বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা আর দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন মাহবুবা

  •    
  • ২১ আগস্ট, ২০২৩ ২১:৩৫

ঢাকা জেলা (উত্তর) স্বেচ্ছাসেবক লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মাহবুবা পারভীন নিউজবাংলাকে বলেন, ’২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় মাটিতে শুয়ে পড়েছিলাম। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বিদ্ধ অবস্থায় অচেতন হয়ে পড়েছিলাম। তখন নাকি আমার হার্ট অ্যাটাক হয়। শরীরে থাকা ১ হাজার ৭৯৭টি স্প্লিন্টার সব সময় খোঁচায়, হুল ফোটায়। ১৯ বছর ধরে এই ভার বহন করে চলেছি। আর পারি না।’

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি ঘটে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। ওই রক্তাক্ত হামলায় আহত হন শতাধিক মানুষ। তাদের একজন সাভারের মাহবুবা পারভীন। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে তিনি শরীরে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন ১ হাজার ৭৯৭টি স্প্লিন্টার।

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে যেন আবার মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন মাহবুবা। গ্রেনেডের স্প্লিন্টারগুলো শরীরে রয়ে যাওয়ায় অসহ্য ব্যথা তার নিত্যসঙ্গী। এগুলোর জ্বালাপোড়ায় সারা রাত ঘুমাতে পারেন না। আর এই ব্যথা তাকে কখনোই ভুলতে দেয় না ওই দুঃসহ স্মৃতি। কবে শরীরে শান্তি পাবেন, সেই প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন আজও।

ওইদিন সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা শেখ হাসিনার বক্তব্যের পরপরই পূর্বনির্ধারিত সন্ত্রাসবিরোধী শোভাযাত্রার কর্মসূচি ছিল। তবে হামলায় পুরো এলাকা রূপ নেয় মৃত্যুপুরীতে।

ওই হামলার যেসব ছবি বহুল প্রচারিত তার মধ্যে একটিতে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানকে দেখা যায়। তার পাশেই নীল পাড় হালকা কমলা রঙের শাড়ি পরা মাহবুবা অচেতনভাবে পড়ে ছিলেন। সবাই ভেবেছিলো তিনি আর বেঁচে নেই।

মৃত ভেবেই ফেলে রাখা হয়েছিল মাহবুবা পারভীনকে। তার অচেতন দেহ উদ্ধার করে নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে। মরদেহ শনাক্ত করতে গিয়ে তাকে জীবিত দেখতে পান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আশিষ কুমার মজুমদার। এরপর তাকে চিকিৎসা দেয়া হয়। ৭২ ঘণ্টা পর জ্ঞান ফেরে তার।

সম্প্রতি সাভার বাজার রোডের বাসায় মাহবুবা পারভীনের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তিনি জানান, গ্রেনেড হামলার এক বছর আগে সাভার পৌর আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। পরের বছর ২০০৪ সালে নির্বাচিত হন বৃহত্তর ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক। সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বক্তব্য শুনতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ওই সমাবেশে যান তিনি।

ভয়াল ২১ আগস্টের বিবরণ দিয়ে মাহবুবা বলেন, “শেখ হাসিনা আপা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলতে পারেননি। তখনই একটা বিকট শব্দ হয়। পুরো এলাকা ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। আমরা কেউ কাউকে দেখতে পারছিলাম না। শুধু চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম- বাঁচাও, বাঁচাও।

“গ্রেনেড হামলার সময় মাটিতে শুয়ে পড়েছিলাম। অসংখ্য মানুষ আমার ওপর দিয়ে হুড়োহুড়ি করে দৌড়ে গেছে। গ্রেনেডের স্প্লিন্টার বিদ্ধ অবস্থায় প্রায় অচেতন হয়ে পড়েছিলাম। ডান হাত কনুই থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় পুরোপুরি জ্ঞান হারাই। তখন নাকি আমার হার্ট অ্যাটাক হয়।

‘উদ্ধারকারীরা জানতেন না আমি জীবিত না মৃত। ভ্যানে করে অন্যদের সঙ্গে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। ৭২ ঘণ্টা আইসিইউতে ছিলাম। দুদিন পর জ্ঞান ফেরে। তবে স্বামী-সন্তান কাউকেই চিনতে পারিনি। ২৫ দিন পর স্মৃতিশক্তি ফেরে। দেশে চিকিৎসার পর কলকাতার পিয়ারলেস হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছি। এরপর জানতে পারি শরীর জুড়ে ১ হাজার ৮০০ স্প্লিন্টার বিদ্ধ হওয়ার কথা। পরে তিনটি স্প্লিন্টার বের করা হয়েছে।”

মাহবুবা বলেন, ‘শরীরে থাকা গ্রেনেডের স্প্লিন্টারগুলো সব সময় খোঁচায়, সুঁইয়ের মতো হুল ফোটায়। বাতাস না পেলে আরও যন্ত্রণা হয়। ১৯ বছর ধরে এই ভার বহন করে চলছি। আর পারি না।

‘পাঁচ বছর হুইলচেয়ারে আর আট বছর ক্রাচে ভর করে হাঁটার পর এখন অন্যের সাহায্য নিয়ে হাঁটতে পারি। শরীরে একেক দিন একেক উপসর্গ। জ্বালা-যন্ত্রণা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে। তবে রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না। ঘুম থেকে উঠে শরীরের যেসব জায়গায় স্প্লিন্টার সেখানে চুলকায়, ব্যথা করে। সেসব স্থানে ম্যাসাজ করে দিতেন আমার স্বামী। এখন তিনি নেই। তাই যন্ত্রণা হলেও তা মুখ বুঁজে সয়ে নিতে হয়।’

মাহবুবা পারভীন ঢাকা জেলা (উত্তর) স্বেচ্ছাসেবক লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি পদে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছাকাছি যেতে চেয়েছিলেন, পেরেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে খুব আদর করেন। তাকে রাজধানীর মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছেন, চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে জনতা ব্যাংকে তার অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা দেয়া হয়। অনুদান হিসেবে ১০ লাখ করে দুবারে দেয়া হয়েছে ২০ লাখ টাকা। সেই টাকায় বাবার দেয়া জমিতে একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করে সেখানেই থাকেন।

শারীরিক অশান্তির মধ্যে নিজ সংগঠনে কিছুটা অনাদর নিয়ে মানসিক অশান্তি অনুভব করেন মাহবুবা। তিনি বলেন, ‘রাজনীতির জন্য আজ আমার এ অবস্থা। অথচ সাভার পৌর আওয়ামী লীগের কোনো অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হয় না। নিজে কোনো অনুষ্ঠানে গেলেও মঞ্চে ডাক পাই না।’

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যেতে একটি গাড়ি কিনতে চান তিনি। বলেন, ‘নিজের কিডনি বিক্রি করে হলেও রাজনীতির মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য গাড়ি কিনব। আমি রাজনীতি ছাড়া চলতে পারি না।

‘মিটিং-মিছিলে না গেলে ঘরের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে মারা যাওয়ার অবস্থা হয়। আমার এখন একটাই চাওয়া- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মী হয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কাজ করে যাওয়া।’

এ বিভাগের আরো খবর