অনলাইনে এমএলএম, ক্রিপ্টো কারেন্সিতে অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে যারা প্রতারণা করছে, তাদের ব্যাপারে ভুক্তভোগী ও সাধারণ মানুষের কাছে তথ্য চেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অনলাইন প্রতারকদের ব্যাপারে তথ্য চাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়েছে।
এমটিএফই-এর প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসার পর সিআইডি তথ্য চেয়ে এ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান জানান, শুধু এমটিএফই নয়, দেশে এখনও অনেকগুলো অনলাইন প্রতারক চক্র সক্রিয় রয়েছে। তাদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষ যাতে সিআইডিকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করে সে বিষয়ে আহ্বান জানানো হয়েছে।
সিআইডি জানিয়েছে, এমটিএফই; যার পুরো নাম মেটাভার্স ফরেন এক্স চেঞ্জ গ্রুপ ইনকর্পোরেটেড। অনলাইন বা ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ডলার, শেয়ার বা ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচার কানাডা ও দুবাই-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এমটিএফই অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকদের শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানানো হয় এবং লেনদেন পরিচালনা করা হয়। নিজেদের ছায়া প্ল্যাটফরমে ট্রেড করার সুযোগ দিয়ে এই অ্যাপ সম্প্রতি আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে এর কোনো অফিস না থাকলেও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এর কার্যক্রম শুরু হয়। ‘ঘরে বসে সহজে আয়ের পথ’ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউবে ব্যাপক প্রচারণা চলে কিছুদিন। বিভিন্ন ভিডিও ও বিজ্ঞাপন দেখে ভুক্তভোগীরা আকৃষ্ট হয়। সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট হয় একজন আরেকজনকে দেখে। এক্ষেত্রে রেফারেল বা মাল্টিলেভেল মার্কেটিংয়ের মতো কাজ করে। এমটিএফইও এমএলএম পদ্ধতিতে কাজ করেছে। বেশি লাভের আশায় লাখ লাখ মানুষ অ্যাপসটিতে বিনিয়োগ করেছে। কিছু মানুষ অবশ্য লাভের অংশ পেয়েছেও। তবে চূড়ান্ত বিচারে বিনিয়োগের সব অর্থই খোয়াতে হয় গ্রাহকদের।
ঢাকাসহ বরিশাল, নওগাঁ, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, কুমিল্লা এবং সাতক্ষীরাতে প্রতারণার পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সারা দেশে চার থেকে পাঁচ লাখ গ্রাহক এমটিএফই-এর মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা খুইয়েছেন।
গুগল প্লে স্টোর থেকে যে কেউ এমটিএফই অ্যাপটি ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারতেন। রেজিস্ট্রেশনের পর তাদের নিজস্ব ওয়ালেটে ট্রেড করার জন্য ডলার রাখতে হতো। ডলারের পরিমাণ অনুযায়ী তাদেরকে প্রতিনিয়ত প্রলোভন দিয়ে লাভের কথা বলা হতো। ৫০০ ডলার বিনিয়োগ করলে দিনশেষে পাঁচ হাজার টাকা লাভ হবে— এমন কল্পিত মুনাফার কথাও বলা হতো।
রেজিস্ট্রেশনের জন্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দিতে হয়েছে গ্রাহকদের। ভার্চুয়ালি ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ডলার কেনাবেচা করা হলেও লভ্যাংশ দেয়া হতো মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে।
শুধু এমটিএফই নয়, দেশে এখনও সক্রিয় আছে অনিবন্ধনকৃত মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন-ভিত্তিক এ ধরনের প্রতারক চক্র, যেখানে বাংলাদেশের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, এমএলএম ব্যবসা এবং ক্রিপ্টো কারেন্সিতে লেনদেন অবৈধ ও নিষিদ্ধ। অ্যাপস এবং অনলাইন ভিত্তিক যে কোনো ব্যবসায় বিনিয়োগকারীদের এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতনতার দরকার।
সিআইডি সাইবার ইন্টেলিজ টিম এ ব্যাপারে নজরদারি করছে। ভুক্তভোগী গ্রাহকগণ প্রতারক চক্রের তথ্য এবং অভিযোগ জানাতে সিআইডি সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।