আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ছাড়া অন্য কেউ রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে জনগণের কথা ভাবেনি বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নবনির্মিত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবন, বাংলাদেশ তথ্য কমিশন ভবন উদ্বোধন এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী রোববার বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যা করে সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে সামরিক শাসন জারি করে যারা সরকারে এসেছিল, তারা কখনোই গণমানুষের কথা ভাবেনি। সেটা জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া যেই হোক। ক্ষমতাকে ভোগ করা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের অত্যাচার করা, এটাই তারা জানত। বর্তমানে দুর্যোগ ও অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘কোনো রাখঢাক নয়, জনগণের জন্য কাজ করে আওয়ামী লীগ। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছে সরকার।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বর্তমানে টেলিডেনসিটি ১০৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা অভাবনীয়। দেশকে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।’
বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কিছুই হয়নি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সবক্ষেত্রে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনগোষ্ঠী গড়ে তুলছি। তথ্য চাওয়া ও পাওয়া মানুষের অধিকার।’
সিনেমা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কলকাতা থেকে এই উপমহাদেশে সিনেমার যাত্রা শুরু। আমাদের সিনেমা শিল্পের যাত্রা জাতির পিতার হাত ধরে। তিনি শিল্পমন্ত্রী থাকা অবস্থায় এফডিসি নির্মাণ করেন। সিনেমায় জনসাধারণের জন্য বার্তা থাকতে হবে। মাঝে পরিবার নিয়ে সিনেমা দেখা যেত না। এখন তার পরিবর্তন হয়েছে।
‘এখন আধুনিক প্রযুক্তিতে সিনেমা দেখানো হয়। হল মালিকদের সিনেপ্লেক্স তৈরির সুযোগ করে দিয়েছি আমরা। এখন ভালো সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে। বিদেশে আমাদের সিনেমা প্রশংসা পাচ্ছে। চলচ্চিত্রকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সুবিধার ব্যবস্থা আমরাই করেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্ট আমরা গঠন করেছি। যন্ত্রশিল্পী থেকে শুরু করে সব শিল্পীদের সহায়তা করেছি। মানসম্মত সিনেমা নির্মাণের সব ব্যবস্থা করেছি। এফডিসি কমপ্লেক্স করছি।’
বিগত বছরগুলোতে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ ধারাবাহিকভাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সরকার চলছে। দেশে একটা স্থিতিশীলতা চলছে। যদিও এর মাঝে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, অগ্নিসন্ত্রাস অনেক কিছুই মোকাবিলা করতে হয়েছে। তারপরও কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, সেটাই আমরা চাই।’
জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই তারা আমাকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বারবার তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন বলেই এই কাজগুলো (দেশের উন্নয়নে) আমরা করতে পেরেছি।’
২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আজকে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
‘স্মার্ট বাংলাদেশে আমাদের স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট ইকনোমি হবে, স্মার্ট সোসাইটি হবে, স্মার্ট সরকার হবে। সেটা সামনে নিয়েই আমরা সব ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন জনগোষ্ঠী এবং সমাজ এবং সরকার এবং দেশকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না, ভূমিহীন মানুষ ঘর পাবে, প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। আমি এইটুকু চাই, আজকে আমাদের দেশটা সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে। সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
১৩ তলাবিশিষ্ট আধুনিক তথ্য কমিশন ভবনের উদ্বোধন প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘তথ্য চাওয়া এবং তথ্য পাওয়া, এটা জনগণের অধিকার। এটা আমরা নিশ্চিত করেছি। এখন মানুষ কোনো তথ্য চাইলে পেতে পারেন। কারণ আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে।
‘আমরা যা করব, সম্পূর্ণভাবে জনগণকে জানিয়ে, জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে, জনগণের কল্যাণ করাটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাই।’
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা যে সমস্ত কাজের ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিলেন, আজ সেই কাজগুলি সফলভাবে করতে পারছি। আমি বিশ্বাস করি তিনি বেহেশত থেকে নিশ্চয়ই দেখবেন, তার বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
‘দুঃখী মানুষ তাদের ঘর পাচ্ছে। দুই বেলা খাওয়া হচ্ছে। তাদের পরনে কাপড় আছে। তারা আরও উন্নত জীবন পাবে, সেই পদক্ষেপই আমরা নিয়েছি।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।