বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আরসায় পাকিস্তানি অস্ত্র, কোন পথে?

  • প্রতিনিধি, কক্সবাজার   
  • ২৫ আগস্ট, ২০২৩ ২০:১১

অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘অস্ত্র দেশি হোক আর বিদেশি, সব অস্ত্রই আমাদের জন্য হুমকি। কিন্তু আরসার মতো একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে পাকিস্তানি রিভলবার মিলেছে মানে এটি বড় হুমকি। উদ্ধার হয়েছে মানে আইশৃঙ্খলাবিহনী সজাগ রয়েছে।’

আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের হাতে বিদেশি অস্ত্র থাকার তথ্য নতুন নয়। তবে আরসার অর্থ সম্পাদক কমান্ডার মাওলানা মোহাম্মদ ইউনূছের হাতে মিলেছে ভিন্ন এক বিদেশি রিভলবার, যার গায়ে ‘মেড ইন পাকিস্তান’ লেখা রয়েছে।

এ বিষয়টি দেখে বোঝার বাকি থাকে না যে, এটি পাকিস্তানি রিভলবার এনপিডি ২.৫। ৮ রাউন্ড গুলি ধারণের সক্ষমতার এ রিভলবার পাকিস্তানি অপরাধীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়।

শুক্রবার বিকেলে আরসার অর্থ সম্পাদক ও শীর্ষ কমান্ডার মোহাম্মদ ইউনূছকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানায় র‍্যাব।

গ্রেপ্তার ইউনূছ আরসার অর্থ সম্পাদক। পাশাপাশি আরসার সামরিক শাখার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কমান্ডার।

বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের তাজনিমারখোলা ক্যাম্প থেকে আরসার অর্থ সম্পাদক কমান্ডার মাওলানা মোহাম্মদ ইউনূছকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে একটি রিভলবার ও ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর র‍্যাব জানায়, ২০১৬ সালে মিয়ানমারে তারাশুখ থানায় আক্রমণ করে মোট ৭০টি একে-৪৭ অস্ত্র লুট করে এবং এটিই তাদের অস্ত্র সরবরাহের মূল উৎস বলে জানিয়েছে। আরসার অন্য সদস্য সমিউদ্দিন (ক্যাম্প-৬) এবং হোসেন (ক্যাম্প-১৭) অস্ত্র ও অ্যামোনিশনের ব্যাপারে বিস্তারিত জানে। এ ছাড়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছোট ছোট অস্ত্র ও অ্যামোনিশন সরবরাহ করে থাকে।

আরসা সদস্যরা অস্ত্রগুলো ক্যাম্পে নিয়ে আসার পর সমিউদ্দিন ও ইউনূছের কাছে জমা রাখে। পরে তাদের অধীনস্থ সব সদস্যদের অস্ত্র বণ্টন করে থাকে। আরসা সন্ত্রাসী সমিউদ্দিন ও জোবায়ের ককটেল বোমা বা বিস্ফোরক তৈরি করে। মিয়ানমারের বুথিডং ও মন্ডু শহরের মাঝে বিভিন্ন ছোট ছোট পাহাড়ে ওস্তাদ খালেদ, সামসু ও হামিদ হোসেন আরসা সদস্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয়। আরসা সদস্যদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো রাউন্ড অ্যামোনিশন বরাদ্দ নেই, তবে বিভিন্ন অপারেশনের আগে বেশি করে অ্যামোনিশন প্রদান করা হয়।

এ ছাড়া মাওলানা ইউনূছের কাছ থেকে আরসা সদস্যদের বিভিন্ন সাংকেতিক শব্দ পাওয়া যায়; KRG/KIG- পাহারাদার গ্রুপ ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সের আরসা সদস্য, G-4- মাস্টার রফিক, L/L. Gan- জোবায়ের (আঙ্গুল বাঁকা) এবং 5.S/5.Star- মাস্টার ইউনূছ।

বর্তমানে আরসার নিকট প্রায় ২০টি টাইপ-৭৪ এলজি, জেআরজি অস্ত্রসহ বিপুল পরিমাণ হাত বোমা (হ্যান্ড গ্রেনেড) রয়েছে। আরসা কমান্ডার সমিউদ্দিনের সাথী রোহিঙ্গা ফরিদ, মোহাম্মদ উল্লাহ এবং ইউসুফসহ অনেকের নিকট অস্ত্র রয়েছে জানিয়েছে র‌্যাব।

কক্সবাজার র‍্যাব-১৫-এর কোম্পানি কমান্ডার এএসপি জামিলুল হক জানান, মাওলানা মোহাম্মদ ইউনূছ আরসার অর্থ শাখার প্রধান। পাশাপাশি সামরিক শাখাতেও তার দাপট রয়েছে। সৌদি, দুবাইসহ বেশ কয়েকটি দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহের তথ্য দিয়েছেন তিনি, যা দিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ, টার্গেট করে প্রতিপক্ষের লোকজনকে হত্যাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে আরসার অর্থ শাখার সদস্য রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে র‍্যাবের এক জেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, এটি পাকিস্তানি রিভলবার এনপিডি ২.৫। এরআগে বহু পিস্তল বা রিভলবার উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের রিভলবার আগে দেখা যায়নি। ৮ রাউন্ড গুলি সক্ষমতার এ রিভলবার পাকিস্তানি অপরাধীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এটির দাম প্রায় দুই লাখ টাকা বলে প্রচলন রয়েছে। যেহেতু আরসার প্রধান কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীর সঙ্গে পাকিস্তানি অপরাধীদের যোগাযোগ থাকার তথ্য মিলেছে। সে হিসেবে তিনি কালোবাজারির মাধ্যমে এ অস্ত্র কিনেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘অস্ত্র দেশি হোক আর বিদেশি, সব অস্ত্রই আমাদের জন্য হুমকি। কিন্তু আরসার মতো একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাতে পাকিস্তানি রিভলবার মিলেছে মানে এটি বড় হুমকি। উদ্ধার হয়েছে মানে আইশৃঙ্খলাবিহনী সজাগ রয়েছে ‘

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসাসহ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর অপরাধ কার্যক্রম নতুন কিছু নয়। এটা আমাদের এ অঞ্চলের জন্যই হুমকি। তাদের দ্রুত সার্ভিলেন্সে আনা জরুরি। না হয় পুরো দক্ষিণ এশিয়ার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনাগুলো ফোর্সিং করে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিষয়টি কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদনেও বলেছে, রোহিঙ্গাদের যদি পুনরায় প্রত্যাবাসন না করা হয়, আজকে আরসা, কাল আরেক গোষ্ঠী- এভাবে ক্যাম্প ঘিরে সন্ত্রাসবাদের সৃষ্টি হবে।

‘যদিও আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ আছে বলেই সন্ত্রাসীরা ধরা পড়ছে। অভিযান কন্টিনিউ করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেয়া যাবে না।’

চলতি বছরের ১৬ জুন বালুখালী ক্যাম্প-১৮ থেকে একটি অটোমেটিক এসল্ট রাইফেল (COLT HARTFORD, USA), একটি পিস্তলসহ ৬টি অস্ত্র, ৫ শ’ রাউন্ড গুলি এবং ৬ হাজার ৩ শ’ ইয়াবা উদ্ধার করে ৮ আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা। এরপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

এ বিভাগের আরো খবর