বিয়ে ও গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে বাঁশ দিয়ে সাজসজ্জার কাজ করে পেয়েছিলেন জনপ্রিয়তা। একে কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলেন বাঁশের আসবাবপত্রের কারখানা ‘সিরাজ কুঠিরশিল্প’। সেই কারখানার যাত্রা শুরুর পর থেকে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে কাঠ ও বেতের পাশাপাশি চাহিদা বাড়ছে বাঁশের আসবাবপত্রের।
কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরের আমির হোসেন সিরাজ ২০০৩ সালে ২০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে একজন শ্রমিক দিয়ে বাঁশের আসবাবপত্রের কারখানা শুরু করেন। সেই কারখানায় এখন ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক কাজ করেন বলে জানান উদ্যোক্তা।
উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের শমশেরনগর-কমলগঞ্জ সড়কের পাশে বড়চেগ গ্রামে আমির হোসেন সিরাজের বাঁশের ফার্নিচারের কারখানা।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তিনি নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন বাঁশ-বেতের আধুনিক আসবাবপত্রের কারখানা। গ্রাম থেকেই তিনি সারা দেশসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিক্রি করছেন তার তৈরি বাঁশের আসবাবপত্র। নিজ বাড়িতে বাঁশ দিয়ে দোতলা একটি বাড়িও বানিয়েছেন তিনি।
সিরাজ জানান, তার কারখানায় আধুনিক ডিজাইনের সোফাসেট, খাট, ডাইনিং টেবিল, চেয়ার, আলনা, ড্রেসিং টেবিল, দরজা, জানালা, ফুলের টব, রিডিং টেবিল, টেবিল ল্যাম্প, পেন স্ট্যান্ড বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়।
এ ছাড়া রিসোর্ট, কটেজের ফার্নিচার, হোটেল-রেস্তোরাঁ-অফিসের আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন ধরনের চাহিদাসম্পন্ন আসবাবপত্র তৈরি করে দেয়া হয়।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি নিউজবাংলাকে জানান, সিরাজ তার একান্ত প্রচেষ্টায় এই শিল্প গড়ে তুলেছেন। বাঁশের আসবাবপত্রের দাম তুলনামূলক কম।
তাদের ভাষ্য, মৌলভীবাজার পর্যটন এলাকা হওয়ায় অনেক মানুষ এখানে ঘুরতে আসেন। সিরাজের ফার্নিচার কারখানার আশপাশ দিয়ে শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ হয়ে পর্যটকরা বড়লেখায় মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত দেখতে যান। এ জন্য তার বেচাবিক্রি ভালোই চলছে।
সিরাজ কুটিরশিল্পের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে বাশঁকে ভালোভাবে শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর বাঁশের আকার অনুযায়ী আলাদা আলাদা রাখতে হয়। শুকানোর পর পোকা যেন না ধরে, সে জন্য ওষুধ দিয়ে আবার শুকাতে হয়।
তারা জানান, একটি বড় আসবাব তৈরি করতে তিন থেকে চার সপ্তাহ লেগে যায়। ছোট জিনিসগুলো সবচেয়ে বেশি চলে। বেশির ভাগ মানুষ শখের বসে এগুলো কেনেন। যতদিন যাচ্ছে মানুষ বাঁশের আসবাবপত্রের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
সিরাজ কুটিরশিল্পের স্বত্বাধিকারী আমির হোসেন সিরাজ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন থেকে ২০ বছর আগে শুরু করেছিলাম বাঁশের ফার্নিচারের কারখানা। শুরুতে প্রতিবেশীদের গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে বাঁশের ডেকোরেশন দিয়ে শুরু হয় কাজ। এরপর বাণিজ্যিক ভাবনায় বাঁশের ফার্নিচার তৈরি শুরু করি।
‘প্রথম দিকে সাড়া কম পেলেও গত এক দশক ধরে খুব ভালোই চলছে। শৌখিন মানুষজনের কাছে বাঁশের জিনিসের কদর বেড়েছে।’
আসবাবপত্র তৈরির জন্য বাঁশ কোথা থেকে সংগ্রহ করেন জানতে চাইলে সিরাজ জানান, প্রথমে মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন পাহাড় থেকে বাঁশ সংগ্রহ করেন। পরে এগুলো শুকিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করতে হয়।
তিনি জানান, পর্যটন এলাকা হওয়ায় এখানে দেশি ক্রেতার পাশাপাশি অনেক বিদেশি ক্রেতা আসেন।
এ ছাড়াও তিনি অনলাইনে অর্ডার নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিসে আসবাবপত্র পাঠান। বিদেশেও আসবাবপত্রের চাহিদা আছে।
সব মিলে বছরে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকার আসবাবপত্র বিক্রি হয় বলে জানান সিরাজ। তার ভাষ্য, আসবাবপত্রকে পোকার হাত থেকে বাঁচাতে বিদেশ থেকে আনা এক ধরনের তেলজাতীয় ওষধু ব্যবহার করা হয়। এ কারণে বাঁশের আসবাবপত্রগুলো এখন দীর্ঘস্থায়ী হয় ও অতি সহজে নষ্ট হয় না।
সহযোগিতা পেলে ব্যবসাকে অনেক বড় করার স্বপ্ন রয়েছে সিরাজের।
মৌলভীবাজার বিসিকের উপব্যবস্থাপক বিল্লাল হোসেন ভূইয়া বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গ শিল্পের জন্য ব্যাংক ছাড়া আমরা বড় ঋণ দিতে পারি না, তবে ছোট ছোট ঋণের জন্য আমাদের কাছে আসলে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে পারি। এ ক্ষেত্রে সিরাজ কুঠিরশিল্প সহযোগিতা চাইলে দেয়া হবে।’