ভারতে ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জের যমুনা, করতোয়া, ইছামতি, বড়াল, ফুলজোড়, হুড়াসাগর নদী ও চলন বিল অঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে। এতে বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে।
জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরে দুই হাজারেরও বেশি পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।সিরাজগঞ্জ পয়েন্টের পর কাজিপুর পয়েন্টেও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে যমুনার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হয়েছে সিরাজগঞ্জের প্রায় ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল।
একই সঙ্গে তলিয়ে গেছে এসব অঞ্চলের আবাদি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার।সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন্যাকবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জে শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে চার সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনার পানি। নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে, তবে পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
জেলার কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। এর ফলে ঘরবাড়ি, কবরস্থান ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের ভাঙন কবলিত মানুষ।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশের ফলে রোপণকৃত ধানের চারা ও বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে কাজিপুর ও সদর উপজেলার ৪৪৫ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রোপা আমন, সবজি, আউশ, বীজতলা, কলা ও আখ।’জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘শনিবার পর্যন্ত জেলার ৪২টি ইউনিয়নে প্রায় এক হাজার ৬৫৭টি পরিবার পানিবন্দি হওয়ার তথ্য ছিল। সেটা রোববার বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজারে। প্রতিদিন পানিবন্দির সংখ্যা বাড়ছে।’
পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৭৪০ মেট্রিক টন জিআর চাল, ১৭ লাখ নগদ টাকা, দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, গোখাদ্যের জন্য পাঁচ লাখ ও শিশুখাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা মজুত আছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। তিনি আরও জানান, পানিবন্দি পরিবারের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ বিতরণ করা হবে।পানি উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রঞ্জিত কুমার সরকার বলেন, ‘যমুনা নদীসহ জেলার ছোট-বড় সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধারণা করছি, পানি বৃদ্ধি পেলেও বড় ধরনের বন্যার সম্ভাবনা নেই, তবে আরও কয়েক দিন যমুনাসহ জেলার অন্যান্য নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহতের আশঙ্কা করছি।’