বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দিনের আয়ে এক কেজি পাঙ্গাসও কিনতে পারেন না দুলাল

আক্ষেপের স্বরে দুলাল মিয়া বলেন, ‘আয়-রোজগার বাড়ে নাই, তবে দাম বাড়ছে তরকারির। আপনেরা লেখালেখি কইরা দেহেন না দামডা কমাইতে পারেননি। আমার মতো আরও মানুষ আছে মাছ-মাংস খায় না বহুত দিন। কয়ডা ভাত আর একটু তরকারি অইলেই চলে।’

কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে রিকশার অপেক্ষায় ছিলেন দুলাল মিয়া, তবে তার কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই।

রিকশা নিয়ে কাজ হলেও দুলাল মিয়া চালান না যানবাহনটি। সড়কে চলতে চলতে বিকল হয়ে যাওয়া রিকশার ত্রুটি সারিয়ে দেন তিনি।

কুমিল্লার মোগলটুলি এলাকার টেলিগ্রাফ অফিসের সামনে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে দুলালের কর্মস্থল। সেখানেই যন্ত্রপাতি নিয়ে বসে থাকেন।

দুলাল জানান, সারা দিনে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় করেন তিনি। তা দিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনো রকম খেয়ে-পরে বেঁচে আছেন।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে কেমন আছেন জানতে চাইলে দুলাল মিয়া বলেন, গত ছয় মাস ধরে মাছের স্বাদ পাননি। সারা দিন যা আয় করেন, তা দিয়ে চাল আর ডাল কিনে বাসায় চলে যান। তার স্ত্রী অন্যের জমি থেকে হেলেঞ্চা (শাক) কুড়িয়ে এনে রান্না করেন।

দুলালের ভাষ্য, একটু ভালো আয় হলে ডাল আর আলু ভর্তায় দিন পার করেন।

কুমিল্লা হাই স্কুলের পেছনে বাড়ি ছিল দুলালের। পারিবারিক টানাপোড়েনে সেই বাড়ি এখন আর নেই। দুলাল দম্পতির দুই ছেলে ও চার মেয়ে। বড় ছেলে আলাদা থাকে। দুই মেয়েকে দিয়েছেন বিয়ে।

ছোট ছেলে আর ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে চাঁনপুর এলাকায় একটি এক কক্ষের বাসা ভাড়া করে থাকেন এ রিকশার মিস্ত্রি। বাবা-ছেলে মাটিতে বিছানা করে ঘুমান। খাটে থাকেন স্ত্রী ও দুই মেয়ে।

দুলাল মিয়া বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধের আগে রিকশা চালাইছি। পরে রিকশা মিস্ত্রির কাজ শিখছি। এখন এই কাজ দিয়া আয় করি।’

দুলাল মিয়ার সঙ্গে কথা হয় বৃহস্পতিবার বিকেলে। সেদিন তার আয় হয় ১৮০ টাকা। মোগলটুলি থেকে মিনিট পাঁচেকের পথ রাজগঞ্জ বাজার।

ওই বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাঙ্গাস মাছ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। অন্যান্য মাছের দাম কেজিপ্রতি আরও বেশি।

দুলাল মিয়ার এক দিনের আয়ে এক কেজি পাঙ্গাস মাছও কিনতে পারেন না। যদি এক কেজি মাছ কিনেন, তাহলে চাল কিনতে পারবেন না। যদি চাল কিনেন, তাহলে মাছ কেনা সম্ভব হবে না।

আক্ষেপের স্বরে দুলাল বলেন, ‘আয় রোজগার বাড়ে নাই, তবে দাম বাড়ছে তরকারির। এমনে চলতে থাকলে কেমনে কিতা কইরাম।

‘আপনেরা লেখালেখি কইরা দেহেন না দামডা কমাইতে পারেননি। আমার মতো আরও মানুষ আছে মাছ-মাংস খায় না বহুত দিন। কয়ডা ভাত আর একটু তরকারি অইলেই চলে।’

কথাগুলো বলতে বলতে বাড়ির পথে পা বাড়ান দুলাল মিয়া।

এ বিভাগের আরো খবর