ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলার কারণে এক মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর ঘটনায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে নিহতের পরিবারের মধ্যে ব্যাপক মারামারি ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১৮ জন আহত হয়েছেন।
সোমবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের ৪ সদস্যকে পুলিশ হেফাজতে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
রোগীর আহত স্বজনদের অভিযোগ, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বহিরাগত ও মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রনেতারা মিলে তাদের মেরে আহত করেন।
আহতরা হলেন, নিহতের নাতি ২৮ বছর বয়সী আলমগীর বিশ্বাস, ২৫ বছর বয়সী তৌহিদ বিশ্বাস, ১৪ বছরের আলিফ খান ও ১২ বছরের হামজা খান, মেয়ে ৪২ বছর বয়সী জেসমিন, ৫০ বছর বয়সী সাবিনা ইয়াসমিন ও ৩৫ বছর বয়সী রেবেকা সুলতানা মনি। এছাড়া ঘটনার সময় মরদেহের পাশে বসে আহাজারি করতে থাকা তার বয়োবৃদ্ধ স্ত্রী ৮৫ বছর বয়সী হালিমা বেগমকেও ধাক্কা মেরে সিট থেকে ফেলে দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজনরা।
খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছে আহতদের সেখান থেকে সরিয়ে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। আহতদের মধ্যে প্রথম চারজনকে পুলিশ হেফাজতে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতের স্বজনরা জানান, শহরের কমলাপুরনিবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা নয়ন খানকে অসুস্থ অবস্থায় সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দোতালায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।
নয়ন খানের নাতি আলমগীর বিশ্বাস বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে আমার নানার শ্বাস কষ্ট শুরু হলে নার্সদের জানাই। তারা ইমার্জেন্সির চিকিৎসককে জানাতে বলেন। এরপর ইমার্জেন্সিতে কর্তব্যরত চিকিৎসককে রোগীকে ওয়ার্ডে গিয়ে একটু দেখার জন্য এবং পরে ন্যূনতম একটু অক্সিজেন দেয়ার ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাই। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থাই নেননি। কিছুক্ষণ পর এসে দেখি, আমার নানা মারা গেছেন।
‘এসময় ডাক্তারদের সঙ্গে আমাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে আমার মা আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে একটি বাথরুমে আটকে রাখেন। এরপর প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জনের মতো লোক এসে বাথরুম থেকে বের করে আমার ওপর হামলা চালায়।’
অপরদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা আমাদের কাছে অক্সিজেন চেয়েছিল। কিন্তু আমাদের কাছে সরবরাহ করার মতো অক্সিজেন না থাকায় আমরা তাদের বাইরে থেকে অক্সিজেন এনে রোগীকে দেয়ার জন্য একটি স্লিপও লিখে দেই। কিন্তু এতে তারা রাজি না হলে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা আমাদের ওপর হামলা চালায়।
‘হামলায় হাসপাতালের স্টাফ ২৬ বছর বয়সী অর্ণব এবং ইন্টার্ন ডাক্তার মাহমুদুল, মহিন, শাকিব, পাভেল, জাহিদ, সাব্বির ও ফরহাদ, ২৪ বছর বয়সী শামিম, রোকন, শিহাব ও ইসতেফার এবং ২৭ বছর বয়সী এজাজ আহত হন। তারা সকলে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রাবাসে থাকেন।’
এ ব্যাপারে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ওসি এম এ জলিল বলেন, ‘খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। আহতরা শঙ্কামুক্ত। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজনদেরকে থানায় নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের চিকিৎসকগণ মিটিংয়ে বসেছেন। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
এ বিষয়ে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এনামুল হক বলেন, ‘হাসপাতালে প্রতিদিনই কমবেশি ঝামেলা হয়। আমি বর্তমানে ছুটিতে হাসপাতালের বাইরে রয়েছি। তবে গতরাতে একটি মারামারির কথা জানতে পেরেছি। বিস্তারিত জেনে পরবর্তীতে জানানো সম্ভব হবে।’
এদিকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) অমিত দেবনাথকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই তদন্ত কমিটি আগামী তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।