পুলিশের দু-একজন সদস্যের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য পুরো বাহিনীকে দায়ী করা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করে হাইকোর্ট বলেছে, দু-একজন সদস্যের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে দুর্নামের ভাগিদার হতে হয় সরকারকে।
রোববার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করে।
উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়ার পরও আসামিদের গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোয় জড়িতদের বিষয়ে আগামী ১৫ অক্টোবর রায়ের জন্য রেখেছে হাইকোর্ট।
এ মামলায় তলব আদেশে হাইকোর্টে হাজির হন শরীয়তপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আল ইমরান। শুনানিতে আদালত তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করে। এক পর্যায়ে হাইকোর্ট বলে, পুলিশ শ্যোন অ্যারেস্টের আবেদন দিলেই আপনি সেটা মঞ্জুর করবেন, তাহলে বিচারক হয়েছেন কেন? আপনাকে জুডিসিয়াল মাইন্ড প্রয়োগ করতে হবে। মামলার নথিপত্র দেখে তবেই আদেশ দিতে হবে।
এ সময় শরীয়তপুর নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানও (সাময়িক বরখাস্ত) আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
তাদের উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভালো কাজ করছে। কিন্তু বাহিনীর দু-একজন সদস্যের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য পুরো বাহিনীকে দায়ী করা ঠিক নয়। কারন বাহিনীর দু-একজন সদস্যের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে দুর্নামের ভাগিদার হতে হয় সরকারকে।
আদালত আরও বলেছে, এই মামলায় আমরা আগাম জামিন দিয়েছি। সেই জামিনের ল’ইয়ার সার্টিফিকেটও ছিঁড়ে ফেলেছেন অভিযুক্তরা। শুধু ছিঁড়েই ফেলেননি, আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়েছেন। এমনকি রিমান্ডের আবেদন দিয়েছেন। পাশাপাশি আসামিদের গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করেছেন। এ ধরনের কর্মকাণ্ড ধৃষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড করার পর এখন তারা সবকিছু অস্বীকার করছে। যেন “ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই নাই।”
আদালতে দুই পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী। আর আবেদনের পক্ষে ছিলেন মজিবুর রহমান।
প্রসঙ্গত, ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় করা মামলায় গত ২৯ মে আসামিকে আগাম জামিন দেয় হাইকোর্ট। আগাম জামিন সংক্রান্ত ল’ ইয়ার্স সার্টিফিকেট দেখানোর পরও তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাদেরকে আদালতে হাজির করলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
এ নিয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে ৪ জুন তাদের জামিন মঞ্জুর করে আদালত। এই মামলায় আসামিদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা চাঁদা দাবিরও অভিযোগ রয়েছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর সংশ্লিষ্ট থানার ওসি ও এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পুলিশ প্রশাসন।