মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে রাজমিস্ত্রীকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এ সময় অপহরণের কাজে ব্যবহৃত দুটি মোটর সাইকেল, হ্যান্ডকাফ ও স্প্রিংয়ের লাঠি উদ্ধার করা হয়।
২০ বছর বয়সী সুজন পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। বৃহস্পতিবার তাকে অপহরণের পর শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় কনস্টেবল লিয়াকত হোসেন লিমনসহ অপহরণে জড়িত আরও চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তার লিমন টঙ্গিবাড়ী উপজেলার কুন্ডেরবাজার ট্রাফিক পুলিশে কর্মরত।
অপর গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- শ্রীনগর উপজেলার উত্তর কামারগাঁওয়ের ফয়সাল খান, দামলা গ্রামের আরিফ হোসেন ও মুজিবুর রহমান শাফিন।
অপহৃত সুজন উপজেলার ব্রাহ্মণ পাইকসা গ্রামের বাসিন্দা।
এ বিষয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার ফুলকুচি গ্রামের হৃদয় মার্কেটের সামনে থেকে পুলিশ পরিচয়ে রাজমিস্ত্রী সুজনকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে তুলে নিয়ে যায় ৬ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্র। সুজনের কাছে মাদকদ্রব্য রয়েছে অভিযোগে হ্যান্ডকাফ পরায় চক্রটি।
অপহরণকারীরা পরে তাকে উপজেলার ছনবাড়ি এলাকায় বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেসওয়ের ফ্লাইওভারের নিচে নিয়ে বাড়ি থেকে মুক্তিপণ এনে দিতে বলে। এ সময় সুজন জানান, ১৬ দিন আগে তার বাবা মারা গেছেন। আর তার মা পিঠা বিক্রি করে সংসার চালান। তাই টাকা দিতে পারবেন না।
টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা সুজনকে মারধর করে। পরে রাত ৯টার দিকে অপহরণকারীরা সুজনের মায়ের কাছে ফোন দিয়ে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
সুজনের মা আনোয়ারা বেগম স্থানীয়দের পরামর্শে বিষয়টি শ্রীনগর থানা পুলিশকে অবহিত করেন।
পুলিশের পরামর্শে আনোয়ারা বেগম টাকা নেয়ার জন্য অপহরণকারীদেরকে সমেষপুর এলাকায় তাদের বাড়ির সামনে আসতে বলেন। বেশ কয়েকবার টালবাহানা করে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তারা মোটর সাইকেলে চড়ে টাকা নিতে পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণ পাইকসা মসজিদের সামনে আসে। এ সময় ওঁৎ পেতে থাকা শ্রীনগর থানা ফয়সাল, আরিফ ও শাফিনকে আটক করে।
পুলিশ তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে ছনবাড়ি এলাকায় আসে। এ সময় লিয়াকত হোসেন লিমনসহ আরও ৩ জন অপহরণকারী পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সুজনের হ্যান্ডকাফ খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়।
শ্রীনগর থানা পুলিশের একটি টিম শনিবার ভোরে ঢাকার দোহার উপজেলার নিকরা গ্রামের নজরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালায়। এ সময় নজরুল ইসলামের ভবনের একটি কক্ষ থেকে পুলিশ কনস্টেবল লিয়াকত হোসেন লিমনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
লিমনের কাছ থেকে বিপি লেখা হ্যান্ডকাফ, স্প্রিংয়ের লাঠি ও অপহরণের কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ।
শ্রীনগর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল তায়বীর বলেন, ‘শনিবার সকালে ৬ জনের বিরুদ্ধে শ্রীনগর থানায় অপহরণ মামলা করা হয়েছে। চারজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।’
সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানা থেকে তথ্য না দেয়া এবং ভিডিও ধারণ করতে না দেয়া প্রসঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, ‘আসলে এটা পুলিশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাই একটু গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। এজন্য ভিডিও ধারণ করতে দেয়া হচ্ছে না। অনেক ব্যাপারে তো আপনাদেরকে ফোন করে জানানো হয় এবং আমরা প্রেস কনফারেন্স করি। এই ঘটনাটা একটু আলাদা।’