ক্রাইম ডাটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) সফটওয়্যারের মাধ্যমে মানব পাচারকারীদের তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণ করা হচ্ছে বলে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
তিনি বলেন, মানবপাচারের মত গুরুতর ও সংঘবদ্ধ অপরাধ প্রতিরোধ ও দমনে দেশের অভ্যন্তরে ও দেশের বাইরে মানবপাচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
রোববার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে লিখিত প্রশ্নোত্তর পর্বে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এম. আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান।
তিনি আরও জানান, মানবপাচার সংশ্লিষ্ট অপরাধ বিশেষত নারী ও শিশুদের প্রত্যাবাসন ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশর একটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে। মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন, ২০১২- এ কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, সীমান্ত এলাকায় ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে কঠোর নজরদারি, ভুক্তভোগীদের দ্রুত উদ্ধার, সুরক্ষা ও পুনর্বাসন সহায়তা প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে দেশে বর্তমানে মানব পাচার সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অপরাধ কার্যকরভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো ২০২২ সালে সারাদেশে অভিযান চালিয়ে এক লাখ ৯৩ হাজার ৩৩১ কেজি আইস ও ১৬৭টি এলএসডি জব্দ করেছে। এই সময়ে ২০২২ সালে এক লক্ষ ৩২১টি মামলা এবং এক লাখ ২৪ হাজার ৭৭৫ জন অবৈধ মাদক কারবারীকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ওই সময়ে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৯ পিস ইয়াবা, এক লক্ষ ১৫ হাজার ৩৬৮ কেজি গাঁজা, ৭ লাখ ৬ হাজার ৬১ বোতল ফেন্সিডিল, ৩৩৮ কেজি হেরোইনসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে।
একই প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের নাফ নদী হয়ে আমাদের দেশে এমফিটামিন (ইয়ারা) ও ক্রিস্টাল মেথ (আইস) অনুপ্রবেশ করে। ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মে (আইস) প্রতিরোধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর অধীন টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার সমন্বয়ে ‘টেকনাফ বিশেষ জোন’ স্থাপন করা হয়েছে। সীমান্তে আইসসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের চোরাচালান প্রতিরোধে কঠোর নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এনফোর্সমেন্ট কমিটির সভা ও পরিবীক্ষণ সভাতেও এ সংক্রান্তে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ক্রিস্টাল মেথ (আইস) প্রতিরোধে বিজিবি ও কোষ্ট গার্ড ও সকল সংস্থার সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি
এম. আব্দুল লতিফের আরেক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দি রয়েছে। কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৬৬ জন হলেও বর্তমানে বন্দির সংখ্যা ৭৭ হাগার ২০৩ জন।
যশোর, সিলেট, দিনাজপুর, ফেনী, পিরোজপুর ও মাদারীপুর কারাগার ব্যতীত বর্তমানে দেশের সকল কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত বন্দি রয়েছেন। এরমধ্যে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৭৬৫ জন বন্দি রয়েছেন। এই কারাগারের ধারণ ক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০জন। ঝালকাঠি জেলা কারাগাওে সর্বনিম্ন ১৮৯জন বন্দি রয়েছেন।
একই প্রশ্নে মন্ত্রী জানান, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, খুলনা নরসিংদী ও জামালপুর- এই ৫টি কারাগার নির্মাণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। কারাগারগুলোর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হলে বন্দি ধারণক্ষমতা প্রায় ৫ হাজার জন বৃদ্ধি পাবে।
নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নে দেশের সব কারাগারের লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধু বুক কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। বন্দিদের বিভিন্ন ধরনের ইনডোর খেলাধুলা, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, মেডিটেশন, বই ও পত্র-পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এরপরও কারাভ্যন্তরে অপরাধের কুফল সংক্রান্ত সচেতনামূলক ডকুমেন্টারি বা চলচ্চিত্র নিয়মিত প্রদর্শন করা হয় বলে উল্লেখ করেন তিনি। তা ছাড়া কারা কর্মকর্তা ও কারা পরিদর্শকরা কর্তৃক কারাগার পরিদর্শনকালে মানবিক মূল্যবোধ সম্পর্কিত বিষয়ে আলোকপাত করা হয়।
আওয়ামী লীগের হাজী মো. সেলিমের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গত এক বছরে সীমান্ত হত্যার ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তথাপি সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক নিহতের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ হতে বিএসএফর কাছে লিখিত প্রতিবাদলিপি ও পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে জোরাল প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।