বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সাড়া ফেলছে ছাত্রলীগের মাদ্রাসাভিত্তিক কার্যক্রম

  • প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়   
  • ৩০ আগস্ট, ২০২৩ ১৭:০০

গত ১৩ জুলাই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে প্রথমবারের মতো মাদ্রাসা বিষয়ক সম্পাদক পদ যুক্ত করা হয়।

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে মাদ্রাসা বিষয়ক সম্পাদক পদ। এই পদের দায়িত্ব পেয়েই পুরোদমে কাজ শুরু করে দিয়েছেন জহিরুল ইসলাম। একের পর এক মাদ্রাসায় যাচ্ছেন তিনি আর সেখানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে দিচ্ছেন ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করেছেন আমাদের বঙ্গবন্ধু শীর্ষক বক্তৃতা প্রতিযোগিতাও। তার মাদ্রাসাভিত্তিক এসব কাজ ইতোমধ্যে বেশ সাড়াও ফেলেছে।

ছাত্রলীগ মাদ্রাসায় কার্যক্রম চালাবে, বিশেষ করে, কওমি বা জামায়াতপন্থী মাদ্রাসায় এটা কিছুটা অকল্পনীয় হলেও সেই কাজটিরই ‍উদ্যোগ নিয়েছেন ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।

গত ১৩ জুলাই ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এই কমিটিতে প্রথমবারের মতো মাদ্রাসা বিষয়ক সম্পাদক পদ যুক্ত করা হয়। আর প্রথমবার যুক্ত করা এই পদে মনোনীত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম। তার সঙ্গে মাদ্রাসা বিষয়ক উপসম্পাদক করা হয় আরও ‍তিনজনকে।

ছাত্রলীগ সুত্র জানায়, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসাসহ জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের অন্তত ১৫০টি মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের কমিটি রয়েছে। তবে এতদিন সেগুলো অগোছালোভাবে চলছিল। এখন সম্পূর্ণ মাদ্রাসা সেক্টরকেই একটি ইউনিটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে।

দায়িত্ব পাওয়ার পর ছাত্রলীগের মাদ্রাসা বিষয়ক সম্পাদকের নেতৃত্বে ধর্ম সম্পাদক সৈয়দ আজিজুল হাকিমসহ এই দুই পদের উপসম্পাদকরা মিলে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের নিয়ে দোয়া মাহফিল, আইসিটি কর্মশালা এবং বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছেন। সর্বপ্রথম তারা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য ঘোষণা করেছেন ‘আমাদের বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় বিজীয়দের জন্য ল্যাপটপসহ দশ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।

আয়োজকরা জানান, পাঁচশ’রও বেশি মাদ্রাসা শিক্ষার্থী এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। প্রতিযোগীরা বক্তৃতার ভিডিও ধারণ করে নিজ নিজ ফেসবুক প্রোফাইল থেকে পোস্ট করেছে। গত ১৩ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত চলে এই প্রতিযোগিতার প্রচারণা। অনলাইনে প্রচারের পাশাপাশি সশরীরের প্রচারের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার টঙ্গী এবং যাত্রাবাড়ী শাখায়, জামেয়া কাসেমিয়া কামিল মাদ্রাসা, নরসিংদীসহ বিভিন্ন মাদ্রাসায় ঢুকে শিক্ষার্থীদের কাছে প্রতিযোগিতার লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিচ্ছে। এছাড়া সারা দেশের প্রায় ১৬০টি মাদ্রাসায় জেলা ও উপজেলা ছাত্রলীগের মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতার পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণা চালানো হয়েছে।

মাদ্রাসা বিষয়ক সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত মাদ্রাসাগুলোই আমাদের প্রথম টার্গেট যেখানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চর্চা, বিশেষ করে, ছাত্রলীগের নাম কখনও উচ্চারিত হয়নি। তাই প্রচারণার অংশ হিসেবে আমরা প্রথমে সেসব মাদ্রাসায় গিয়েছি। পর্যায়ক্রমে আমরা কওমি মাদ্রাসাগুলোতেও যাব। তবে শিক্ষার্থীদের এখনই ছাত্রলীগের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা আমাদের নেই।

