ঢাকার সাভারে গভীর রাতে বাড়ির সবাইকে অচেতন করে এক স্কুলছাত্রীকে হাত-পা বেঁধে ও মুখে রুমাল গুঁজে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিশোরীর পরিবারের অভিযোগ, বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার, টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তিন দুর্বৃত্ত।
পরিবারটির ভাষ্য, সাবেক এক ইউপি সদস্যের সঙ্গে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
গত সোমবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার ভাকুর্তা ইউনিয়নের লুটের চর উত্তরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে বলে জানায় পরিবারটি। মঙ্গলবার গভীর রাতে সাভার মডেল থানায় মামলা করেছে কিশোরীর পরিবার।
ওই কিশোরী রাজধানীর বসিলা এলাকায় একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ছে। বাবা, মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে সাভারে থাকে সে।
স্কুলছাত্রীর বড় ভাই বলেন, “আমি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করে চাকরির সন্ধান করছি। বাবা একটি ব্যাংকের প্রাইভেট কার চালান; মা গৃহিণী। আর ছোট বোন স্কুলে পড়ে। সোমবার রাতে আব্বু, আম্মু ও আমার ছোট বোন আগেই ভাত খেয়ে নিছে। পরে খেয়েছি আমি। ভাত খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আম্মু আমারে বলছে, ‘তোর আব্বু যেন কেমন করছে?’ আমার কেন জানি মনে হচ্ছে খাবারে কিছু একটা মেশানো হইছে। পরে আমার বাবার রুমে গিয়ে অনেক নাড়াচাড়া করলেও উনি সাড়া দেন নাই।
“আমি তখন মনে করছি আব্বু অসুস্থতার জন্য হয়তো ক্লান্ত। পরে আমার ছোট বোনের রুমে গিয়ে দেখি, তখনও ফোনের হেডফোন কানে লাগিয়ে ভিডিও দেখতেছে। তখন আমার বোনের ঠোঁটটা একটু ভারভার ও চোখ ঘুমঘুম মনে হচ্ছিল। এমন অবস্থা দেখে আমি যেন জাগতে পারি, সে জন্য কফি বানিয়ে খাই। তারপর আমার রুমে গিয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে কখন যেন ঘুমিয়ে যাই। তখন রাত দেড়টার মতো বাজে।”
তিনি আরও বলেন, ‘পরে সকালে উঠে সব জানতে পারি। আমার বোনের মুখ থেকে শুনেছি। ওরা তিনজন গ্রিল কেটে ঘরে প্রবেশ করে। দুইজন ছিল মধ্যবয়স্ক। তরুণ বয়সের একজন আমার বোনের বেডরুমের দরজার সামনে দাড়িয়ে ছিল। আর দুইজন ওর হাত-পা বেঁধে মুখে রুমাল গুঁজে রেপ করেছে। আলমারি থেকে ২০ হাজার, আমার মানিব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার, প্রায় দেড় ভরি স্বর্ণালংকার আর দুটি মোবাইল ফোনে নিয়ে গেছে।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার বোনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। ওর অবস্থা বেশি ভালো না। আমার আব্বু-আম্মুকেও সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এখানে আমার তো কাছের কোনো রিলেটিভ নাই সাহায্য করার মতো।’
পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘চার বছর আগে সাড়ে চার কাঠা জমি কিনে এক তলা বাড়ি করেছি। আমার আব্বু প্রাইভেট কার চালিয়ে অনেক কষ্টে এই বাড়িটা করেছে, কিন্তু আধা কাঠা জমি আমাদের পাশের জায়গার মালিক হাবিবুল্লাহ দখল করে নিছে।
‘এরপর বিভিন্ন সময় রাতের বেলা আমাদের নানাভাবে উৎপাত করা হতো। এ ঘটনায় আমরা মামলা করার পর থেকে তারা আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ। এসব ঘটনা থেকে আমার মনে হচ্ছে, আমাদের পরিবারের ওপর এমন নির্যাতন পরিকল্পিতভাবেই করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘ভাকুর্তা এলাকায় পরিবারের সবাইকে অচেতন করে লুট ও এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে।
‘ভুক্তভোগীকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়েছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’