বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভেস্তে গেছে সিলেটের হকার পুনর্বাসন উদ্যোগ

  • প্রতিবেদক, সিলেট   
  • ২৫ আগস্ট, ২০২৩ ১৭:৫৯

ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীদের দখলে নগরের ফুটপাত ও সড়কের বেশিরভাহ অংশ; যানজট, দুর্ভোগ। খালি পড়ে আছে হকারদের জন্য নির্মিত অস্থায়ী মার্কেট। পুলিশের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের কারণে ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ মেয়রের।

ফুটপাত দখল সিলেট নগরের অন্যতম প্রধান সমস্যা। শুধু ফুটপাত নয়, নগরের অনেক সড়কেরও বহুলাংশ দখল করে রেখেছেন ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা। ফলে নগরজুড়ে লেগে থাকে যানজট। হাঁটাচলায় প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীদের।

এই দুর্ভোগ লাঘবে ২০২১ সালে হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ওই বছরের জানুয়ারিতে নগরভবন-লাগোয়া লালদিঘীর পাড়ের খোলা মাঠে হকারদের জন্য অস্থায়ী মার্কেট নির্মাণ করে দেয় সিসিক। প্রাথমিক অবস্থায় নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১ হাজার ৭০ জন হকারকে পুনর্বাসন করা হয় ওই মার্কেটে।

তবে দুই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভেস্তে গেছে হকার পুনর্বাসনের এ উদ্যোগ। সিসিক নির্মিত অস্থায়ী মার্কেটে আর বসেন না হকাররা। উল্টো নগরের ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কেরও বহুলাংশও দখল করে রেখেছেন তারা। ফলে দিনভর নগরে লেগে থাকে যানজট।

সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকায় ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কের বহুলাংশও দখল করে আছেন হকাররা। ছবি: নিউজবাংলা

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১২ সালের জানুয়ারিতে লালদিঘীর পাড়ে সিসিকের মালিকানাধীন জরাজীর্ণ মার্কেট ভেঙে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। মহানগর পুলিশের সহযোগিতায় প্রাথমিকভাবে লটারির মাধ্যমে ১ হাজার ৭০ জন হকারকে পুনর্বাসন করা হয় সেখানে। প্রত্যেক হকারের জন্য ৭ ফুট/৩ ফুট জায়গা বরাদ্ধ দেয়া হয়। সিসিকের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানে সবার জন্য বাঁশ ও টিন দিয়ে অস্থায়ী মার্কেটও নির্মাণ করে দেয়া হয়। ক্রেতাদের সুবিধার্থে মাঠে মাছ ও শুঁটকি, সবজি, তৈজসপত্র এবং বিবিধ নামে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে পৃথক লেন করে দেয়া হয়েছে সেখানে। এছাড়া নগরের প্রতিটি ফুটপাতে সাইনবোর্ড টাঙানো হয়- মানুষের চলাচলের জন্য, হকারদের বসা নিষেধ।

প্রাথমিক অবস্থায় এ উদ্যোগের সুফলও পাওয়া যায়। পুনর্বাসনের কিছুদিন জমজমাট ছিল লালদিঘীর পাড়ের অস্থায়ী মার্কেট। এছাড়া নগরের ফুটপাতগুলোও তখন ছিল প্রায় ফাঁকা। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনও নিয়মিত নজরদারি চালাত সেসময়। ফুটপাত দখলমুক্ত করতে চলত নিয়মিত অভিযান।

তবে কিছুদিন যেতেই না যেতেই ফিরে আসে আগের অবস্থা। আবার বেদখল হয়ে যায় ফুটপাত। সিটি করপোরেশনের নজরদারি কমে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে নগর কর্তাদের অভিযোগ, হকারদের সিন্ডিকেট আর পুলিশের অসহযোগিতার কারণে পুনর্বাসনের উদ্যোগ কার্যকর করা যায়নি।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের লালদিঘীর পাড়ে হকারদের পুনর্বাসনের জন্য অস্থায়ী মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ফাঁকা পড়ে আছে পুরো মাঠ। হকারদের বসার জন্য মাঠে নির্মিত অস্থায়ী দোকানগুলোর বেশিরভাগই এখন আর নেই। হাতে গোনা কয়েকটি এখনও টিকে থাকলেও সেগুলো ফাঁকা পড়ে আছে।

