ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন আনন্দ কুমার সাহা। সুদসহ সেই ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় তার বন্ধকী জমি নিলামে বিক্রি করে দেয় ব্যাংক। এক কোটি ৬০ লাখ টাকায় ওই জমি কিনে নেন সেলিম রেজা নামে এক ব্যক্তি। এখন সেই জমি আনন্দ কুমার সাহার হয়ে দখলের মিশনে নেমেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) এক কাউন্সিলর। শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচার বিরুদ্ধে উঠেছে এমন অভিযোগ।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, বুধবার সকালে কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম ৭০/৮০ জনের বাহিনী নিয়ে ওই জমিতে গিয়ে সেখানে থাকা সেলিম রেজার সাইনবোর্ড গুড়িয়ে দেন। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে শাহ মখদুম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। থানা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে এই জমির অবস্থান।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর পবাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আনন্দ কুমার সাহা ২০১৭ সালে সিটি ব্যাংকের রাজশাহী শাখা থেকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ নেন। এ জন্য তিনি নিজের নামে থাকা তিনটি স্থানে মোট ০.২১৪৫ একর জমি ব্যাংকে বন্ধক রাখেন।
সুদসহ সেই ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আনন্দ কুমার তা পরিশোধ করতে পারেননি। তিনি ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর বন্ধকী জমি বিক্রি করতে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
২২ ডিসেম্বর প্রকাশ্য নিলামে অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সেলিম রেজা জমিগুলো কিনে নেন। নিলামের পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেলিম রেজাকে জমি বুঝিয়ে দেয়।
সেলিম রেজা জানান, তিনি জমি কেনার পর নিজের নামে নামজারি করে নেন। খাজনাও পরিশোধ করেন। এরপর আনন্দ কুমার সাহা হাইকোর্টে গিয়ে একটি রিট করেন যে তিনি ঋণের টাকা পরিশোধ করতে চান এবং জমি ফেরত চান।
চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানিতে নিলাম বিজ্ঞপ্তিটির ওপর হাইকোর্ট তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয়। একইসঙ্গে আনন্দ সাহাকে চলতি বছরের ৩০ মে’র মধ্যে আগের ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং নিলাম-পরবর্তী সময়ের সুদসহ সমুদয় পাওনা ব্যাংকে জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, আনন্দ সাহা এই সময়ের মধ্যে পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে এই আদেশ খারিজ হবে। তবে এ পর্যন্তও ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করতে পারেননি আনন্দ সাহা।
সেলিম রেজা বলছেন, ব্যাংকে টাকা পরিশোধ না করেই কাউন্সিলরকে নিয়ে জমি দখলে নেমেছেন আনন্দ কুমার সাহা। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকেন বলে সব সময় জমিতে এসে বসেও থাকতে পারছেন না। এ সুযোগে বুধবার তার নিলামে কিনে নেয়া দুটি জমির সাইনবোর্ড গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জমিতে গেলে সমস্যা হবে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে হুমকিও দেয়া হচ্ছে।
রাসিক কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা বলেন, ‘আমার এলাকায় জমিটা নিয়ে গণ্ডগোল আছে। জমিটা দখল হয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমি গিয়েছিলাম। জমির মালিক আনন্দ কুমার সাহার লোকজনই সাইনবোর্ড ভেঙে দিয়েছে।’
তিনি দাবি করেন, যৌক্তিক কারণ আছে বলেই তিনি আনন্দ কুমার সাহার পক্ষে সেখানে গিয়েছিলেন।
যোগাযোগ করা হলে আনন্দ কুমার সাহা দাবি করেন, তিনি ব্যাংকে ঋণের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। সুদের টাকা এখনও বাকি আছে। ঋণের টাকা দিয়েছেন বলেই জমি ‘উদ্ধার’ করতে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার জমি আমি দখলে নেব না তো কে নেবে?’
শাহ মখদুম থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘জমিটা নিয়ে সকালে এক পক্ষ গেলে একটু উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি শান্ত।
‘আনন্দ কুমার সাহা ঋণ পরিশোধ না করার কারণে ব্যাংক তার বন্ধকী জমি নিলাম করে দিয়েছে। আবার আনন্দ হাইকোর্টে গিয়ে ঋণ পরিশোধ করার একটা সুযোগ এনেছেন। তিনি ঋণ পরিশোধ করলে বা না করলে হাইকোর্ট আবার একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। সে পর্যন্ত দুই পক্ষকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।’