ইরাকে বাংলাদেশি এক যুবককে নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ঢাকা জেলা শাখা।
বরিশাল, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মাগুরা ও খুলনা থেকে বিভিন্ন সময় এই আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আলী হোসেন, মো. শামীম, শিরিন সুলতানা, মোহাম্মদ ঘরামী, রবিউল ঘরামী, শাহিদা বেগম, সাহনাজ আক্তার লিপি ও মো. আকবর সরদার।
নির্যাতিত ইরাক প্রবাসী মোসলেম মোল্লা ঢাকার নবাবগঞ্জের দড়িকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০১৬ সালে কাজের উদ্দশ্যে ইরাক যান।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই হেডকোয়ার্টারে সোমবার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই-খুদা।
তিনি বলেন, ‘ইরাকে অবস্থানের সময় ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের ২৩ তারিখ সেলিম মিয়ার সঙ্গে মোসলেমের পরিচয় হয়। সে ভালো বেতনে কাজের লোভ দেখিয়ে তাকে আটককৃতদের হাতে তুলে দেয়। মোসলেমকে নিয়ে আসামিরা একটি আবদ্ধ রুমে আটক করে সঙ্গে থাকা ২০০০ ইউএস ডলার ও একটি দেড় লাখ টাকা মূল্যের আইফোন ছিনিয়ে নেয়।
‘তিন দিন ধরে নির্মম নির্যাতনের পর সেই নির্যাতনের দৃশ্য ইমো অ্যাপের মাধ্যমে লাইভ ভিডিও কলে মোসলেমের মাকে দেখায় এবং মোট ১১ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোসলেমের মা খদেজা বেগম ছেলের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আসামিদের পাঠানো ১২টি বিকাশ নম্বরে ২৬টি লেনদেনের মাধ্যমে মোট ছয় লাখ টাকা দেন। আসামিরা ইরাকে অবস্থান করলেও বাংলাদশে তাদের পরিবারের সদস্যরা এই মুক্তিপণের টাকা বিভিন্ন বিকাশ এজেন্টের দোকান ও নিজেদের পারসোনাল বিকাশ নম্বর থেকে ক্যাশ আউট করে নেয়। শাহনেওয়াজ অপহরণ চক্রের দলনেতা বলে গ্রেপ্তারকৃতরা জানান।’
পিবিআইয়ের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার বলেন, ‘এ ঘটনায় মোসলেমের মা খোদেজা বেগম বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানার মামলা করেন। গ্রেপ্তারকৃত আট আসামিকে আদালতে পাঠালে ছয়জন ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।’
এ বিষয়ে মোসলেম মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০২১ সালে করোনার সময় কাজ হারালে সেলিম মিয়া আমাকে কাজের লোভ দেখিয়ে একটি অপহরণ চক্রের হাতে তুলে দেয়। তারা আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করে।
‘আমাকে শিকল পরিয়ে আটকে রাখত। আড়াই মাস পরে শিকল খুলে দিলে একবার ছাদে গিয়ে সূর্যের আলো দেখি। পরে চার মাস পর পালিয়ে বাঁচি।’