চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শাটল ট্রেনের ছাদে চড়ে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় হেলে পড়া গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
এ ঘটনার পর থেকেই উত্তাল চবি ক্যাম্পাস। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ফটকে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। ওই সময় তারা পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালান। পাশাপাশি বক্সের ভেতরের চেয়ারগুলো রাস্তায় এনে জ্বালিয়ে দেন।
রাত ১১টার দিকে উপাচার্য বাসভবনের ভেতরে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙচুর করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরে গিয়ে ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধরা।
পরিবহন দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. নূরুল আবছার বলেন, ‘ভেতরে থাকা সব গাড়িতেই ভাঙচুর চালানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৫০টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। এটা পুরোপুরি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। অধিকাংশেরই কাচ, ফ্লাডলাইট ও বডিতে আঘাত করা হয়েছে।’
সরেজমিনে দেখা যায়, ভেতরে থাকা ২২টি বাস ও ১৬টি মাইক্রোবাস, একটি মোটরবাইক ও প্রক্টরিয়াল টিমের গাড়ি ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে ট্রেন ক্যান্টেনমেন্ট স্টেশন অতিক্রম করার কিছু পর রেললাইনের ওপর হেলে পড়া একটি গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অন্তত ১৬ জন আহত হন।
আহত ব্যক্তিদের স্থানীয় বিভিন্ন স্বাস্থ্য সেবাকেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মৃত্যুর গুজব শুনে ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরাদুর্ঘটনার পরই বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ওই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা কথা ছড়াতে থাকে। বিক্ষোভ চলাকালে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর ছড়ানো হয় ফেসবুকে। এতে আরও ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, দুর্ঘটনায় কেউ মারা যায়নি। যে বিষয়টি ছাড়ানো হয়েছে সেটি গুজব।
চমেক পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) নুরুল আলম আশেক বলেন, ‘শাটল ট্রেনে আহত হয়ে চমেকে ১৬ জন ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে ৮ জন, নিউরো সার্জারি ওয়ার্ডে ৮ জন। মৃত্যুর খবরটি গুজব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই গুজব ছড়ানো হয়েছে।’
জায়গায় জায়গা ভাঙচুর
চবির ফটকে তালা দেয়ার পর পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালানো হয়। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একে একে উপাচার্যের বাসভবন, পরিবহন দপ্তর ও শিক্ষক ক্লাবে ভাঙচুর চালান। ভাঙচুরে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় বাসভবনসহ বিভিন্ন জায়গা।
উপাচার্যের বাসভবনের প্রায় প্রত্যেকটি কক্ষে ঢুকে ভাঙচুর চালান শিক্ষার্থীরা। ওই সময় ফুলের টব থেকে শুরু করে বিভিন্ন আসবাব, ফ্রিজ, টিভি, এসি, ওয়াশিং মেশিন, কক্ষ, লকার, জানালা ভেঙে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। পরে আসবাব বের করে বাসভবনের উঠানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
এরপর পরিবহন দপ্তরে থাকা শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের সবগুলো গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। শেষে শিক্ষক ক্লাবে গিয়েও ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় প্রক্টরের গাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নুরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘উপাচার্যের বাসভবন, শিক্ষক ক্লাব, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসসহ বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুরের ঘটনায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরুপণ করা যায়নি। এ ঘটনার তদন্তে আমরা কমিটি গঠন করব। এই ন্যক্কারজনক ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, বিভিন্ন সময় ট্রেনে বগি বৃদ্ধি ও সূচি বাড়ানোর দাবি জানালেও প্রশাসন আমলে নেয়নি। ট্রেনের ভেতরে জায়গা না থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে ছাদে যাতায়াত করতে হয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের 'ধীরগতি'
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ভাঙচুর শুরু হয় জিরো পয়েন্টে অবস্থিত পুলিশ বক্স থেকে। পরে উপাচার্যের বাসভবন হয়ে শেষে শিক্ষক ক্লাবে গিয়ে ভাঙচুর শেষ হয়।
এ সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। রাত সোয়া একটার দিকে পুলিশ ও র্যাব ক্যাম্পাসে আসে। এর আগেই শিক্ষার্থীরা বিভক্ত হয়ে আন্দোলন থেকে সরে যান।
প্রশাসনের অসতর্কতা ও প্রস্তুতির অভাবে এত ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করছেন চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল হক।
তিনি বলেন, ‘কোনো একটা ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়া দেখায়, কিন্তু প্রশাসনকে এসব মোকাবিলা করার জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকতে হয়।’
প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘মেইন গেটে তালা দেয়া ছিল, তাই পুলিশ ঢুকতে পারেনি। পুলিশ শহর থেকে আসতে দেরি করেছে।’