করোনা মহামারিসহ নানা বাস্তবতায় এখন আর্থিক চাপে সরকার। একদিকে ডলারের সংকট, অন্যদিকে কাচাঁমালের দাম বাড়ায় প্রকল্প ব্যয়ও বেড়েছে বেশ খানিকটা। তবে সেসব অজুহাতে উন্নয়ন প্রকল্পে অতিরিক্ত ব্যয় না বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে সভাপতিত্ব করার সময় তিনি এমন নির্দেশনা দেন। পাশাপাশি প্রকল্পগুলো বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে শেষ করার ওপরও তিনি জোর দিয়েছেন বলে একনেক-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়া সরকারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ বলে মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। এসময় প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা বিভাগের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে আমলাতন্ত্র নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ জানিয়েছেন বলে এসময় উল্লেখ করেন পরিকলল্পনামন্ত্রী। বলেন, ‘গেল কয়েক বছরে মহামারি ও নানা বাস্তবতায় সরকারি কর্মকর্তারা যেভাবে কাজ করেছেন তা প্রসংশার দাবি রাখে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রিকস সম্মেলনে বাংলাদেশকে সফলভাবে তুলে ধরায় একনেকের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে।’
এসময় ব্রিকসের সদস্যপদ না পাওয়া নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন ব্রিকসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।’
সদস্যপদ পেতে আরও কিছু প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে ব্রিকস ব্যাংক অর্থাৎ নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ১ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা বাংলাদেশ কিনে নিয়েছে বলেও জানান এম এ মান্নান।
সেই ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ কোনো ঋণের আবেদন করবে কি না- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোনো সময় ঋণ নেয়া যাবে ব্রিকস ব্যাংক থেকে।’
তবে কবে কখন ঋণের জন্য বাংলাদেশ আবেদন করবে তা স্পষ্ট করেননি মন্ত্রী।
অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তার নাম এখনও মূল্যস্ফীতি স্বীকার করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘চলতি মাস শেষেই কিছুটা কমে আসতে পারে নিত্যপণ্যের দাম।’
সংকটের মধ্যেও শ্রীলংকা কিংবা পাকিস্তানে মূল্যস্ফীতি কমে আসছে, বাংলাদেশ কেন পারছেনা?- প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘পাকিস্তানে এখনও মূল্যস্ফীতি ২০ শতাংশের ঘরে, শ্রীলংকাতে কিছুটা কমে আসলেও তা সহনীয় নয়, বাংলাদেশও ধীরে ধীরে কমে আসবে।’
সারা বিশ্বব্যাপী স্লুইস গেট ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশ কেন পারছে না?- প্রশ্নে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষ জনবলের ঘাটতির পাশাপাশি সচেতনতা কম থাকা এর জন্য দায়ী।’
একনেক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির সঠিক হিসাব বের করতে নিখুঁতভাবে ‘অর্থনৈতিক সুমারি’ করবে পরিসংখ্যান ব্যুরো।
মঙ্গলবারের একনেক বৈঠকে মোট ২০টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। যেখানে মোট ব্যয় হবে ১৪ হাজার ৭৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৪০৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যাবে ১ হাজার ৪৯ কোটি ৪ লাখ টাকা আর বাকি ৬১৯ কোটি ৩৮ লাখ সংস্থান হবে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে।’