বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বজনহারার আর্তি শুনতে না পেলে পরিণতি শুভ হবে না: মঈন খান

  • নিজস্ব প্রতিবেদক   
  • ৩০ আগস্ট, ২০২৩ ২০:৫৮

‘এইটা আমার বাবা। বাবাকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না। বাবাকে ফিরিয়ে দেন। বাবার ছবি নিয়ে গুম প্রতিরোধ দিবস পালন করতে চাই না। বাবার হাত ধরে বাবা দিবস পালন করতে চাই।’

বাবা পারভেজ হোসেন যখন নিখোঁজ হন তখন মেয়ে আদিবা ইসলাম হৃদির বয়স মাত্র দুই বছর। আদিবার বয়স এখন ১২। ছোট্ট শিশু থেকে আস্তে আস্তে কিশোরী হয়ে উঠছে সে। বাবার স্নেহ ছাড়াই দীর্ঘ ১০টি বছর কেটে গেছে। আজও অপেক্ষা থাকে কখন বাবা ফিরে আসবে। বাবাকে ছাড়া আর এক মুহূর্তও থাকতে চায় না সে।

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে বুধবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বাবাকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানায় হৃদি। গুমের শিকার হওয়াদের স্মরণে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি।

বাবার ছবি দেখিয়ে হৃদি বলল, ‘এইটা আমার বাবা। বাবাকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না। বাবাকে ফিরিয়ে দেন। বাবার ছবি নিয়ে গুম প্রতিরোধ দিবস পালন করতে চাই না। বাবার হাত ধরে বাবা দিবস পালন করতে চাই।’

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বুধবার আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন আব্দুল মঈন খান। ছবি: নিউজবাংলা

নিখোঁজ হওয়ার আগে বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন হৃদির বাবা পারভেজ হোসেন। ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর পারভেজসহ আরও তিন ছাত্রদল নেতা নিখোঁজ হন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর শাহবাগ থেকে কে বা কারা পারভেজকে তুলে নিয়ে যায়। তারপর থেকে তার কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার। তিনি বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন- এ নিয়ে সরকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ কিছু বলতে পারছে না।

গুমের শিকার মাহফুজুর রহমান সোহেলের ছোট্ট মেয়ে সাফা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে, ‘আমার বাবাকে আজকে ১০ বছর ধরে দেখি না। বাবা ছাড়া ভালো লাগে না। আমি খুব কষ্টে আছি। সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া- আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন, আর কিছু চাই না।’

সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলি, হুমায়ুন কবির পারভেজের ছেলে শাহরিয়া, মাজহারুল ইসলাম রাসেলের বড় ভাই লোটাস, মিরাজ খানের স্ত্রী আমেনা আখতার বৃষ্টি স্বজনহীনতার দুঃখ-কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বার বার অশ্রুসজল হয়ে পড়েন।

বিকেল ৩টায় শুরু হওয়া মানববন্ধনে মুখে কালো পতাকা বেঁধে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সড়কের একপাশে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ মানবপ্রাচীর তৈরি করেন। এ সময় গুমের শিকার বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের পরিবারের সদস্যরাও এতে অংশ নেন।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান।

মঈন খান বলেন, ‘গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের আর্তি সরকার শুনতে না পেলে এর পরিণতি শুভ হবে না। কিছুক্ষণ আগে আপনারা দেখেছেন কোমলমতি শিশুরা তাদের বাবার স্মৃতি নিয়ে মাইকের সামনে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে। একজন বলেছে- এই গুম দিবস চাই না, বাবা দিবস ফিরে পেতে চাই। কল্পনা করুন, একটি শিশু কী মর্ম যাতনায় এ কথা বলতে পারে! সরকারকে এর জবাব দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দিক নির্দেশনায় এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রদত্ত কর্মসূচি অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণ নিয়মতান্ত্রিক সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে আমরা এই সরকারকে বিদায় দেব। আমরা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করব ইনশাল্লাহ।

‘দেশে একটি ‍সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, এখানে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। এদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠিত হবে।’

মানববন্ধনে অংশ নিয়ে গুমের শিকারদের পরিবারের সদস্যরা স্বজনকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানান। ছবি: নিউজবাংলা

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, ‘এই সরকার আমাদের ২ হাজার ৭০০ ভাইকে গুম করেছে। এই সরকার গুমের সরকার। রাজপথেই এই সরকারকে সরানোর ফয়সালা করতে হবে।’

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় মানবন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরাফত আলী সপু, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ। মানববন্ধনে তারাও বক্তব্য রাখেন।

গুম দিবস উপলক্ষে বুধবার রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের সব মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা মুখে কালো কাপড় বেধে মৌন মিছিল করেন।

৩০ আগস্ট ‘গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস’। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেশন ফর প্রোটেকশন অব অল পার্সনস অ্যাগেইনস্ট এনফোর্স ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’ সম্মেলনে যে আন্তর্জাতিক সনদ কার্যকর হয়, তাতে ৩০ আগস্টকে গুমের শিকারদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

এ বিভাগের আরো খবর