মাঠ থেকে কয়েক ফুট এগিয়ে নগরভবনের সামনে এসে দেখা যায়, ফুটপাত ছাপিয়ে বন্দরবাজার-জিন্দাবাজার সড়কের বেশিরভাগ অংশই দখল করে আছেন হকাররা। ফলমুল, সবজি, মাছ, কাপড়, বাসনপত্র, গাছের চারা, বাদাম, ঝালমুড়িসহ নানা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন তারা। সড়কের বহুলাংশ হকাররা দখল করে রাখায় এই সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। আর ফুটপাত দিয়ে পথচারীদের হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই সড়কের মাঝ দিয়ে হাঁটাচলা করছেন। এ কারণে যানজট আরও বেড়েছে।

একই চিত্র দেখা যায়, নগরের তালতলা, নাগরী চত্বর, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, কালিঘাট, লালবাজার, মেডিক্যাল রোড, ধোপাদীঘির পাড়, জিন্দাবাজার, রিকাবিবাজার, লামাবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায়।

সিলেট নগরের বন্দরবাজার এলাকায় ফুটপাত ছাপিয়ে সড়কের বহুলাংশও দখল করে আছেন হকাররা। ছবি: নিউজবাংলা

জিন্দাবাজার এলাকার সিলেট সরকারি অগ্রগামী স্কুলের সামনের সড়কে বাচ্চাদের কাপড় বিক্রি করছিলেন আবুল হোসেন। লালদিঘীর পাড়ে তাকে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। কিছুদিন পরই তিনি সেখান থেকে আবার সড়কে চলে আসেন।

এ প্রসঙ্গে আবুল হোসেন বলেন, ‘যে জায়গায় পুনর্বাসন করা হয়েছিল সেটি সড়ক থেকে একটু ভেতরে। ক্রেতারা সেখানে যেতে চায় না। এছাড়া কিছুদিন পরই সবাই ওই মাঠ ছেড়ে চলে আসে। তাই আমিও চলে এসেছি। লালদিঘীর পাড়ের মাঠ থেকে এখানে ব্যবসা ভালো হচ্ছে।’

হকারদের কারণে নগরের ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন জানিয়ে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ট্রেড লাইসেন্স করে, দোকান ভাড়া করে, ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ব্যবসা করছেন। অথচ হকারদের এসবের কিছুই দিতে হয় না। কিছু মালামাল নিয়ে তারা সড়কে বসে পড়ছে। এতে বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। আর জনজট তো লেগেই আছে।’

পুনর্বাসনরে উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়া প্রসঙ্গে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সবার সহযোগিতা ছাড়া কেবল সিটি করপোরেশনের পক্ষে ফুটপাত দখলমুক্ত করা অসম্ভব। ফুটপাত ও সড়ক দখলমুক্ত রাখার প্রধান দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে নিষ্ক্রিয়। আবার হকারদের একটা সিন্ডিকেট আছে। তাদের পেছনে রাজনৈতিক প্রশ্রয়ও আছে। হকারদের উচ্ছেদ করতে গিয়ে আমি কয়েকবার হামলাও শিকার হয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এই নগরকে সুন্দর পরিপাটি করে রাখার দায়িত্ব সবার। ভালো উদ্যোগে সবাই সহযোগিতা করতে হবে। নগরের বাসিন্দাদেরও সচতেন হতে হবে। তারা যদি ফুটপাত থেকে পণ্য ক্রয় বন্ধ করে দেন তাহলে হকাররা সেখানে বসবে না। কিন্তু আমাদের অভ্যাস হলো, একটু কষ্ট করতে চাই না। সবকিছু হাতের কাছে পেয়ে যেতে চাই।’

তবে অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ‘হকার উচ্ছেদ ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সিটি করপোরেশনকে আমরা সবসময়ই সহযোগিতা করে আসছি।’

এ বিভাগের আরো খবর