রাজশাহীর চারঘাটে দুই যুবককে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হবার পর অবশেষে ওই ঘটনায় মামলা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার মোহন আলীর মা নাসিমা খাতুন বাদী হয়ে ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর মামলা করেন।
সোমবার রাতে চারঘাট মডেল থানায় তিনি মামলাটি করেন।
এর আগে টাকা চুরির অপবাদে দুই যুবককে হাত, পা ও চোখ বেঁধে পানিতে চুবিয়ে ও মাটিতে পুঁতে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে এক ছাত্রলীগ নেতা ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। গত ৯ জুলাই ধারণ করা নির্যাতনের একটি ভিডিও ১৮ আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন গণমাধ্যমে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের এ খবর প্রকাশিত হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে ঘটনায় দীর্ঘদিন পর এ ঘটনায় মামলা হলো বলে জানিয়েছেন বাদী।
নির্যাতনের শিকার দুই যুবক হলেন- চারঘাটের শলুয়া ইউনিয়নের ২৫ বছর বয়সী মোহন আলী ও তার প্রতিবেশী ২২ বছর বয়সী মোশাররফ হোসেন মছু। মামলায় শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ, ছাত্রলীগ নেতা মিজানুর রহমান মিজান, মুক্তার হোসেন ও তাদের ৬ সহযোগীসহ মোট ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১ জুলাই দৌলতপুর গ্রামের মানিক আলীর বাড়ি থেকে গরু বিক্রি করা ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা চুরি হয়। নির্যাতনের শিকার মোহন ও মছু টাকা চুরি করেছে- সন্দেহে টাকা উদ্ধারের জন্য মাদক কারবারি মুক্তার, ছাত্রলীগ নেতা শুভ, মিজানসহ তাদের সহযোগীদের দায়িত্ব দেন মানিক। তারা গত ৯ জুলাই সকালে মোহনকে কাঠ মিলে কাজ করা অবস্থায় এবং মছুকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। এরপর টাকা চুরি করার কথা স্বীকার করাতে মোহনকে হাত-পা বেঁধে ডোবার পানিতে চুবিয়ে রেখে এবং মছুকে মাটিতে পুঁতে সারাদিন নির্যাতন করে। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানোর চেষ্টা করলে তাদের হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এরপর গত ১৮ আগস্ট পলক নামের এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডি থেকে ভিডিওটি প্রকাশ হলে মুহূর্তেই তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ওই ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পুকুরের হাঁটু পানিতে হাত-পা বেঁধে মোহনকে ফেলে রাখা হয়েছে। পানির মধ্যে একটি খুঁটির সঙ্গে তাকে বেঁধে রাখা হয়। মাঝে মাঝে চেষ্টা করে মাথা তুলে শ্বাস নিচ্ছে সে। আর পাশে একজন দাঁড়িয়ে দেখছে এবং আরেকজন স্বীকারোক্তি আদায় করতে ভিডিও করছে।
পুলিশ জানায়, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার মাসখানেক আগেই জানতে পারে পুলিশ। এরপর নির্যাতনের শিকার দুই যুবকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানায় লিখিত অভিযোগ করতে রাজি না হওয়ায় চারঘাট মডেল থানা পুলিশ নিজেরা একটি জিডি করে রাখে। এরপর ১৮ আগস্ট ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসন ঘটনাটি নিয়ে আবারও নতুন করে ভুক্তভোগীদের মামলা করতে উৎসাহ দেয়।
ঘটনার দেড় মাস পর মামলার বিষয়ে বাদী নাসিমা খাতুন বলেন, ‘আমার ছেলেকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। ঘটনার এতদিন পর এখনও তার শরীর অকেজো হয়ে আছে। ঘটনার সময় মামলার করার সাহস ছিল না। এখন প্রশাসন এসে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এজন্য দেরিতে হলেও মামলা করেছি। আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এ বিষয়ে রাজশাহীর চারঘাট সার্কেলের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, ‘ঘটনার পর ভুক্তভোগীরা থানায় মামলা করতে রাজি হয়নি। পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে তাদের বারবার অনুরোধ জানানোর পর সোমবার থানায় এসে এজাহার দায়ের করলে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’