বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ঋণের সুদ নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ, হাবিপ্রবির রূপালী ব্যাংক ঘেরাও

  • প্রতিনিধি, হাবিপ্রবি   
  • ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ২১:২৩

২০২২ সালের আগস্ট মাসে ঋণগ্রহীতারা জানতে পারেন, তাদেরকে ৯ শতাংশ সরল সুদে যে ঋণ প্রদান করা হয়েছে তা ইএমআই সরল সুদে নয়, বরং চক্রবৃদ্ধি হারে নেয়া হচ্ছে।

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দেয়া ঋণে সরল সুদের পরিবর্তে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেয়ার প্রতিবাদে ক্যাম্পাস শাখা রূপালী ব্যাংক ঘেরাও করেছেন বিক্ষুব্ধরা।

মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত রূপালী ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন ঋণ নেয়া শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ফলে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পরে রূপালী ব্যাংকের রংপুর জোনাল ম্যানেজার আবুল হাসান ব্যাংকে এসে বিক্ষোভকারী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় ও রূপালী ব্যাংকের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মধ্যে ২০০ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি হয়। এই চুক্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে স্বাক্ষর করেন তৎকালীন রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল আলম এবং রূপালী ব্যাংকের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ব্যবস্থাপক পবিত্র কুমার রায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮০জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী ওই চুক্তির আওতায় ৯৭ কোটি টাকা ঋণ নেন। যাদের মধ্যে এই ঋণ প্রদান করা হয়েছিল তাদেরকে জানানো হয়েছিল যে, ঋণের টাকা ৯ শতাংশ সরল সুদে ১৮০টি কিস্তির মাধ্যমে ১৫ বছরে পরিশোধ হবে। এতে প্রতি মাসে প্রতি লাখ টাকায় ১০১৫ টাকা করে ইএমআই (ইক্যুয়াল মান্থলি ইন্সটলমেন্ট) দিতে হবে।

২০২২ সালের আগস্ট মাসে ঋণগ্রহীতারা ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন, তাদেরকে ৯ শতাংশ সরল সুদে যে ঋণ প্রদান করা হয়েছে তা ইএমআই সরল সুদে নয়, বরং চক্রবৃদ্ধি বা অন্য উপায়ে নেয়া হচ্ছে। এরপর তারা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) একই ব্যাংকের একই নিয়মের ৬০ কোটি টাকার ঋণের কাগজপত্র যাচাই করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা এই কারচুপি দেখতে পান। এরপরই ঋণ গ্রহীতারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেন। বিষয়টি জানার পর রূপালী ব্যাংকে চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। চক্রবৃদ্ধি হারে যে টাকা প্রথম থেকে গ্রহণ করা হয়েছে, অতিরিক্ত সেই অর্থ সমন্বয় করার পাশাপাশি ৯ শতাংশ সরল সুদ থেকে ৮ শতাংশ সরল সুদ করার জন্যও বলা হয় এতে। পরে রূপালী ব্যাংক বিষয়টি সমাধান করবে বলে আশ্বস্ত করেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অভিযোগ, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধান করার কথা বলে আসছে গত বছর থেকে। কিন্তু এখনও তাদের কাছ থেকে যে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তি অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে তা ফেরত দেয়া হচ্ছে না।

সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা ২০ দিনের মধ্যে টাকা ফেরত দেয়ার জন্য সময় চান। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের আরও অতিরিক্ত ১০ দিন সময় দেন। কিন্তু ৪ সেপ্টেম্বরের পর্যন্ত টাকা ফেরত না দেয়ায় তারা আলোচনা করে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ব্যাংকের কার্যালয়ের সামনে বসে আন্দোলন করার সিদ্ধান্ত নেন।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক নওশের ওয়ান বলেন, ‘ঋণের বিপরীতে ৯ শতাংশ সরল সুদ নেয়ার কথা থাকলেও আমাদের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ গ্রহণ করা হচ্ছে। আমরা যখন ৮ শতাংশে আসি তখন আমরা রুয়েটের কাগজপত্র দেখে বিষয়টি জানতে পারি। আমাদের কাছ থেকে যে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করা হয়েছে তা দেয়া হচ্ছে না। যদিও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে, টাকা ফেরত দেবে। এটি হয় ভুল, নয়তো কৌশল হতে পারে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুল হাকিম বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করি। সরল সুদের কথা বলে আমাদের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ গ্রহণ করা হচ্ছে। বিষয়টি জানার পর আমরা সমাধান করার কথা বলি। কিন্তু পরে তারা আমাদেরকে এই টাকা ফেরত দেবে না বলে জানিয়েছে। আমি ১৭ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম, এখন হয়েছে ২৩ লাখ টাকা। মাঝখানে যে ৫ বছর কিস্তি পরিশোধ করলাম সেই টাকা কই গেল? চক্রবৃদ্ধি হারে যে টাকা নেয়া হয়েছে সেই টাকা ফেরত চাচ্ছি।’

ভুক্তভোগী বাবলী বলেন, ‘আমাদের যে চুক্তিতে ঋণ দেয়া হয়েছিল তখন বলা হয়েছিল সরল সুদের কথা। কিন্তু ব্যাংক আমাদের কাছ থেকে চক্রবৃদ্ধি হারে টাকা কর্তন করছে। অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য আমাদের এই অবস্থান। আমাদের ন্যায্য টাকা ফেরত দেয়ার দাবি আমাদের।’

মোখলেসুর রহমান বাবু বলেন, ‘২০১৮ সালে আমি ১১ লাখ টাকা ঋণ নেই, প্রতি বছর সাড়ে ১১ হাজার টাকা করে কিস্তি কেটে নেয়া হয়। ৫ বছর পরেও আমার কাছে টাকা পাবে ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ নেয়ার জন্য এই পরিস্থিতি। আমি দেউলিয়া হয়ে গেছি।’

‘কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এ ব্যাপারে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা যাবে না’ বলে জানিয়েছেন রুপালী ব্যাংকের রংপুর বিভাগীয় কর্মকর্তা আবুল হাসান। তবে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানান তিনি।

চুক্তি ও ঋণের বিষয়টি মূলত যেসব বিভাগ বা যাদের ওপর বর্তায় তার মধ্যে রেজিস্ট্রার, অডিট ও হিসাব শাখা। চুক্তিতে স্বাক্ষর করার সময় দায়িত্বরত রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. সফিউল ইসলামের মৃত্যু হয়েছে। সেই সময় থেকে অদ্যাবধি দায়িত্বে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিট শাখার উপপরিচালক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক আমাদেরকে এই টাকা ফেরত দিক এটা আমাদের চাওয়া। যদি ফেরত না দেয়, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। চুক্তির যাবতীয় কাগজপত্র আমরা রেডি করে দিয়েছি, কমিটিতে পর্যবেক্ষণ করানো হয়েছে। এর দায়ভার ব্যাংকের। ব্যাংক আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। একই প্রোডাক্ট রুয়েটে এক কোডে এবং এখানে আরেক কোডে চালানো হচ্ছে।’

এ বিভাগের আরো খবর