বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি এবং বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার ঘটনা ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও নাটোরে বিএনপির পদযাত্রায় পুলিশের বাধা, সন্ত্রাসী হামলা এবং বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।
নারায়ণগঞ্জে আহত ১০, পুলিশ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
নারায়ণগঞ্জে কাঁচপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি সারা দের্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়।
শনিবার বিকেলে মহাসড়কে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে আসা সারা দের্মীরা অবস্থান নিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সরকার পদত্যাগের ‘এক দফা’ দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে ঢাকা চট্টগ্রাম ও সিলেট লেনে পদযাত্রা কর্মসূচি করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিএনপি সারা দের্মীরা। পুলিশ ও বিএনপি সারা দের্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোড়ে।
এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাউলাউ মারমার ভাষ্য, ‘পদযাত্রার নামে বিনা অনুমতিতে মহাসড়কে শৃঙ্খলা করার চেষ্টা করা হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও সিলেট মহাসড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় তারা যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়লে পুলিশ জনগণের জানমালের হেফাজতে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।’
তবে জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচি করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদসহ স্থানীয় সারা দের্মীরা মিছিল নিয়ে কাঁচপুরের দিকে আসলে পুলিশ তাদের লাঠিপেটা শুরু করে। এরপর হামলাসহ গুলি ছোড়ে।’
পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষে রণক্ষেত্র হবিগঞ্জ শহর, আহত অর্ধশত
হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর পয়েন্টে জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির কর্মী-সমর্থকরা। এ ঘটনায় সদর থানার ওসিসহ অন্তত ৫০ জন আহত হন।
শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ জেলার বিএনপি সারা দের্মীদের অভিযোগ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করতে দলটির সেখানে কয়েক হাজার সারা দের্মী হবিগঞ্জ কেন্দ্রীয় ঈদগাঁ এলাকায় জড়ো হন। কিন্তু পদযাত্রা নিয়ে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পৌঁছানোর পর বিএনপি নেতা জিকে গউছের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তারা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে পড়ার এক পর্যায়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা। এসময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। নিমেষেই শহরের শায়েস্তানগর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এ সংঘর্ষ।
সংঘর্ষে হবিগঞ্জ সদর থানার ওসি ও ১০ পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৫০ জন বিএনপি সারা দের্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় দলটির বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
মানিকগঞ্জে পুলিশি বাধায় বিএনপির সমাবেশে ছাঁট
মানিকগঞ্জে বিএনপির শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশের বাঁধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন দলটির সারা দের্মীরা।
শনিবার দুপুরে জেলা বিএনপির আয়োজনে শহরের বেউথা আন্দারমানিক এলাকা থেকে পদযাত্রাটি বের হয়ে বেউথা এলজিইডির কার্যালয়ের সামনে পৌঁছালে পুলিশ তাদের বাধা ও ব্যারিকেড দেয়।
পরে সেখানেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতার অভিযোগ, তাদের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় পুলিশ অযথা বাধা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যখনই প্রোগাম করতে যাই, তখনই আওয়ামী লীগের নির্দেশে বাধা দেয় পুলিশ। বিএনপিকে ভয় পেয়ে এখন পুলিশ ব্যবহার করছে পুলিশ।’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসি আব্দুর রউফ সরকার বলেন, ‘বিএনপির পদযাত্রায় বাধা দেয়া হয়নি। শহরের যানজট ও মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে, শহরের প্রবেশ না করতে অনুরোধ করা হয়েছিল।’
নাটোরে বিএনপির পদযাত্রায় মুখোশধারীদের হামলা
নাটোরে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীদের ওপর মুখোশধারীদের হামলা ও মারপিটের ঘটনা ঘটে।
শনিবার সকালে শহরের বিভিন্ন স্থানে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে কাফুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবুল কালাম আজাদসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ২০ নেতা-কর্মী আহত হন। আহতদের মধ্যে চারজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরের আলাইপুরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের অনুসারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এতে নির্ধারিত সময় সকাল ৯টায় কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রা শুরু করতে পারেনি বিএনপি। পরে দুপুর একটার দিকে পদযাত্রা শুরু করে জেলা বিএনপি।
দলীয় সূত্র জানায়, সকাল আটটার দিকে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় ভিন্ন পথ দিয়ে পদযাত্রায় অংশ নিতে আসছিলেন সদরের কাফুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও তার অনুসারীরা। তারা নাটোর সুগার মিল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছালে দুটি কালো রঙের মাইক্রোবাস থেকে মুখোশধারী সন্ত্রাসীরা ধারালো হাসুয়া ও লাঠিসোটা নিয়ে তাদের ওপরে হামলা করে।
মুখোশধারীরা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন ও ইউনিয়ন ছাত্রদল সভাপতি তুহিনসহ অন্তত পাঁচজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে তাদের মধ্যে চারজনকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এছাড়া পদযাত্রায় আসার সময় শহরের বিভিন্ন স্থানে হামলার শিকার হয়ে জেলা যুবদলের নেতা সুজাউল ইসলাম সুজা, যুবদল নেতা শরিফুল ইসলাম, জাকির হোসেন, রেজাউল করিম, এনায়েত উল্লা মিল্টন, লিয়ন, ছাত্রদলের মোস্তফা আনাম, মোজাম্মেল হোসেন, ফিরোজ ও গোলাম মোস্তফাসহ অন্তত ১৫ নেতা-কর্মী আহত হন।
পরে দুপুর একটার দিকে জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে থেকে কেন্দ্র ঘোষিত পদযাত্রা শুরু করে বিএনপি।
পদযাত্রা শেষে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নেতা-কর্মীদের ওপরে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচি বানচাল করে দিতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা একদিকে অস্ত্র নিয়ে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে সামনে অবস্থান নিচ্ছে। সেইসঙ্গে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মসূচিতে আসা বিএনপি নেতা-কর্মীদের উপরে হামলা করে রক্তাক্ত করছে। এরপরও বিএনপি ধৈর্যের সাথে দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।’
তবে জেলা পুলিশের দাবি, ওই বিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে তারা কোনো হামলার ঘটনা দেখেনি। এমনকি কোথাও তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি।
নিউজবাংলার নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি বিল্লাল হোসাইন, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি আজিজুল হাকিম, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি কাজল সরকার এবং নাটোর প্রতিনিধি নাজমুল হাসানের পাঠানো তথ্য নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।