বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ওয়াকওয়ে নাকি ওয়াকবাজার?

ওয়াকওয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘ওয়াকওয়েগুলো ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। উন্মুক্ত থাকলে খারাপ লোকদের আড্ডা জমে যেতে পারে। ছিনতাইকারীদের উৎপাত বাড়বে। তাতে পরিবেশ আরও নষ্ট হবে।’

ওয়াকওয়ের (হাঁটার পথ) এক পাশে সারি সারি দোকান। ফাস্ট ফুড, রেস্তোরাঁ, ক্রোকারিজ, উপহার সামগ্রী, কী নেই সেখানে। ভেতরে পাতা আছে বেঞ্চ। বিকেল হলেই এখানে ভিড় জমে তরুণ-তরুণীদের। কেনাকাটার চেয়ে মূলত আড্ডা দিতেই এখানে আসেন তারা।

বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ওয়াকেওয়েতে ভিড় লেগে থাকে।

এমন চিত্র দেখা যায় সিলেট নগরের জল্লারপাড় এলাকায় নির্মিত জল্লারপাড় ওয়াকওয়ের। স্থানটি তরুণ-তরুণীদের গল্পগুজবের পছন্দের জায়গা হয়ে উঠলেও ব্যাহত হচ্ছে ওয়াকওয়ে নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য।

নির্মল পরিবেশে নগরবাসীর হাঁটাচলার জন্যই সিলেট সিটি করপোরেশন নির্মাণ করেছিল ওয়াকওয়েটি, কিন্তু নির্মাণের পরই ওয়াকওয়ে ইজারা দিয়ে দেয় সিটি করপোরেশন। আর ইজারাদার এখানে দোকান বসিয়ে দেয়ায় আর হাঁটাচলার সুযোগ পাচ্ছেন না কেউ। ফলে ওয়াকওয়ে পরিণত হয়েছে ওয়াকবাজারে।

একই চিত্র নগরের ধোপাদীঘির পাড় ওয়াকওয়ের। এটিও ইজারা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এখানেও বসানো হয়েছে দোকান। প্রবেশের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ফি।

সিলেট নগরের ফুটপাতগুলো দখল হয়েছে আগেই। হকারদের কারণে ফুটপাতে আর হাঁটার সুযোগ নেই। হাঁটাহাটি বা শরীর চর্চার জন্য উন্মুক্ত জায়গা নেই বললেই চলে। এই অভাব মেটাতে সিলেট নগরে কয়েকটি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে সিলেট সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৪ সালে নগরের জল্লারপাড় এলাকায় জল্লার (জলাশয়) পাশে ছড়া (প্রাকৃতিক নালা) উদ্ধারের পর ২০১৭ সালে এখানে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পে দখল ও দূষণ ঠেকিয়ে ৯০০ ফুট দীর্ঘ একটি হাঁটার পথ তৈরি করা হয়। ২০১৮ সালে ওয়াকওয়ে ও এর আশপাশ ইজারা দেয়া হয়।

সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, ‘জল্লারপাড় ওয়াকওয়ে কমিটি কর্তৃপক্ষ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে বার্ষিক দুই লাখ ৮৫ হাজার টাকায় স্থানটি ইজারা নেয়।

জল্লারপাড় ওয়াকওয়ে কমিটি সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত স্থানটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে। রাত ১২টা পর্যন্ত মানুষ এখানে ভিড় করেন। প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার দর্শনার্থী এখানে আসেন, তবে ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার এখানে পাঁচ থেকে সাত হাজার মানুষ আসেন।

একইভাবে ২০১৮ সালের নগরের ধোপাদীঘির পাড়ে ‘ধোপাদীঘি এরিয়া ফর বেটার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড বিউটিফিকেশন’ নামে প্রকল্প গ্রহণ করে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ শুরু হয়। ভারতীয় দূতাবাসের অর্থায়নে ২০২০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

