বাংলাদেশ বিদ্যুৎ খাতে লাভজনক বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ দিচ্ছে মন্তব্য করে এ খাতের পাশাপাশি অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে বিদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বৃহস্পতিবার ‘ডিইজি সাউথ ইস্ট এশিয়া ক্লায়েন্ট ফোরাম-শেপিং ট্রান্সফরমেশন’ শীর্ষক সম্মেলেনে ইকুইটি ইনফ্রাস্ট্রাকচার সংক্রান্ত সেশনে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ব্যাংকক ম্যারিয়ট মার্কিজ কুইন্স পার্কে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।
ইউএমপিএলের এমডি বলেন, ‘বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য লাভজনক বিনিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ। জ্বালানিকে অগ্রাধিকার খাত বানিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিপুল প্রণোদনা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উভয় ধরনের প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য এ ধরনের প্রণোদনা দিয়েছে সরকার, যা বিপুল লাভজনক বিনিয়োগ সুযোগের দ্বার উন্মোচন করেছে।
‘এ ধরনের বিনিয়োগ কর্মকাণ্ডের জন্য বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি অংশগ্রহণ বৃদ্ধি নীতিমালা, ২০০৮-এর মতো বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ক্রমবিকাশমান বিদ্যুৎ খাতে জনশক্তির চাহিদা পূরণে বিপুলসংখ্যক দক্ষ স্নাতক তৈরি করেছে আমাদের শিক্ষা খাত। ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগকারীদের জন্য দারুণ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো নমনীয় নীতিগত সহায়তা দিচ্ছে।’
জার্মান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন তথা ডিইজির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বিদ্যুৎ খাতের এ উদ্যোক্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে ডিইজির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর। বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শুধু ব্যাপক লাভজনক শিল্পে বিনিয়োগই নয়; তারা একই সঙ্গে লাখ লাখ মানুষের জীবনমান পরিবর্তনের সুযোগ পাচ্ছেন। একই সঙ্গে সৌর, বায়ুবিদ্যুৎ ও বিদ্যুতের অন্যান্য নবায়নযোগ্য উৎসে বিনিয়োগের মাধ্যমে বর্তমান শিল্প পরিসরকে পুনর্বিন্যাসও করতে পারেন বিনিয়োগকারীরা।
‘এ ধরনের প্রচেষ্টায় সাফল্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সমন্বিত পন্থা। এর স্বপক্ষে জোরালো ঐতিহাসিক নজির রয়েছে।’
জার্মানিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিকাশ ও এ থেকে অন্যদের উপকৃত হওয়া নিয়ে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ‘জার্মানিতে চালু হওয়া ফিড-ইন-ট্যারিফ সিস্টেম শুধু দেশটিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন বাড়িয়েই সীমাবদ্ধতা থাকেনি, এটি বর্তমান চীনকেন্দ্রিক সৌর প্যানেল উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সহায়ক হয়।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের যেমন বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রয়োজন, তেমনি বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও বিদ্যুৎ খাতে লাভজনক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বিনিয়োগের সুযোগ দরকার। এটি অংশগ্রহণকারীদের প্রবৃদ্ধি, বৈশ্বিক বাণিজ্য বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করবে। আমরা যৌথভাবে সবার জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমৃদ্ধ ও সহিষ্ণু ভবিষ্যৎ গড়তে পারি।
‘এ লক্ষ্যে আমি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সহায়তা অব্যাহত রাখতে ডিইজিকে স্বাগত জানাই। এটি বাংলাদেশের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, ডিইজি কিংবা অন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য সমলাভের পরিস্থিতি। কারণ আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে আরও গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিতে পারি।’
ডিইজির সিইওর সঙ্গে বৈঠক
সম্মেলনের এক ফাঁকে ডিইজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রোনাল্ড সিলারের সঙ্গে বৈঠক করেন ইউএমপিএলের এমডি ড. চৌধুরী নাফিজ সরাফাত।
বৈঠকে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ঈর্ষণীয় অগ্রগতি ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন তারা। এ ক্ষেত্রে অব্যাহত সহায়তার জন্য ডিইজি সিইওকে ধন্যবাদ জানান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। এ ছাড়া দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তারা।
বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডিইজির জ্যেষ্ঠ পরিচালক (ব্যাংকিং অ্যান্ড জার্মান বিজনেস) পেত্রা কোত্তে, পরিচালক (ইনফ্রাস্ট্রাকচার অ্যান্ড এনার্জি ডেট) লজার রোকেনসহ অনেকে।