কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জে একটি অবৈধ কারখানকে সিলগালা করে জরিমানার পরেও রাতের আঁধারে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলার গুনধর ইউনিয়নের কয়রত ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সড়কে’ এমন একটি অবৈধ কারখানা বানিয়েছেন কিশোরগঞ্জ সদরের বয়লা এলাকার বাসিন্দা মুসা মিয়া।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অবৈধ এ কারখানাটি বন্ধের দাবিতে কয়রত ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সড়কে’ গুনধর ইউনিয়ন স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচিতে এমন অভিযোগ করছেন ইউনিয়নবাসী।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, কয়রত ‘রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সড়কে’ আজিজুল ইসলামের জমি ভাড়া নিয়ে অস্থায়ীভাবে ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানা স্থাপন করেছেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বয়লা এলাকার বাসিন্দা মুসা মিয়া। সেখানে তিনি দুইটি চুলা বসিয়েছেন। এ চুলায় যানবাহনের বহু অকেজো ব্যাটারি পোড়ানো হয়। ব্যাটারি ভেঙে সিসা বের করে পানি ও অ্যাসিড আশপাশে ফেলে দেয়া হয়।
এ কারখানা বাহিরের দিক থেকে তালাবদ্ধ থাকলেও বাড়ির দেয়ালের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা রয়েছে। সেখান দিয়েই যাতায়াত করেন তারা। ভেতরে প্রবেশ করতেই বিল্লাল ও আইয়ুব নামে দুই কারিগর বেরিয়ে আসেন। তাদের বাড়ি গাইবান্ধা জেলায়।
তারা জানান, মাসিক বেতনে এখানে এসেছেন। কারখানা মালিক মূসা মিয়ার নির্দেশে রাতের আঁধারে তারা কাজ করেন। এর বাহিরে কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান তারা।
গুনধর ইউনিয়নের বাসিন্দা এস এম মাসুম অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রায় ৭ মাস আগে খয়রত এলাকায় ব্যাটারি পোড়ানোর কারখানাটি স্থাপন করেন মুসা মিয়া। দিনের বেলায় কারখানাটি বন্ধ রাখলেও রাত ১১টার পর থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত পোড়ানো হয় ব্যাটারি। এ থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ মাটি ও পানিতে মিশছে। পাশাপাশি ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে পরিবেশে। গত দুই মাসে বিষাক্ত পানি পানে এলাকার অন্তত ১০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কারখানার পাশে একটি মাদ্রাসা রয়েছে। কারখানাটির ধোঁয়ায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।’
গুণধর ইউনিয়ন স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশনের আহ্বায়ক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘প্রায় দেড় মাস আগে উপজেলা প্রশাসন কারখানাটিকে জরিমানা ও সিলগালা করলেও পরে আবারও চালু করে ব্যাটারি পোড়ানোর কাজ শুরু করেন।’
অবিলম্বে কারখানাটি বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে এলাকাবাসী নিজেরাই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।’
কিশোরগঞ্জ জেলা পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ‘ব্যাটারি পোড়ানোর ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, ফুসফুস, ক্যান্সারসহ শরীরে নানান জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। ওই কারখানার আশপাশে উৎপাদিত শাক-সবজি খেলে মানবদেহে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। গরু, ছাগল ওই এলাকার ঘাস, লতা-পাতা খেলে বিষক্রিয়ায় মারা যেতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ওই কারখানার ধোঁয়া ও ছাই যতদূর যাবে, সেই পর্যন্ত পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হবে। তাই পরিবেশ সুরক্ষায় ব্যাটারি পোড়ানোর এ কারখানাটি উচ্ছেদের কোনো বিকল্প নেই।’
এ বিষয়ে কারখানা মালিক মুসা মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে কারখানাটি কিছুদিন যাবত বন্ধ রেখেছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘জমির মালিকের সঙ্গে টাকা পয়সার কিছু লেনদেন আছে। সেটা ক্লিয়ার হয়ে গেলে সেখান থেকে সকল মালামাল নিয়ে আসবেন।’
প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিলগালা এবং জরিমানার পরেও সেটি কীভাবে পরিচালনা করছেন এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর দেননি মুসা মিয়া।
করিমগঞ্জের উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদা বেগম সাথী বলেন, ‘দেড় মাস আগে এ কারখানাটি সিলগালা করে মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। আমাদের জানা মতে কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। যদি আবারও চালু করে থাকে তবে খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’