মুক্তা চাষের প্রশিক্ষণে গিয়ে ২৫ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া পরিবারকে খুঁজে পেয়েছেন শাহানারা আক্তার নামের এক উদ্যোক্তা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার এলাকার শাহানারার বৃহস্পতিবার বিকালে মা শিরিনা বেগমের কাছে ফিরে আসেন।
শাহানারা কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার এলাকার মৃত আলী হোসেনের মেয়ে।
শাহানারার পরিবার জানায়, ছয় বছর বয়সে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধুলাসার এলাকা থেকে হারিয়ে যায় শাহানারা। এরপর তার মা শিরিনা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন স্থানে তাকে খুঁজতে থাকেন। কিন্তু সে সময় শাহানারার কোনো সন্ধান পাননি তারা।
এ বিষয়ে ধুলাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফেজ আব্দুর রহিম বলেন, ‘প্রায় এক মাস আগে শাহানারা মৎস্য বিভাগের একটি প্রশিক্ষণে কলাপাড়ায় আসেন। তখন ঝিনুক থেকে মুক্তা চাষের একটি পুকুর পরিদর্শনে ধুলাসারে যান তিনি। গ্রামটি তার চেনা মনে হচ্ছিল। তখন পরিচয় হয় ওই মুক্তাচাষী সদস্য সুজন হাওলাদারের সঙ্গে।
এরপরে সুজন হাওলাদারের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে মা-সহ নিজের পরিবার ফিরে পান শাহানারা। তাদের উভয়ের কথাবার্তা শুনে নিশ্চিত হয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে শাহানারাকে।’
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শাহানারা। ছবি: নিউজবাংলা
চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘শাহানারা বর্তমানে বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার মানিককাঠি গ্রামে বসবাস করছেন। তার স্বামীর নাম আব্দুল খালেক। পেশায় মাছ ব্যবসায়ী। তাদের সংসারে রয়েছে ১৩ বছরের এক মেয়ে ও পাঁচ বছরের এক ছেলে।’
শাহানারা বলেন, ‘কীভাবে তখন বরিশালে গিয়েছিলাম, মনে নাই। তবে এক মহিলা এতিমখানায় দিয়ে গিয়েছিল, সেটা মনে আছে। এরপর ওখানেই বড় হয়েছি। ওই এতিমখানায় আমার নাম মোসাম্মদ ইয়াসমিন। প্রায় ১৬ বছর আগে ওই এলাকার জেলা প্রশাসক আমাকে বিয়ে দেন।’
শাহানারার মা শিরিনা বেগম বলেন, ‘হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে খুঁজি নাই, এমন কোনো জায়গা ছিল না। দিন-রাত কান্না করেছি। আল্লাহ এখন ফিরিয়ে দিয়েছেন। যারা সহায়তা করেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানাই।’
শাহানারার স্বামী আবদুল খালেক বলেন, ’১৬ থেকে ১৭ বছর ধরে বাবুগঞ্জ এলাকায় মাছ ব্যবসা করছি। মাছ ব্যবসা করার সুবাদে মৎস্য প্রশিক্ষণের সময় ইয়াসমিনের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। ভালোই কাটছে আমাগো সংসার। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে আমাদের সংসার।’
খালেক আরও বলেন, ‘ইয়াসমিন এখন মুক্তা চাষ করে নিজেকে স্বাবলম্বী করতে চাচ্ছে। যে কারণে আমি তাকে সার্বিক সহযোগিতা করছি।’
গোটা পরিবারকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা শাহানারা। নতুন করে যেন শাহানারার প্রাণের স্পন্দন ফিরে এসেছে। শাহানারার এমন অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তিতে স্থানীয়রাও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।
শাহানারার বলেন, ‘এ যেন নতুন জীবন ফিরে পেলাম।’