণ্ডা হয়। পরে সেখানে যোগ দেন এ দুই নেতাও।

সূত্রটি জানায়, এডিসি হারুন পুলিশ ফোর্স এনে দুই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাকে শাহবাগ থানায় তুলে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করেন। এরপর অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়লে ওই দুইজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

মারধরে গুরুতর আহত হন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন নাইম। বর্তমানে তিনি একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

যদিও এ ঘটনায় মারধরের শিকার শরিফ আহমেদ মুনিম বলেন, ‘গতকাল রাত আটটার সময় এ ঘটনা। পিজি হাসপাতালে মামুন ভাইয়ের একজন প্যাশেন্ট (রোগী) ছিল। উনাকে দেখতে আমি, নাইমসহ আরও কয়েকজন সেখানে যাই। হারুন ভাই অফ ডিউটিতে ছিল। আর উনার গায়ে ইউনিফর্ম না থাকায় উনাকে আমরা চিনতে পারিনি প্রথমে।

‘উনারা লিফটে উঠছিল। তখন আমরাও লিফটে উঠছিলাম। তখন আমাদের মধ্যে ধাক্কা লাগে। মূলত হাসপাতালের লিফটে উঠাকে কেন্দ্র করে আমাদের সাথে এডিসি হারুন ভাইয়ের কথাকাটাকাটি এবং পরে ধাক্কাধাক্কি হয়। এরপর শাহবাগ থানায় ঘটনার মীমাংসা হয়ে যায়।’

আনোয়ার হোসেন নাইমের দাঁত ভাঙল কীভাবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হারুন ভাইয়ের সাথে সিভিলে থাকা একজন হাতাহাতির একপর্যায়ে নাইমকে ঘুষি মারেন। তখন নাইমের ঠোঁট ফেটে যায়।’

শরিফ আহমেদ মুনিম বলেন, ‘আমরা নাকি বেশি ভাব দেখাইছি। এরপর আমাদের ওপর প্রথমে উনারা হাত তুলেছে, তবে হারুন ভাই, উনি তো আমাদেরই বড় ভাই। আমরা নিজেদের পরিচয় দেয়ার পর আর উনি নিজের পরিচয় দেয়ার পর আমরা সবাই লজ্জায় পড়ে গেছি। পরে শাহবাগ থানায় এটির মীমাংসা হয়ে যায়।’

শনিবার রাত দশটার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শাহবাগ থানার গেট বন্ধ। কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। বাইরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা অবস্থান করছেন। ভেতরে ছিলেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।

গেটে থাকা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভেতরে অবস্থান করছেন।

এরপর একাধিকবার শেখ ওয়ালীকে ফোন করা হলেও সেগুলো রিসিভ না হওয়ায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।

এদিকে এ ঘটনার পর থেকে আনোয়ার হোসেন নাইমের ঠোঁট ফাটা, ঠোঁটে রক্ত আর দাঁত ভেঙে যাওয়ার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ছাত্রলীগের বর্তমান এবং সাবেক নেতারা এডিসি হারুনের শাস্তি চেয়ে স্ট্যাটাস দেন।

এডিসি হারুনের উদ্দেশে জাগরণ টিভির পরিচালক এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী বাণী ইয়াসমিন হাসি লিখেন, ‘তার কিছুই হবে না। বড় নেতার বন্ধু বলে কথা। বন্ধু কোটায় সে নাকি ছাত্রলীগের নেতা ছিল!’

আরেক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘মেরুদণ্ডহীন নেতৃত্ব। ছি! লজ্জা! ১/১১ তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই দেখিয়েছিল। তখন অবশ্য ফেসবুকের যুগ ছিল না। আশা করব, বিপ্লবটা শুধু ফেসবুকে না করে সহকর্মীর রক্তের মর্যাদা দেবে তোমরা।’

এসব পোস্টে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী কমেন্ট করেন, ‘আপা, এর একটা বিহিত করতেই হবে! ও মানুষের পর্যায়ে পড়ে না, কথার আগে হাত-পা আর মুখে গালি চলে!! বারংবার অপরাধ করেও পার পাচ্ছে! আর সে কবে ছাত্রলীগ করছে, ছাত্রলীগের কোনো মিটিং-মিছিলে কোনোদিন দেখি নাই!’

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন লিখেন, ‘আমাদের গাজীপুরের যে কয়টা ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, এর মধ্যে আনোয়ার হোসেন নাইমকে আমরা বলি সবচেয়ে ভদ্র, মার্জিত ও মিষ্টি হাসির একটা ছেলে। সে কারও সাথে বেয়াদবি করেছে কিংবা উচ্চস্বরে কথা বলেছে, এমন কথাও কেউ বলতে পারবে না।

‘নাইম ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ফজলুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি। একজন পুলিশ অফিসারের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় তার ওপর যে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে, তা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। প্রতিবাদ করারও ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। পুলিশের ইমেজ নষ্ট করার জন্যই এই রকম একজন কর্মকর্তাই যথেষ্ট। নাঈমের জন্য শুভ কামনা...।’

সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী তিলোত্তমা শিকদার লিখেন, ‘ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। সব নিয়ে নীতি কী শুধু ছাত্রলীগের জন্য..? আমার ভাই নাইম-মুনিমের পাশে আছি।’

সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী বেনজির হোসেন নিশি লিখেন, ‘এ ঘটনার পরও কীভাবে বসে থাকা সম্ভব? আমার ভাইয়ের বিচার আমি চাই, যেকোনো মূল্যে! এর জন্য সাবেক বর্তমান সবাই প্রয়োজনে এক হব! তবু এর পাল্টা জবাব দেয়ায় চাই।’

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দীন রানা লিখেন, ‘হারুন কোন বা…পুলিশ সে তো সন্ত্রাসী, তার যে বাজে ব্যবহার, তার কোন শাস্তি না হলে আমাদের হাতে চুড়ি পরে ঘুরতে হবে..।’

ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসিবুল হোসেন শান্ত লিখেন, ‘এডিসি হারুন একটা সন্ত্রাসী। ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো, কনস্টেবলকে থাপ্পড় মারা, সুপ্রিম কোর্টে সাংবাদিক পেটানো আর আজ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের দুই নেতার ওপর বর্বর অত্যাচার যা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। হারুনের অব্যাহতি চাই।’

এদিকে এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক সিফাত উল্লাহ লিখেন, ‘এই যে আপস করতে করতে পাপোশ হয়ে যাওয়ার যে ব্যাপারটা, ফুটফুটে সুন্দর না?

‘সুবক্তা ও স্মার্ট ছাত্রনেতাদের হাত ধরে এমন নির্বীর্য নির্বাক নির্যাতিত সর্বংসহা ছাত্রলীগই কি আমরা চেয়েছিলাম? তথাকথিত উগ্র মানসিকতার ছেলেদের ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়ে সুশীল চামচাবাজদের নেতা বানানোর দায়ভার কার?’

আরেক পোস্টে তিনি লিখেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের শীর্ষ নেতাদের পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণপূর্বক দ্ব্যর্থহীনভাবে বলে যেতে চাই, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সেক্রেটারি তানভীর হাসান সৈকত ভাই তার কর্মীদের ব্যাপারে আপসহীন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবীর শয়নের অনুসারী এবং মাস্টার দা সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ জায়েদ লিখেন, ‘জারুল ফুল/পাখি দিয়া জনপ্রিয়তা পাওয়া গেলেও রাজনীতি না। রাজনীতির ভাষায় রাজনীতি করতে হবে.. শেইম!’

শয়নের আরেক অনুসারী এবং মাস্টার দা সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের পরিবেশবিষয়ক উপসম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম লিখেন, ‘চর্যাপদের কবিরা যেমন দ্রোহ করে নাই, তেমনি এখনকার জারুল ফুলের কবিরাও করে না। খালি আহা উহু করে গলা ফাটাইতে পারে।’

এ বিভাগের আরো খবর