বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

জামালপুরের সর্বশেষ ভাষাসৈনিক 'কায়েস ভাই' আর নেই

  • প্রতিনিধি, জামালপুর   
  • ২৬ আগস্ট, ২০২৩ ২২:০৩

ব্যক্তিগত জীবনে কয়েস উদ্দিন অবিবাহিত ছিলেন। অভাব-অনটনে জীবনযাপন করলেও নিজের নীতি-আদর্শ থেকে কখনও সরেননি এ মহান ভাষাসৈনিক। দীর্ঘদিন অসুস্থ অবস্থায় থাকলেও গ্রহণ করেননি কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা।

স্বপ্ন ছিল অনিয়ম ও অন্যায়ের বেড়াজালে আবদ্ধ বাংলাদেশ হবে দুর্নীতিমুক্ত। তারপরই তৃপ্তির শ্বাস নিয়ে মরতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই জামালপুরের সর্বশেষ জীবিত ভাষাসৈনিক কয়েস উদ্দিন সরকার মারা গেলেন।

‘কায়েস ভাই’ নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন সবার কাছে।

শুক্রবার রাত ১১টার দিকে জামালপুর শহরের গেইটপাড় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বাস করা জীর্ণ ঘরেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল একশ’র বেশি।

কয়েস উদ্দিন সরকারের মৃত্যুতে জামালপুরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে গভীর শোক নেমে এসেছে।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক ইমরান আহমেদ তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

শনিবার সকাল ১০টায় গ্রামের বাড়ি বেলটিয়ায় এ ভাষাসৈনিকের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তার মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেলা ১১টার দিকে জামালপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়।

মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম জানান, ‘অকুতোভয় এ বীরের শেষ ইচ্ছা ছিল, মেডিক্যালের শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য তার দেহ দান করা। এজন্য সর্বস্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ জামালপুর শেখ হাসিনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেয়া হবে।’

পরিবারের সদস্যরা জানান, ব্যক্তিগত জীবনে কয়েস উদ্দিন অবিবাহিত ছিলেন। অভাব-অনটনে জীবনযাপন করলেও নিজের নীতি-আদর্শ থেকে কখনও সরেননি এ মহান ভাষাসৈনিক। দীর্ঘদিন অসুস্থ অবস্থায় থাকলেও গ্রহণ করেননি কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ও বিত্তবান ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে চাইলেও তাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন বিনয়ের সঙ্গে। বসবাস করেছেন জামালপুর শহরের গেইটপাড় এলাকার একটি জীর্ণ ঘরে।

কয়েস উদ্দিন সরকার শোষণ-বঞ্চনা, অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বহু গান রচনা করেছেন। নিজেই তাতে সুরারোপ করে গেয়ে বেড়াতেন গানগুলো। শহরের যেখানেই প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের সভা চলুক না কেন, তিনি থাকতেন প্রথম কাতারে। গানের আবদার করলে মঞ্চে গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখতেন তিনি।

ব্রিটিশবিরোধী চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন তিনি। করেছেন ব্রিটিশ খেদাও আন্দোলন। শৈশবেই বাবাকে হারান, সাংসারিক অভাব-অনটনের কারণে তাই খুব বেশি লেখাপড়া করতে পারেননি। ১৯৫২ সালে জিন্নাহ যখন ঢাকার কার্জন হলে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার ঘোষণা দেন, তখনই শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। কয়েস উদ্দিন যোগ দেন ভাষা আন্দোলনে।

ভাষা আন্দোলন পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতাসংগ্রামী হিসেবে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন তিনি। আইয়ুববিরোধী গান রচনার জন্য আইয়ুব খানের মার্শাল আইনের সময় এক বছর জেলও খাটেন কয়েস উদ্দিন।

কবি ও প্রাবন্ধিক জাকারিয়া জাহাঙ্গীর বলেন, ‘মৃত্যুর পূর্বে ভাষাসৈনিক কয়েস উদ্দিন সরকার দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছিলেন। আমরা তার সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারিনি, এটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। এখন অন্তত তার অবদান ও গৌরবোজ্জ্বল পরিচয়কে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে তুলে ধরে তাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে আমাদের সবার।’

এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ভাষাসৈনিক কয়েস উদ্দিন গবেষণাগার বা জাদুঘর প্রতিষ্ঠাসহ জামালপুর অঞ্চলের ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস সংরক্ষণ জরুরি বলেও তিনি মনে করেন।

জামালপুরের জেলা প্রশাসক ইমরান আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘শনিবার সকাল দশটায় পুষ্পস্তবক অর্পনের মধ্য দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। একজন ভাষাসৈনিক হিসেবে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখবেন, এটাই স্বাভাবিক। আমরা তার চাওয়াকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা জানাই। এ বিষয়ে বর্তমান সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করি, বাংলাদেশ একদিন সম্পূর্ণরুপে দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলায় পরিণত হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর