সিলেটে মিটারের আওতায় আসছেন জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেডের (জেজিটিডিএসএল) গ্রাহকরা।
ইতোমধ্যে প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় ৫০ হাজার মিটার স্থাপন করা হবে।
গ্রাহকদের মিটারের আওতায় আনার ফলে গ্যাসের অপচয় রোধ হবে ও অতিরিক্ত বিল দেয়া থেকে গ্রাহকরা রেহাই পাবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়াও কয়েক লাখ ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয়ের আশা করা হচ্ছে।
সিলেটে প্রথমবারের মতো আবাসিক পর্যায়ে গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হচ্ছে। দেশে কেবল ঢাকা ও চট্টগ্রামে গ্যাসের আবাসিক সংযোগে প্রিপেইড মিটার রয়েছে।
জেজিটিডিএসএল সূত্রে জানা যায়, একটি চুলায় যেসব গ্রাহকের গ্যাস সংযোগ আছে, সেসব গ্রাহককে জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে মিটার স্থাপন করে দেবে। যেসব গ্রাহকের দুই বা ততধিক চুলায় গ্যাস সংযোগ আছে, তাদের ক্ষেত্রে জালালাবাদ গ্যাসের তালিকাভুক্ত ঠিকাদারদের নিয়োগ করে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করতে হবে।
প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক লিটন চন্দ্র নন্দী বলেন, ‘প্রিপেইড মিটার সংযোগের ব্যাপারে ২০১৯ একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে জমা দেয় জালালাবাদ গ্যাস কর্তৃপক্ষ। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এ প্রকল্প অনুমোদিত হয়। প্রকল্পে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘গ্যাসের প্রিপেইড মিটার স্থাপনের মাধ্যমে একদিকে যেমন গ্যাসের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে গ্রাহকের প্রতি মাসের খরচও কমবে।
‘অনেকে ম্যাচের কাঠি বাঁচাতে অপ্রয়োজনে গ্যাসের চুলা জ্বালিয়ে রাখেন। প্রিপেইড মিটার যুক্ত হলে তারা এ কাজ থেকে বিরত থাকবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই চুলার গ্যাসের জন্য এখন প্রতি মাসে গ্রাহক এক হাজার টাকার ওপরে বিল দিচ্ছেন। মিটার যুক্ত হলে ছোট পরিবারের একজন গ্রাহক এক হাজার টাকায় তিন মাস গ্যাস ব্যবহার করতে পারবেন। মাসে তার খরচ পড়বে ৩০০ টাকার মতো।
‘এ ছাড়া প্রিপেইড গ্যাস মিটার ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকদের মধ্যে গ্যাস ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে ও মনিটরিং ব্যয়ও কমবে।’
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘নিকটস্থ রিচার্জ পয়েন্ট থেকে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে ক্রেডিট কিনে প্রিপেইড মিটার রিচার্জ করা যাবে। রিচার্জ শেষ হলেও এতে ইমার্জেন্সি ব্যালেন্সের সুবিধা থাকবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বারবার গ্যাসের দাম বাড়ার কারণে গ্রাহকরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এতে গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠান দুই পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় গৃহস্থালি পর্যায়ে গ্যাসের অপচয় রোধ ও গ্যাসের কার্যকর ব্যবহারের লক্ষে সিলেটে প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন করা হচ্ছে।
জেজিটিডিএসএলের কর্মকর্তারা জানান, মিটার সংযোগ হলে প্রতিটি আবাসিক গ্রাহকের মাসিক গ্যাস ব্যবহার গড়ে ৬৬ ঘনমিটার থেকে ৪০ ঘনমিটারে নেমে আসবে। ফলে গ্রাহকপ্রতি গ্যাস সাশ্রয় হবে গড়ে ২৬ ঘনমিটার।
বর্তমানে জালালাবাদ গ্যাসের প্রায় ৩ লাখ আবাসিক গ্রাহক রয়েছেন। প্রথম অবস্থায় ৫০ হাজার গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হচ্ছে। এতে মাসে প্রায় ১৩ লাখ ঘনমিটার গ্যাসের ব্যবহার কমবে বলে আশাবাদী কর্মকর্তারা।
জেজিটিডিএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মঞ্জুর আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও গ্যাসের অপচয় স্থায়ীভাবে বন্ধ হবে প্রিপেইড মিটার সংযোগের মাধ্যমে।
‘মিটার সংযোগের সম্পূর্ণ খরচ কোম্পানি দিচ্ছে। এ জন্য কেউ কোনো টাকা দাবি করলে সরাসরি অফিসে অভিযোগ জানাতে হবে।’