বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

৬ বছরেও মিয়ানমারে ফেরানো যাচ্ছে না রোহিঙ্গাদের, শঙ্কায় টেকনাফের স্থানীয়রা

  • প্রতিনিধি, টেকনাফ (কক্সবাজার)    
  • ২৫ আগস্ট, ২০২৩ ২২:০৯

এখন ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা টানতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এসব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে না উদ্যোগ নেয়া হলেও মিয়ানমারের অসযোগিতার কারণে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের ছয় বছরে এসেও একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। এ ছাড়া প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের নানা ছলচাতুরির কারণে হতাশ রোহিঙ্গারা। এতে দিন দিন চরম হুমকির মুখে পড়েছে কক্সবাজারের টেকনাফের স্থানীয় জনগোষ্ঠী।

নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার অজুহাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন নিপীড়ন শুরু করে সে দেশটির সেনাবাহিনী ও মগেরা। এ কারণে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে।

সেই থেকে এখন ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা টানতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এসব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে না উদ্যোগ নেয়া হলেও মিয়ানমারের অসযোগিতার কারণে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়দের উদ্বেগ বাড়ছে

এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে হত্যাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগের শেষ নেই স্থানীয় জনগোষ্ঠীর। তাদের দাবি, দ্রুত প্রত্যাবাসন।

স্থানীরা বলেন, ছয় বছর পূর্ণ হলেও এখনো পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। ভবিষ্যতে যাবে কি না তাও আমরা সন্দিহান। কিন্তু এই ছয় বছরেই রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন এখন চরম হুমকির মুখে। নিজ দেশে স্থানীয়রাই এখন পরবাসী।

তারা বলেন, এ ছাড়া ও রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে একের পর এক খুনোখুনি আমাদের জীবনকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। সরকারের কাছে দাবি জানাই, যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর।

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে পরিকল্পিত পরিকল্পনার দাবি জানান সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিকদার।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে অনেক কাজ পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে না। এমনকি পরিকল্পনাও। যে কারণে স্থানীয়দের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। আমরা এখন রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে আছি। রোহিঙ্গারা একের পর এক নানা অপরাধ সংঘঠিত করছে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে এমন কোনো অপরাধ নেই যা ক্যাম্পে হয় না। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু না হলে একদিন স্থানীয়রাই এখানে রোহিঙ্গা হয়ে যাবে।

মিয়ানমারের ওপর আস্থা নেই রোহিঙ্গাদের

প্রত্যাবাসন নিয়ে মোটেও আস্থা নেই রোহিঙ্গাদের। তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে এটা ওটা বলে সময় ক্ষেপণ করছে মিয়ানমার। বাস্তবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তরিক নয় দেশটি।

রোহিঙ্গা নেতা ডা. জুবায়ের বলেন, ‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলেই মিয়ানমারে কথিত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কোনো কোনো সমস্যাকে সামনে এনে প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করা হয়। মিয়ানমারের এমন ছলচাতুরির কারণে প্রত্যাবাসন আদৌ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়। আমরা আমাদের সব অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু মিয়ানমারের নানা নাটকীয়তার কারণে টেকসই প্রত্যাবাসন হচ্ছে না।’

সাধারণ রোহিঙ্গারা বলছেন, প্রত্যাবাসনের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। কিন্তু তাকে হত্যার পর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও থমকে গেছে।

টেকনাফ লেদা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মো. রফিক বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য নাগরিকত্বসহ বিভিন্ন অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন মুহিব উল্লাহ। কিন্তু তাকে হত্যার পর সবকিছুতেই স্থবিরতা চলে এসেছে।

মুহিব উল্লাহর মতো নেতা আর রোহিঙ্গাদের মধ্যে হবে না, এ কথা জানিয়ে একই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মো.আলম বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলাসহ রোহিঙ্গাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সবকিছুতে মুহিব উল্লাহর সোচ্চার ভূমিকা ছিল। কিন্তু কী হতে কী হয়ে গেল। এখন রোহিঙ্গাদের পক্ষে জোরালোভাবে কথা বলার লোকও নেই। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন আদৌ শুরু করা যাবে কি না সন্দেহ আছে।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মুহাম্মদ আলী জানান, হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, রোহিঙ্গারা করছে না এমন কোনো অপরাধ বাকি নেই।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় দিন দিন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে শঙ্কা বাড়ছে। স্থানীয়দের এমন দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্তি দিতে দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানাচ্ছি।

তবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো তারা যাচাই-বাছাই করছে।

এ বিভাগের আরো খবর