বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আর কত প্রাণ কাড়বে চসিকের উন্মুক্ত নালা?

চট্টগ্রামে উন্মুক্ত নালায় এমন প্রাণহানির ঘটনা নতুন নয়। এর আগে গত ৭ আগস্ট চট্টগ্রামের নন্দীরহাট এলাকায় জলাবদ্ধ সড়কের পাশের ড্রেনে পড়ে মৃগি রোগাক্রান্ত এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়। তারও আগে ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট নগরীর মুরাদপুরে জলাবদ্ধ সড়কের পাশের উন্মুক্ত নালায় তলিয়ে নিখোঁজ হন সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ। এখনও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।

মাত্রই হাঁটতে শিখেছিল দেড় বছর বয়সী ইয়াসিন আরাফাত। সপ্তাহ দুয়েক আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থেকে তাকে নিয়ে বাবার বাসায় বেড়াতে আসেন মা নাসরিন আক্তার। নাসরিনের বাবার বাসা চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রবাদের রঙ্গিপাড়া এলাকার একটি ভবনের নিচতলায়। সেই বাসার সামনে ৪ থেকে ৫ ফুট প্রস্থের নালা। নালার কিছু অংশে সিমেন্টের স্ল্যাব থাকলেও অধিকাংশই উন্মুক্ত। গেল কয়েক বছরে এই উন্মুক্ত নালায় পড়ে আহত হয়েছেন ওই এলাকার বেশ কয়েকজন।

মূলত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মহেশখালের সংযোগ নালা এটি। কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ এই নালার কিছু কিছু অংশে স্ল্যাব থাকলেও অধিকাংশ স্থানই উন্মুক্ত।

রোবাবর বিকেল চারটার দিকে ওই বাসা থেকে নিখোঁজ হয় শিশু আরাফাত। বাসার সামনে উন্মুক্ত নালার মতো মরণফাঁদ থাকায় সাধারণত শিশুদের নিরাপত্তার জন্য ভবনের প্রধান ফটক বন্ধ থাকে। বন্ধ থাকে নাসরিনের বাবার বাসার দরজাও। কিন্তু রোববার দুর্ভাগ্যক্রমে বাসা ও ভবনের দরজা খোলা ছিল। এতে নাসরিনসহ সবার সন্দেহ হয়, হয়তো নালায় পড়েছে আরাফাত।

খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস রোববার বিকেল পাঁচটা থেকে ওই নালায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেও ব্যর্থ হয়। পরদিন আবর শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। তাতেও মিলছিল না ছোট্ট আরাফাতের খোঁজ। এতে শিশুটি আদৌ নালায় পড়েছে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। তবে সোমবার সকালে ওই নালায় ময়লা পরিষ্কারের সময় তার মরদেহ পায় সিটি করপোরেশনের এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী। নালার স্ল্যাবের নিচে ভবনের প্রধান ফটকের ৫ থেকে ৭ ফুটের মধ্যেই পাওয়া যায় আরাফাতের মরদেহ।

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা গতকাল খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযান শুরু করি। পরে রাত দশটার দিকে অভিযান স্থগিত করা হয়। পরেরদিন সকাল সাড়ে আটটার দিকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করি আমরা। কিছুক্ষণ পর সিটি করপোরেশনের একজন মরদেহটি পেয়ে আমাদের জানান। আমরা সেসময় নালার অন্যদিকে খোঁজ করছিলাম।’

ছোট্ট আরাফাতের এমন মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পুরো এলাকায়। সোমবার দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির সামনে বিষণ্ণ দাঁড়িয়ে আছে সেখানকার ৫ থেকে ১০ বছর বয়সী কয়েকটি শিশু। মাঝেমধ্যেই ছোট্ট আরাফাতকে সঙ্গে নিয়ে খেলত ওরা।