প্রকল্পের অধীনে নোংরা দুর্গন্ধময় পরিত্যক্ত দীঘিকে অপরূপ সৌন্দর্যে সাজিয়ে তোলা হয়। দীঘির চারদিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়। বসার জন্য বেঞ্চ আর পুকুরে নামার জন্য দৃষ্টিনন্দন ঘাট নির্মাণ করা হয়। গত বছর এটি উদ্বোধন করা হয়, তবে এই ওয়াকওয়েও ইজারা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। ইজারাদাররা বসিয়েছে দোকান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৬০ লাখ টাকা চুক্তিতে ধোপাদীঘির পাড়ের ওয়াকওয়েটি ইশান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে পাঁচ বছরের জন্য ইজারা দেয় সিটি করপোরেশন। ইজারা নেয়ার পর ওয়াকওয়ের ভেতরে বিভিন্ন খাবারের অন্তত ১০টি দোকান বসিয়েছেন তারা।

ওয়াকওয়েতে প্রবেশে সবার কাছ থেকে ফি নেয়া হয়। বিকেল হলেই এখানে ভিড় করেন তরুণ-তরুণীরা। আড্ডা, সেলফি তোলার হিড়িক, টিকটক ভিডিও তৈরির জন্য এখানে জড়ো হন তারা। আর ফলে নগরের সাধারণ মানুষ হাঁটাহাটির সুযোগ মিলে না এ ওয়াকওয়তে।

ওয়াকওয়েগুলো ‘ওয়াকবাজারে’ পরিণত করায় ক্ষোভ জানিয়ে সম্প্রতি ধোপাদীঘির পাড় ওয়াকওয়েতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।

তিনি বলেন, ‘সিলেট নগরীর ধোপাদিঘি পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মিত হয়েছে নগরবাসীর হাঁটাচলার জন্য, কিন্তু এটাকে সিটি করপোরেশন ইজারা দিয়ে বাণিজ্যিক স্থানে পরিণত করছে। এখানে হাঁটতে এসে দেখি ওয়াকওয়েতে প্রবেশ ফি দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকতে হয়।

‘অল্প কয়েক দিনের মধ্যেই এটিকে লিজ প্রদানের মাধ্যমে, এর ভেতরে চটপটি, ফুচকা, চা এবং জুসের দোকান তৈরি করা হয়, যার ফলে মানুষজন আর ঠিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারে না। দোকানের চেয়ার দিয়ে হাঁটার জায়গা দখল করা হয়েছে।’

তিনি জানান, সিলেট শহরে হাঁটার মতো কোনো জায়গা নেই। যেটা ছিল, সেটাও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নগরবাসীর হাঁটার জন্য একটা সুস্থ পরিবেশ প্রয়োজন।

এ বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে সিলেট জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী সারওয়ার আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘ওয়াকওয়ে কেন বাণিজ্যকভাবে ব্যবহার হবে? আমরা বয়স্ক মানুষদের হাঁটাহাটির জন্য নগরে কোনো জায়গা নেই। ওয়াকওয়ে বানিয়েও সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এটা অন্যায়।’

তিনি অবিলম্বে ইজারা বাতিল করে ওয়াকওয়েটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি জানান।

জল্লারপাড় ওয়াকওয়ে ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের একজন হুমায়ূন বকস।

তিনি বলেন, ‘মানুষের হাঁটাচলার জন্য জায়গা রেখেই ওয়াকওয়ে এলাকায় ২৩টি দোকানকোঠা তৈরি করা হয়েছে। মানুষের হাঁটাচলায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’

ধোপাদীঘি ইজারা নেয়া ইশান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হাসান আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘আমরা দুই মাস আগে এটি ইজারা নিয়েছি। ইজারার সব চুক্তিই আমরা মেনে চলছি। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর এখানকার পরিবেশ আরও উন্নত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ভোর ৫টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত এই ওয়াকওয়ে সবার হাঁটাচলার জন্য উন্মুক্ত থাকে।’

ওয়াকওয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ‘ওয়াকওয়েগুলো ভালোভাবে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ইজারা দেয়া হয়েছে। উন্মুক্ত থাকলে খারাপ লোকদের আড্ডা জমে যেতে পারে। ছিনতাইকারীদের উৎপাত বাড়বে। তাতে পরিবেশ আরও নষ্ট হবে।

‘তখন কেউ এসব স্থানে যাবে না, তবে মানুষের হাঁটাচলার সুযোগ যাতে ব্যাহত না হয়, সেটা ইজারাদারদের বলা হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর