সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর স্বজনদের হাতে হেনস্তা ও ভাঙচুরের অভিযোগে ডাকা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
মঙ্গলবার ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বৈঠকের পর বিকেলে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সীমান্ত মজুমদার বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আশ্বাস দিয়েছেন। বুধবার দুপুর ১২টার মধ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দৃশ্যমান উন্নতি হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব আলম ভূঁইয়া। এই সময়ের মধ্যে তা পরিলক্ষিত হলে আমরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেব। এর আগ পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।’
সোমবার বিকেলে হাসপাতালের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রোগী মারা যান। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সদের সঙ্গে রোগীর স্বজনদের কথাকাটাকাটি হয়।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অভিযোগ, রোগীর স্বজনরা ওয়ার্ডে দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সদের হেনস্তা করেন। এসময় চিকিৎসকরা দৌড়ে পাশের ওয়ার্ডে গিয়ে আত্মরক্ষা করেন। এরপর রোগীর স্বজনরা ওয়ার্ডের ভেতরে চিকিৎসক ও নার্সদের কক্ষে ভাঙচুর চালান।
এই ঘটনার প্রতিবাদে রাতে বৈঠক করে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ডাক দেয় ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদ।
হাসপাতালে ভাঙচুর চালানোর ঘটনায় কর্তৃপক্ষ চারজনের নাম উল্লেখ করে সোমবার রাতেই সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেছে তারা। তার আগেই অবশ্য ইন্টার্ন চিকিৎসকের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ চারজনকে আটক করেছে।
আটককৃতরা হলেন- ৫৪ বছর বয়সী আব্দুল মালিক, ২৭ বছর বয়সী জুয়েল আহমদ, ২১ বছর বয়সী সাবেল আহমদ, ২০ বছর বয়সী জুয়েল আহমদ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মামলায় পুলিশ রোগীর এই চার স্বজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। তবে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, সুচিকিৎসা না পেয়ে ওই রোগী মারা গেছেন।
কর্মবিরতির ডাক দেয়ার পর ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দুই দফায় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করলেও কর্মবিরতি থেকে সরেননি আন্দোলনকারীরা। সর্বশেষ মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের নেতাদের সঙ্গে হাসপাতাল সেমিনার কক্ষে বৈঠকে বসে কর্তৃপক্ষ। বিকেল চারটা পর্যন্ত চলে টানা বৈঠক। সেখানে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ব্যাপারে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা গ্রহণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেয়া হয়।
বৈঠকে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়াসহ জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বেরিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। সেখানে সবাই সিদ্ধান্ত নেন, বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের উদ্যোগ পর্যবেক্ষণ করবেন। যদি তাদের কাছে নিরাপত্তার বিষয়টি দৃশ্যমান হয়, তবে তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে নেবেন।
এদিকে, সোমবার রাত থেকে চলা ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এ ধর্মঘটের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।
তবে সেবা ব্যাহত হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘মিড লেভেলের চিকিৎসকরা ওয়ার্ডগুলোতে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে হাসপাতালের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে।’
ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও দ্রুত কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেবেন বলে এসময় আশা প্রকাশ করেন তিনি।