নওগাঁর বদলগাছীতে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ তুলে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর এক গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে মাথায় ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় মাতব্বদের বিরুদ্ধে।
সোমবার দুপুরে উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের গয়েশপুর বাঁশপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
গ্রামের লোকজনের উপস্থিতিতে গৃহবধূর বাড়ির আঙিনায় এক পুরহিতকে ডেকে এনে তার মাথা ন্যাড়া করার পর মাথায় ঘোল ঢেলে দেয়া হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন নারীর দাবি, এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে ওই গৃহবধূর অনৈতিক সর্ম্পক ছিল। এ খবর জানাজানি হলে গ্রামের মাতব্বের রায়ে ওই গৃহবধূর মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করা হয়েছে। এই কাজে গৃহবধূর স্বামীরও সম্মতি ছিল।
বিকেলে ওই গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, গৃহবধূ শাড়ির আঁচল দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছেন। প্রতিবেশী নারীরা তাকে ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। এসময় ওই গৃহবধূ দাবি করেন, ‘তিনি কারও সঙ্গে অনৈতিক সর্ম্পক করেননি। গ্রামের মাতব্বের সিদ্ধান্তে আমার মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে ঘোল ঢেলে দিয়েছেন। তবে কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নেই, কিছু বলারও নেই।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই গৃহবধূ দুই সন্তানের জননী। পাশ্ববর্তী সোনারপাড়া গ্রামের কমল হোসেন নামের বিবাহিত এক মুসলিম যুবকের সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১০-১২ দিন আগে নিজের বাড়িতে অনৈতিক সর্ম্পকের সময় গৃহবধূকে তার স্বামী হাতেনাতে ধরে ফেলার অভিযোগ তোলেন। ওই ঘটনার পর গৃহবধূ তার বাবার বাড়িতে চলে যান। গত শনিবার তিনি স্বামীর বাড়িতে ফিরলে গ্রামের মাতব্বরের সিদ্ধান্তে আজ তাকে শুদ্ধ করে স্বামীর ঘরে তোলা হয়।
ওই গ্রামের বাসিন্দা গোবিন্দ সাহা বলেন, ‘আমার কাছে মনে হচ্ছে, ওই গৃহবধূ প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। শুদ্ধ করার এই বিষয়টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নেতা বিমল চন্দ্রের কারণেই হয়েছে। এমন সিদ্ধান্ত গ্রামের আরও কয়েকজন মাতব্বর এক হয়ে দিয়েছিলেন। এর আগে এই গ্রামে মাথা ন্যাড়া করে ঘোল ঢেলে শুদ্ধ করার ঘটনা কখনও শুনিনি।’
এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় মাতব্বর বিমল চন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে খোঁজ নিয়ে জাবারীপুর বাজারে গিয়ে তার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। এরপর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বিষয়টি অবগত করেছি।’
এ ব্যাপারে বদলগাছী উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সভাপতি বৌদ্দনাথ বলেন, ‘বিষয়টি খুবই অমানবিক। এরকম নিয়ম আছে বলে আগে কখনও শুনিনি।’
মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদ রানা বলেন, ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর গৃহবধূকে মাথা ন্যাড়া করে মাথায় ঘোল ঢেলে দেয়ার ঘটনা আমার জানা নেই।’
এ বিষেয়ে বদলগাছী থানার ওসি আতিয়ার রহমান বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’