ভারতের আসামে ভারী বৃষ্টির প্রভাবে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের প্রভাবে যমুনা নদীতে পানির উচ্চতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্লাবিত হচ্ছে লোকালয় আর ফসলের ক্ষেত। যমুনা তীরবর্তী দুই জেলা সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরে তলিয়ে গেছে কয়েক শ’ গ্রাম। বেড়েছে নদী ভাঙনের তীব্রতা।
সিরাজগঞ্জ অংশে যমুনা বিপদসীমা ছাড়িয়েছে কয়েকদিন আগেই। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ইতোমধ্যে চলনবিলসহ করতোয়া, ইছামতি, বড়াল, ফুলঝোড় ও হুরাসাগর নদী ফুলেফেঁপে উঠেছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার পাঁচটি উপজেলার ৪২টি ইউনিয়নের কয়েক শ' গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজারও পরিবার।
গত কয়েকদিনের পানি বৃদ্ধিতে প্লাবিত হয়েছে সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলার কয়েকশ’ গ্রাম। ছবি: নিউজবাংলা
যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজিপুরে ২০৩ হেক্টর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা না করলেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী-তীরবর্তী পাঁচটি উপজেলার নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন।
বন্যার্তদের ঘর-বাড়িতে পানি ওঠায় দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নেয়ার পাশাপাশি অসহায় পরিবারগুলো ছুটছে অন্যান্য নিরাপদ স্থানের উদ্দেশে।
শনিবার সকালে যমুনার পানি ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধের হার্ড পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
অপরদিকে, কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা।
সিরাজগঞ্জের ছাতিয়ানতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন বুক সমান পানি। ছবি: নিউজবাংলা
বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ৪২টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট, শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে অন্তত ১০ হাজার বানভাসি পরিবার।
বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় ২০৩ হেক্টর জমির আখ, আউশ ও আমন ধান, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল।
অপরদিকে, যমুনায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলসহ নদী-তীরবর্তী এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। ভাঙনের কবলে পড়া গ্রামগুলোর বাসিন্দারা ঘর-বাড়ি ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে।
ভারতের আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনার এ ভয়াল রূপ। ছবি: নিউজবাংলা
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভূঁইয়া জানান, ‘পানি বৃদ্ধির ফলে সিরাজগঞ্জ সদর ও কাজীপুর উপজেলার ২০৩ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে। বাকি ৩টি উপজেলার হিসাব এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে হিসাব বের করার কাজ চলছে।’
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত তিন উপজেলার প্রায় ১ হাজার ৬৫৭টি পরিবার পানিবন্দি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবন্দিদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী বরাদ্দ ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হবে।’
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ভারতের আসামে প্রচুর বৃষ্টিপাতের কারণে যমুনা নদীর পানি প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টার বন্যা-সতর্কীকরণ পূর্ভাবাসে বলা হয়েছে জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। তবে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই।’
এদিকে জামালপুরে যমুনা ছাড়াও ব্রহ্মপুত্রে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।
যমুনা, ব্রহ্মপুত্রের পানি বেড়ে জামালপুরে পানিবন্দি প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ। ছবি: নিউজবাংলা
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে ৩৫ হাজার মানুষ। বন্ধ রয়েছে ২৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ডুবে গেছে ১ হাজার ৩২৮ হেক্টর রোপা-আমনের ক্ষেত।
জেলার যমুনা তীরবর্তী দুটি উপজেলা ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জের নিম্নাঞ্চলে বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। অন্যন্য উপজেলায় নদীর পানি বাড়ায় ফসলি ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘গত ২৪ ঘন্টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যমুনা। তবে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপৎসীমার ২৬১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে বইছে।
জেলা প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে, গত কয়েক দিনে যমুনা নদীর পানি বেড়ে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে দুর্গত এলাকাগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় এক শ টন চাল। এছাড়া দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। দেয়া হয়েছে গোখাদ্য কেনার টাকাও।’