ভবনের নিচতলায় আরাফাতের নানার বাসায় প্রবেশ করতেই দেখা মিলল তার মায়ের। দরজার সামনেই নির্লিপ্ত বসে আছেন তিনি। যেন কী হয়েছে কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। ঘটনার বিষয়ে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘দুপুরের পর ওকে ভাত খাইয়ে আমি খাচ্ছিলাম। তখন আমার ওড়না ধরে ছিল, পরে আমার মা ওকে একটা জগে পানি দিছে, ওখানে (অদূরে একটি জায়গা দেখিয়ে) পানি ফেলতেছিল। দরজাটা খোলা ছিল। আমি মাত্র এক নালা (গ্রাস) খাইছি, ও বাইরে চলে যাচ্ছে। আমার মা কয়- ওরে আনতাম। তখন আমি ভাত ফেলে পুতরে (ছেলেকে) আনতে গেছি। এক-দুই মিনিটের মধ্যে আর পাই নাই।’

‘ভাত যখন মাখতেছি, কান্না করতেছে ওকে দেয়ার জন্য। মানে আমি না খাওয়াইম, ও খাবে। তখন আমার আম্মুর কথা শুনে ভাতগুলো মেখে ওরে দিছি। পরে ভাজি দিয়ে দিছি, ওভাবেই খাইছে।’

শুরুতেই নালায় পড়েছে বলে সন্দেহ করেছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন ‘তখন আমি সন্দেহ করছি নালায় পড়ছে। সবাইকে নালায় নামাইছি। ফায়ার সার্ভিসকে কল দিতে বলছি।’

সিটি করপোরেশনের উন্মুক্ত নালায় একমাত্র ছেলেকে হারালেও কাউকে দোষ দিতে চাননা নাসরিন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের মৃত্যুর জন্য কাউকে দায়ী করতে চাই না। যদি কেউ দায়ী হয়, আল্লাহ বিচার করবে।’

নাসরিনের বোন পাখি আক্তার বলেন, ‘আগে স্বামী-সন্তানসহ নাসরিনও আমাদের এ বাসায় থাকতেন। তবে গেল কোরবানির ঈদে স্থায়ীভবে গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে চলে যান তারা। নাসরিনের স্বামী মাঝেমধ্যে গাড়িচালক হিসেবে কাজ করেন, আবার রাজমিস্ত্রীর কাজও করেন। কিছুদিনের মধ্যে বিদেশ যাওয়ার কথা তার। সপ্তাহ দুয়েক আগে একমাত্র সন্তান ইয়াসিন আরাফাতকে নিয়ে বেড়াতে আসে নাসরিন।’

চট্টগ্রামে উন্মুক্ত নালায় এমন প্রাণহানির ঘটনা নতুন নয়। এর আগে গত ৭ আগস্ট চট্টগ্রামের নন্দীরহাট এলাকায় জলাবদ্ধ সড়কের পাশের ড্রেনে পড়ে মৃগি রোগাক্রান্ত এক কলেজছাত্রীর মৃত্যু হয়। তারও আগে ২০২১ সালের ২৫ আগস্ট নগরীর মুরাদপুরে জলাবদ্ধ সড়কের পাশের উন্মুক্ত নালায় তলিয়ে নিখোঁজ হন সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ। এখনও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এর প্রায় এক মাস পর ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে নগরের আগ্রাবাদ এলাকায় বাসায় ফেরার পথে নালায় পড়ে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সেহেরীন মাহমুদ সাদিয়া। একই বছর নালায় পড়ে নগরীর ষোলশহর এলাকায় এক শিশু ও ২ নম্বর গেইট এলাকায় সিএনজি অটোরিকশাসহ নালায় পড়ে দুই নারী নিহত হন।

এসব ঘটনার পর নগরীর সবগুলো উন্মুক্ত নালায় স্ল্যাব বসানোর ঘোষণা দেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। তবে সেই ঘোষণার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

এ বিভাগের আরো খবর