বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ডিবি কার্যালয়ে খাওয়ানোর ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা, সমালোচনা হয়। এবার ছাত্রদল নেতাদের কাছ থেকে চারটি অস্ত্র উদ্ধারের পর সেই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ডিএমপির ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু ভাতই খাওয়াই না, অস্ত্রও উদ্ধার করি।’
সোমবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘যেখানেই ঘটনা ঘটুক, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে অপরাধীদের আইডেন্টিফাই করে সাধারণ মানুষকে স্বস্থি দেয়ার চেষ্টা করি। অনেকেই মনে করতে পারে, ডিবি একটা ভাতের হোটেল। এতে আমরা ডিমরালাইজড হবো না। এটা আমাদের মানবিক সাইড। আমাদের কাছে অনেক ভুক্তভোগী, সাধারণ মানুষ আসে। আমরা তাদের সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করি। অনেক সময় বিকেল হয়ে গেলে আমাদের অফিসাররা মানবিকভাবে বলে, খেতে পারেন, নাস্তা করতে পারেন। এটা আমাদের মানবিকতা।’
তিনি বলেন, ‘কোনো অস্ত্র ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াবে, আর আমাদের ডিবির টিম বসে থাকবে তা হতে পারে না। আমাদের আইনগত প্রক্রিয়ায় যা যা করা দরকার তা আমরা করবো।’
ছাত্রদলের নেতাদের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারকে ‘দুর্বল স্ক্রিপ্টের নাটক’ বলে অভিহিত করেছে সংগঠনটি। সংগঠনটি বলেছে, ‘ছাত্রদল কলমের রাজনীতি করে, অস্ত্রের রাজনীতি করে না।’
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলছেন, ‘অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার সাতজন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা বলে যদি কেউ বক্তব্য দেন- হয়রানির উদ্দেশ্যে অভিযান, এটা ঠিক না। ডিবি সত্যিকার অর্থে অস্ত্রধারী ও অস্ত্র কারবারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। এটা চলমান থাকবে। অস্ত্রধারীরা কোনো দলের হতে পারে না।’
অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বরং ছাত্রদলের ওই সাত কেন্দ্রীয় নেতাকে দলীয়ভাবে বহিষ্কার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
ডিবি প্রধান বলেন, ‘আমাদের ডিবি পুলিশের ৮টি টিমে অস্ত্র উদ্ধারে আলাদা টিম রয়েছে। সম্প্রতি অস্ত্র উদ্ধারে একটা অভিযান পরিচালনা করে ছয়জনকে অস্ত্র-গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার করে গুলশান গোয়েন্দা বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় কলাবাগান থানা এলাকা থেকে অস্ত্র-গুলিসহ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবুল হাচান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে চারটি অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছাত্রদলের সাত কেন্দ্রীয় নেতাকে।’
হারুন বলেন, ‘তারা ফেসবুকে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কথোপকথন করেছে, তার ছবি আমাদের কাছে রয়েছে। কোন কোন অস্ত্র কোথায় তারা ব্যবহার করবেন। মাসুম নামে একজন ঢাবি ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে বলেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল দখলে ব্যবহার করবেন বলে কথোপকথনে উঠে এসেছে। ছাত্রদলের গ্রেপ্তার নেতারা যে ১১টি অস্ত্র কেনার জন্য অস্ত্র কারবারিদের কাছে অর্ডার করেছে, সেটি প্রমাণিত।’
তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার ছাত্রদলের সাত নেতাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছি, তারা ১১টি অস্ত্রের অর্ডার করেছে। এর মধ্যে আমরা মাত্র চারটি উদ্ধার করতে পেরেছি। আরও ৭টি অস্ত্র এখনও উদ্ধার বাকি রয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।’
নির্বাচন সামনে রেখে সহিংসতার উদ্দেশ্যেই কি অস্ত্র কেনা হচ্ছে?- জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, ‘এটা তো পরিষ্কার। নির্বাচনের ডামাডোল বাজতে আর এক মাস বাকি। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। এ সময়ে ছাত্রদলের গ্রেপ্তার নেতারা ১১টি অস্ত্র সংগ্রহ করলেন, বোমা-বারুদ সংগ্রহ করলেন, মোবাইল ফোনে কথোপকথনে তারা হল দখলের কথা বললেন। কে ব্যবহার করবে সেটাও বললেন, বণ্টন করলেন- এগুলো কিসের আলামত?’
তিনি বলেন, ‘আলামত যাই হোক না কেন, আমরা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে, অবৈধ অস্ত্রধারী যারাই হোক না কেন, তারা যে দলই করুক না কেন, আমাদের ডিবি পুলিশের প্রত্যেকটি টিম প্রত্যেককে আইনগত প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের রিমান্ডে এনে তাদের গডফাদারদের আমরা খুঁজে বের করব ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আমরা সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে চাই।’