‘আমরা তাদের মাঝে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে চাই। তথ্যপ্রযুক্তি-বিজ্ঞানসহ অন্যান্য যেসব ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে রয়েছে, সেসবে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে যুগের সঙ্গে তাল মেলানোর উপযুক্ত করে গড়ে উঠতে আমরা তাদের সহযোগিতা করতে চাই। তাদের বিপদে আমরা পাশে থাকতে চাই।’

জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে জানতে আগ্রহী। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাদের জানার অধিকার রয়েছে, কিন্তু তারা সুযোগ পাচ্ছে না। আমরা তাদের সেই সুযোগ করে দিতে চাই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ করব।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে আমরা একটি মাদ্রাসায় আইসিটি কর্মশালা ও স্মার্ট কর্মসংস্থান মেলাও করেছি। তারা যেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বা শেখ হাসিনার মতো দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিতে পারে, সেভাবে আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিতে চাই। তবে কেউ যেন তাদের শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করতে না পারে, সেদিকে আমরা খেয়াল রাখব।’

মাদ্রাসায় কার্যক্রম চালাতে কোন বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কি না- জানতে চাইলে জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘না, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা সবাই আমাদের প্রতি আন্তরিক ছিল। তবে তা’মিরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার যাত্রাবাড়ি শাখায় প্রচারণা চালানোর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের পরবর্তীতে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়া হয়। তবে এটাকে আমরা তেমন আমলে নেইনি। এছাড়া, জামেয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসায়ও নামাজ শেষে মসজিদে বসে আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয়েছি। শিক্ষকরা আমাদের সহযোগিতা করেছেন। কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি।’

জহির বলেন, ‘তবে কয়েকটা ঘটনা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। মাদ্রাসাগুলোতে যখন আমরা যাই তখন শিক্ষার্থীরা নিজ থেকে এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। আমাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্লোগান দিয়েছে। অন্য একটি মাদ্রাসায় আমরা যখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছিলাম, কথার শেষ পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা নিজ থেকে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিচ্ছিল। এটাই আমাদের বড় পাওয়া।’

‘আমরা না বলার পরও শিক্ষার্থীরা ছাত্রলীগ এবং জাতির পিতাকে ভালোবেসে নিজ থেকে স্লোগান দিচ্ছিল। আমরা মনে করি তারা জাতির পিতাকে জানতে চায়, কিন্তু সে সুযোগ তাদের দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের এই আগ্রহ তাদের নিয়ে কাজ করতে আমাদের শক্তি যুগিয়েছে’ যোগ করেন জহিরুল।

আগামী ১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় ছাত্রলীগের ‘স্মরণকালের সর্ববৃহৎ’ ছাত্র সমাবেশে ১০ হাজার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আসবে বলে প্রত্যাশা জহিরুল ইসলামের।

মাদ্রাসায় ছাত্রলীগের প্রচারণা কার্যক্রমের বিষয়ে তা’মিরুল মিল্লাত যাত্রাবাড়ি শাখার অধ্যক্ষ আবু ইউসুফ বলেন, ‘উনারা হয়তো বাইরে প্রচারণা চালিয়েছেন। সেটা উনারা চাইলে করতেও পারেন। তবে ক্যাম্পাসের ভিতর কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আমরা করতে দেই না। ভিতরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা নিষিদ্ধ।’

সার্বিক বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বিশাল অংশ জুড়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা রয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এবং তাদের শিক্ষার মানোন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনেক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। উনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরা মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকব, তাদের শিক্ষার মানোন্নয়নে কীভাবে ভূমিকা রাখা যায়, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। কর্মক্ষেত্রে তাদের আরও কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, তাদের ভবিষ্যত জীবন আরও কীভাবে উন্নত করে তাদের স্মার্ট বাংলাদেশের উপযোগী নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা যায় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর