ইরাকে বাংলাদেশী এক যুবককে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় তিন নারীসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই ঢাকা জেলার পৃথক অভিযানে বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা ও খুলনা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আলী হোসেন, শামীম, শিরিন সুলতানা, মোহাম্মদ ঘরামী, রবিউল ঘরামী, শাহিদা বেগম, সাহনাজ আক্তার লিপি ও আকবর সরদার।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই হেডকোয়ার্টারে সোমবার সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।
পিবিআই-এর অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া দুই নারী। ছবি: নিউজবাংলা
তিনি বলেন, ‘ইরাকে অবস্থানের সময় ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি সেলিম মিয়ার সঙ্গে ভিকটিম মোসলেম মোল্লার পরিচয় হয়। তিনি ভিকটিমকে ভালো বেতনের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ইরাকে তৎপর বাংলাদেশি দুর্বৃত্ত চক্রের সদস্য আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর ও সাব্বিরদের হাতে তুলে দেন।
‘ভিকটিম মোসলেমকে আসামিরা একটি আবদ্ধ রুমে আটকে রেখে ভিকটিমের সঙ্গে থাকা ২ হাজার ডলার ও দেড় লাখ টাকা মূল্যের একটি আইফোন ছিনিয়ে নেয়। পাশাপাশি ভিকটিমকে নির্যাতন করতে থাকে।
‘দুর্বৃত্তরা তিন দিন ধরে নির্যাতন চালিয়ে সেই দৃশ্য ধারণ করে ইমো অ্যাপের মাধ্যমে লাইভ ভিডিও কলে ভিকটিমের মাকে দেখায় এবং ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। ভিকটিমের মা খতেজা বেগম ছেলেকে নির্যাতনের দৃশ্য সইতে না পেরে আসামিদের পাঠানো ১২টি বিকাশ নম্বরে ২৬টি ট্রানজেকশনের মাধ্যমে ছয় লাখ টাকা দেন।’
ইরাকে নির্যাতন করে দেশে স্বজনদের থেকে মুক্তিপণ আদায় চক্রের আরেক সদস্য। ছবি: নিউজবাংলা
কুদরত-ই-খুদা বলেন, ‘আসামি আনোয়ার, শাহনেওয়াজ, রুহুল আমিন, মনির, হাসিবুর, সাব্বিরসহ চক্রের অন্য সদস্যরা ইরাকে অবস্থান করলেও বাংলাদেশে তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মুক্তিপণের টাকা বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকান ও নিজেদের ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর থেকে ক্যাশ আউট করে নেয়।
পিবিআই-এর এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ভিকটিম মোসলেম মোল্লা নবাবগঞ্জের দড়িকান্দা গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় ভিকটিমের মা বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানার মামলা করেন।
‘গ্রেপ্তারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, এই অপহরণ চক্রের দলনেতা শাহনেওয়াজ। তাদেরকে আদালতে পাঠালে ৬ জন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।’
ভিকটিম মোসলেম মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কাজের উদ্দেশ্যে ২০১৬ সালে আমি ইরাকে যাই। ২০২১ সালে করোনার সময় কর্মহীন হয়ে পড়ি। সে সময় সেলিম মিয়া আমাকে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে একটি চক্রের হাতে তুলে দেয়।
‘তারা আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করে। আমাকে শিকল পরিয়ে আটকে রাখতো। আড়াই মাস পরে শিকল খুলে দিলে একবার ছাদে গিয়ে সূর্যের আলো দেখি। চার মাস পর সেই বন্দি অবস্থা থেকে পালাই।’