বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘মোগো ইলিশ মোরা কিন্না খাইত পারি না’

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ স্থানীয় বেশ কিছু বাজার ঘুরে জানা যায়, বিপুল পরিমাণ ইলিশ অবতরণ হলেও এগুলো পাইকার-আড়তদারদের হাত ঘুরে চলে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। খুচরা পাইকারদের হাত ঘুরে বাজারে যেসব ইলিশ আসে, তা স্থানীয় চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে বেশ চড়া দামে এসব ইলিশ কিনতে হয় স্থানীয়দের। এ কারণেই দুলালের মতো ক্রেতাদের শুধু চোখের স্বাদ মিটিয়ে ফিরতে হয় বাজার থেকে।

‘মনকে মন ইলিশ মাছ মোগো ঘাডে ওডে, সব প্যাকেট কইর‌্যা পাইকাররা ঢাকা-চিটাগাং পাডাইয়া দ্যায়। মোগো ইলিশ মোরা টাহাইদ্দাও কিন্না খাইতে পারি না।’ ইলিশ কিনতে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে এসে খালি হাতে ফেরার সময় এভাবেই আক্ষেপ করছিলেন পাথরঘাটা কালমেঘা ইউনিয়নের বাসিন্দা দুলাল।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র বরগুনার পাথরঘাটা। বঙ্গোপসাগর ও আশপাশের নদ-নদীতে ধরা পড়া ইলিশের বেশিরভাগই বিক্রি হয় পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের তথ্যানুসারে, নিষেধাজ্ঞা শেষে ২৪ জুলাই থেকে গত ১৯ অগাস্ট পর্যন্ত ২০২ টন ইলিশ অবতরণ হয়েছে যা থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ স্থানীয় বেশ কিছু বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিপুল পরিমাণ ইলিশ অবতরণ হলেও এসব ইলিশ পাইকার-আড়তদারদের হাত ঘুরে চলে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। খুচরা পাইকারদের হাত ঘুরে বাজারে যেসব ইলিশ আসে, তা স্থানীয় চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ফলে বেশ চড়া দামে এসব ইলিশ কিনতে হয় স্থানীয়দের। এ কারণেই দুলালের মতো ক্রেতাদের শুধু চোখের স্বাদ মিটিয়ে ফিরতে হয় বাজার থেকে।

স্থানীয় বাজারে ইলিশের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় কম থাকায় চড়া দামে জিহ্বার স্বাদ মেটাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। ছবি: নিউজবাংলা

একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার অধীনে পাথরঘাটায় চাকরি করেন জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘পাথরঘাটায় পোস্টিং হওয়ার পর ভেবেছিলাম এখানে কম দামে তাজা ইলিশ কিনে খেতে পারব। কিন্ত বাজারে পছন্দের ইলিশ তো ওঠেই না, যাও আসে দাম ঢাকার সমান। কয়েকবার বিএফডিসি ঘাটে গিয়েছি। ট্রলার থেকে মাছ বিক্রি হয় না। পাশেই আড়ত, সেখানে গেলে চড়া দাম। ঘাট থেকে আড়তে উঠলে কেজিপ্রতি দুই থেকে আড়াইশ’ টাকা বেড়ে যায়। বাজার থেকেও দাম দেখে ফিরে এসেছি।’

পাথরঘাটার কালমেঘা বাজার সংলগ্ন বিষখালী নদীতে ইলিশ শিকারী জেলে আবু হানিফ বলেন, ‘বিষখালী নদীর তীর জুড়ে সবখানেই ছোট ছোট আড়ত আছে। এসব আড়তদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জাল-নৌকা তৈরি করেছেন জেলেরা। বিনিময়ে সারা বছরই আড়তদারদের মাছ দিতে হয়। আড়তদাররা শেডে ভরে পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে নিয়ে সেখানে পাইকারদের কাছে ইলিশ বিক্রি করে। পাইকারদের কাছ থেকে দাদন নেয়ায় স্থানীয় বাজারে কোনো জেলে ইলিশ বিক্রি করতে পারে না।’

পাথরঘাটা বিএফডিসি পাইকার সমিতির সভাপতি মাসুম আকন বলেন, ‘আমরাও বড় বড় পার্টির কাছ থেকে টাকা নিয়ে জেলেদের দাদন দেই। সাগর থেকে জেলেরা মাছ নিয়ে ফিরলে দাদন নেয়া ট্রলার আমাদের কাছে মাছ বিক্রি করে। আমরা আবার ওই পার্টির কাছে মাছ বিক্রি করি। এভাবে নদী তীরের ছোট আড়তের মাছও এখানে চলে আসে এবং চালান হয়। এটা আসলে কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। স্থানীয় বাজারে খুচরা পাইকাররা কিছু ইলিশ বিক্রির জন্য নিয়ে যায়। কিন্ত বড় বড় চালান সব খুলনা-যশোর-ঢাকাসহ দেশের উত্তারাঞ্চলে চলে যায়। এ কারণে চাহিদার ঘাটতি থাকায় স্থানীয় বাজারে ইলিশের দামে একটু প্রভাব পড়ে।’

ইলিশ ধরা নৌকা ও জালের বেশিরভাগ দাদনের টাকায় তৈরি। ফলে দাদনের শর্তানুযায়ী ইলিশ সোজা চলে যায় পাইকারদের কাছে। ছবি: নিউজবাংলা

এ বিষয়ে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরগুনা জেলার সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, ‘স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে ন্যায্যমূল্যে ইলিশ বিক্রির বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত। সরকার চাইলে বিএফডিসির মাধ্যমেই এ কাজটি করতে পারে। নির্দিৃষ্ট রেটে ইলিশের একটি অংশ বিক্রি করতেই হবে- এমন বিধি থাকলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।’

বিএফডিসি পাথরঘাটার সহ-বিনন কর্মকর্তা রিপন হোসেন বলেন, ‘ট্রলার মালিক, জেলে, পাইকার ও আড়তদারদের সঙ্গে দাদনের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। দাদন নেয়ার কারণে ঘাটে আসার পরই শেডে ইলিশের নিলাম তোলা হয়। নিলামের সর্বোচ্চ দামে দাদন দেয়া নির্দিষ্ট আড়তদার ইলিশ কিনে নেন। যে কারণে অবতরণ কেন্দ্রে এসে স্থানীয় ক্রেতাদের ফিরে যেতে হয়। তবে সরকারি নির্দেশনা পেলে ন্যায্য মূল্যে স্থানীয় ক্রেতাদের কাছে ইলিশ বিক্রির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

এ বিভাগের আরো খবর